স্টাফ রিপোর্টার,বিজয় বার্তা ২৪
২৬ মার্চ, মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শাসন-শোষণ ও জুলুম-নির্যাতন থেকে বাঙালি জাতির শৃঙ্খলমুক্তির ঐতিহাসিক দিন।
একটি নতুন মানচিত্র ও পতাকা নিয়ে বিশ্ব মানচিত্রে এদিন স্বাধীন ‘বাংলাদেশ’ নামে নতুন একটি রাষ্ট্রের ঘোষণা দেওয়া হয়।
শনিবার ৪৬তম স্বাধীনতা দিবসে জাতীয় স্মৃতিসৌধে সূর্যসন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছে জাতি।
ভোর ৫টা ৫৭ মিনিটে জাতীয় স্মৃতিসৌধ বেদিতে যৌথভাবে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মধ্য দিয়ে বীর শহীদদের প্রতি প্রথম শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী।
রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মান জানানোর পর আওয়ামী লীগ সভানেত্রী হিসেবে দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেন শেখ হাসিনা।
এরপর একে একে জাতীয় সংসদের স্পিকার, ডেপুটি স্পিকারসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও সর্বস্তরের জনগণ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এদিকে স্মৃতিসৌধে আগত দর্শনার্থীদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে মহাসড়কসহ স্মৃতিসৌধ এবং আশপাশের এলাকায় সাদাপোশাকে গোয়েন্দা নজরদারিসহ মোতায়েন রয়েছে সহস্রাধিক পুলিশ সদস্য।
৪৫ বছর আগে ১৯৭১ সালের এই দিনে (২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে, রাত ১২টা ২০ মিনিট) তৎকালীন ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলসের (ইপিআর) ওয়্যারলেসের মাধ্যমে স্বাধীনতা ও সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দেন বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
ওয়্যারলেস মেসেজটি ছিল ইংরেজিতে। যার অর্থ- ‘এটাই হয়তো আমার শেষ বার্তা, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। বাংলাদেশের জনগণ, তোমরা যে যেখানেই আছ এবং যার যা কিছু আছে, তাই নিয়ে শেষ পর্যন্ত দখলদার সৈন্য বাহিনীকে প্রতিরোধ করার জন্য আমি তোমাদের আহ্বান জানাচ্ছি। পাকিস্তান দখলদার বাহিনীর শেষ সৈন্যটিকে বাংলাদেশের মাটি থেকে বিতাড়িত করে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত তোমাদের যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে।’
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনারা নারকীয় হত্যাকাণ্ড শুরু করার পর ওই রাতেই (রাত ১টার পর) বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়। পাকিস্তানি সেনাদের হাতে আটক হওয়ার আগেই ওয়্যারলেস মেসেজে ওই ঘোষণাটি দেন তিনি।
বঙ্গবন্ধুর এ মেসেজ ২৬ মার্চ সকাল থেকে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতা এবং সাধারণ জনগণ হাতে লিখে সাইক্লোস্টাইল কপি করে, ছাপানো হ্যান্ডবিল আকারে ও মাইকিং করে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার করতে থাকে। পরে দুপুর আড়াইটার দিকে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা প্রথম পাঠ করেন চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ হান্নান।
বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণাসহ এ ভাষণ মুসাবিদা করেছিলেন ডা. জাফর। পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে ফটিকছড়ি কলেজের উপাধ্যক্ষ আবুল কাসেম সন্দীপ, কবি আবদুস সালামসহ আরো অনেকেই স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন। ইংরেজিতে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেছিলেন ওয়াপদার ইঞ্জিনিয়ার আসিকুল ইসলাম ও স্বাধীন বাংলা বেতারের প্রযোজক আবদুল্লাহ্ আল ফারুক। ২৬ মার্চ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার পেয়েছিল।
পরে চট্টগ্রামের কালুরঘাটস্থ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে তদানীন্তন মেজর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার যে ঘোষণা পাঠ করেছিলেন, সেটি ছিল ২৭ মার্চ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায়। জিয়াউর রহমানের আগে একই বেতার কেন্দ্র থেকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাসহ অনেকেই বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। অপারেশন সার্চলাইট নামের এক বর্বর সামরিক অভিযানের মধ্য দিয়ে তারা শুরু করেছিল মানবতার ইতিহাসে জঘন্যতম এক গণহত্যা। সেই নৃশংস নির্বিচার গণহত্যার বিরুদ্ধে শুরু হয়েছিল এক সর্বাত্মক জনযুদ্ধ।
বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে পুলিশ, তৎকালীন ইপিআর, সেনাবাহিনী, আনসার, ছাত্র, শ্রমিক, কৃষক—সবাই মিলে এক হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল প্রাণপণ যুদ্ধে। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের মাধ্যমে পাকিস্তানিদের পরাজিত করে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে বাঙালি।
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সরকারি ছুটির এই দিনটিতে নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। সংবাদপত্রগুলোতে প্রকাশিত হয়েছে বিশেষ নিবন্ধ ও ক্রোড়পত্র। বিশেষ আয়োজন থাকছে টেলিভিশন চ্যানেল ও অনলাইন সংবাদমাধ্যমে।
এ ছাড়া ধর্মীয় উপাসনালয়গুলোতে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে।