স্টাফ রিপোর্টার, বিজয় বার্তা ২৪
আজ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। এদিন সুখী-সমৃদ্ধ ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার শপথ নেবেন এদেশের ১৬ কোটি জনতা। স্বাধীনতার ৪৬তম এ মহান দিবসে মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করবে গোটা জাতি।
১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ শুরু হয় এবং এরপর ৯ মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে বাংলাদেশ অর্জন করে স্বাধীনতার সোনালী সূর্য।
২৫ মার্চ মধ্যরাতে বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালি জাতির কণ্ঠ চিরতরে স্তব্দ করে দেয়ার লক্ষ্যে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে অপারেশন সার্চ লাইটের নামে নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হামলার মাধ্যমে বাঙালি জাতির জীবনে যে বিভীষিকাময় যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছিল।
১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে জয়লাভ করা সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর না করে নির্বিচারে বাংলার বেসামরিক লোকজনের ওপর গণহত্যা শুরু করে। এই দিনে চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার মহান ঘোষণা দিয়ে স্বশস্ত্র বিপ্লবের ডাক দেন শহীদ প্রেসিডেন্টে জিয়াউর রহমান।
আজ সরকারি ছুটির দিন। দিবসটি উপলক্ষে সরকারি ও বেসরকারিভাবে পালিত হবে নানা কর্মসূচি।
প্রত্যুষে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে জাতীয় দিবসের আনুষ্ঠানিক সূচনা হবে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর উপস্থিত বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশী কূটনীতিক, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে।
ইতোমধ্যে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনাসমূহ আলোক সজ্জিত করা হয়েছে। ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপসমূহ জাতীয় পতাকা ও রঙিন পতাকায় সজ্জিত করা হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বাণী দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া।
দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে সংবাদপত্রসমূহ প্রকাশ করেছে বিশেষ ক্রোড়পত্র। দিবসটি উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে সকালে অনুষ্ঠিত হবে শিশু সমাবেশ। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলাদেশ শিশু একাডেমিসহ বিভিন্ন সংগঠন আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। এ ছাড়া ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে।
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সারা দেশের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে দেশের শান্তি ও অগ্রগতি কামনা করে বিশেষ দোয়া ও উপাসনার আয়োজন করা হয়েছে। এ ছাড়া যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা কেন্দ্র, হাসপাতাল, কারাগার, এতিমখানা, সরকারি মাতৃ, শিশুসদনসহ অনুরূপ প্রতিষ্ঠানসমূহে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে। স্বাধীনতা দিবসে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি পালন করবে। কর্মসূচির মধ্যে আছে স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পুরস্কার বিতরণী।
রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি
মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ গৃহীত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সূর্যোদয় ক্ষণে বঙ্গবন্ধু ভবন, কেন্দ্রীয় ও দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ৬টায় জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ। এছাড়া সকাল ১১টায় টুঙ্গীপাড়ার কর্মসূচিতে কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
রবিবার বিকাল সাড়ে ৩টায় আলোচনাসভা। রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন এ আলোচনাসভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এক বিবৃতিতে আগামী ২৬শে মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ গৃহীত সকল কর্মসূচি দেশবাসীর সঙ্গে একাত্ম হয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করার জন্য সংগঠনের সকল শাখাসহ আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনসমূহের নেতাকর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ীসহ সর্বস্তরের জনগণ ও দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে দুদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। ২৬শে মার্চ ভোর ৬টায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ৭টায় জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুস্পস্তবক অর্পণ, সকাল সাড়ে ৮টায় স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে পুসপস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ এবং মাজার প্রাঙ্গণে ওলামা দলের উদ্যোগে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল, বিকাল ৩টায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে বর্ণাঢ্য স্বাধীনতা র্যালি অনুষ্ঠিত হবে।
একইসঙ্গে কেন্দ্র ও অঙ্গ সংগঠনসমূহ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে পোস্টার প্রকাশ করবে। এছাড়া বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে সারা দেশের জেলা, মহানগর ও উপজেলায় দলের স্থানীয় কার্যালয়ে সকাল ৬টায় জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন এবং স্থানীয় সুবিধানুযায়ী মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা ও র্যা লির আয়োজন করবে।