নারায়ণগঞ্জ,বিজয় বার্তা ২৪
নারায়ণগঞ্জ-৫(শহর-বন্দর) আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান বলেছেন, শামীম ওসমানকে আমি রাজনৈতিক নেতা বানাতে চেয়েছিলাম। জানিনা আমি কতটুকু সফল হয়েছি আজকে শামীম ওসমানই আমার নেতা। বয়সের ছোট হলেও রাজনৈতিকভাবে শামীম আমার অনেক সিনিয়র। আমি যখন সংসদে যাই তখন শামীম ওসমানের কাছ থেকে পরমার্শ নিয়ে যাই। জনগনের সেবার জন্য তার কাছ থেকে দিক নির্দেশনা নিয়ে কাজ করে থাকি। জানিনা আমি কি ভুল করে ছিলাম। শামীম ওসমান জীবনের ভয়ে নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে যায়নি। আমিই তাকে বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যেতে বলে ছিলাম। ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত শামীম ওসমানের ১৭ জন সহকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। ২০০১ সালের জুন মাসে বোমা মেরে তার আরও ২০জন সহকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। তাকেও হত্যা করার চেষ্টা করা হয়ে ছিল। তখন শামীম ওসমান বলে ছিলো আমাদের প্রধানমন্ত্রীর দিকে খেয়াল রাখেন। ২১ আগস্ট শেখ হাসিনার উপর গ্রেনেড হামলা হয়েছিল। এখনও হত্যার চেষ্টা চলছে। ১৯৮৮ সালে শামীম ওসমান ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকা অবস্থায় তার প্রথম সন্তানের জন্ম হয়ে ছিল। আমরা সারারাত অপেক্ষা করেও তাকে সন্তানের মুখ দেখাতে পারি নাই। কখন শামীম ওসমানের উপর পুলিশের নির্যাতন কখনও হলুদ সাংবাদিকদের নির্যাতন তারপরও জানিনা শামীম ওসমান কিভাবে মাথা ঠান্ডা রেখে মানুষের সেবা করে চলেছে। একইভাবে ৭৫ সালেও আমার বড় ভাই নাসিম ওসমান তার নববধূকে রেখে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিশোধ নিতে গিয়ে ছিল। সেও তার প্রথম সন্তান আজমেরী ওসমানের মুখ দেখতে পারেনি ৩ বছর পর্যন্ত। আমাদের পরিবারের বউ গুলোও অনেক নির্যাতন সহ্য করেছে আমি তার বাস্তব সাক্ষী। তারপর তারা আমাদেরকে সহযোগীতা করে যাচ্ছেন নারায়ণগঞ্জের মানুষের সেবা করার জন্য।
রোববার(১৩ মার্চ) বাদ আছর সিদ্ধিরগঞ্জের নাভানা সিটিতে ভাষা সৈনিক মরহুমা নাগিনা জোহার পরিবারের পক্ষ থেকে আয়োজিত দোয়ার পূর্বে সকলের উদ্দেশ্যে সেলিম ওসমান এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, আমাদের এই সব কিছুই আমাদের শিখিয়েছেন আমাদের মা। আমাদের লেখাপড়া হাতেখড়িও তিনি দিয়েছেন। ওসমান পরিবারের পূত্রবধূদেরও তিনি গড়ে তুলেছেন। নাসিম ওসমানকে সৃষ্টি করেছেন আমার মা। আমার বাবা শামসুজ্জোহা দাদা খান সাহেব ওসমান আলী যেমন মৃত্যুর পরও বেঁচে আছেন। তেমনি আমার বড় ভাই নাসিম ওসমানও মৃত্যুর পর বেঁচে আছেন আপনাদের ভালোবাসায়। যেখানেই যাই সেখানেই নাসিম ওসমানের জন্য আপনাদের ভালোবাসা দেখতে পাই। পুরো বাংলাদেশে এমন একটি পরিবার আছে বলে আমার মনে হয় না যে পরিবারকে ওই এলাকার মানুষ আপনাদের মত ভালোবাসে।
সেলিম ওসমান বলেন আমার মায়ের কোন রোগ ছিলনা। শুধু উনার বুকের মাঝে একটি পাথর ছিল। আমার বাবার মৃত্যুর পর তিনি অনেক কষ্ট করেছেন। কিন্তু উনার বড় ছেলে নাসিম ওসমানের মৃত্যুর পর উনার বুকে পাথরটি চাপা পড়ে ছিল। সেই পাথর বুকে চাপা রেখেও তিনি আমাকে রাজনীতিতে ঢুকিয়ে বলেছেন যতক্ষন জীবন চলবে ততক্ষন নারায়ণগঞ্জের মানুষের জন্য সেবা করতে হবে।
সেলিম ওসমান বলেন, আমরা দুই ভাই নারায়ণগঞ্জ, বন্দর, সিদ্ধিরগঞ্জ, ফতুল্লা থানা এলাকায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও শিল্পায়নের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জের উন্নয়ন করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমরা সবাই আমাদের সহযোগীতা করবেন। আমার শরীরের যে অবস্থা কখন কি হয়ে যায় বলতে পারবো না। আমার কিছু হয়ে গেলেও আপনারা শামীম ওসমানের পাশে থাকবেন। তাকে সহযোগীতা করবেন।
উল্লেখ্য, ভাষা সৈনিক ও রতœগর্ভা প্রয়াত নাগিনা জোহাকে স্মরণের মধ্য দিয়ে গত ৪দিন ধরে নারায়ণগঞ্জ, ফতুল্লা, বন্দর ও সিদ্ধিরগঞ্জের হাজার হাজার সাধারন মানুষ শোক পালন করেছেন। শুধু নারায়ণগঞ্জই নয় প্রয়াত এই ভাষা সৈনিক ও রতœগর্ভাকে স্মরণ করেছেন সোনারগাঁও, রুপগঞ্জ ও আড়াইহাজারের আপামোর জনসাধারণ।
শোক সভায় উপস্থিত ছিলেন উপস্থিত ছিলেন আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ আহামেদ, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ শামীম ওসমান, সংরক্ষিত নারী সাংসদ হোসনেআরা বাবলী, জেলা পরিষদের প্রশাসক আব্দুল হাই, শ্রমিকলীগের সাবেক সভাপতি আব্দুল মতিন মাষ্টার, নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি মোঃ আনোয়ার হোসেন, জেলা ঘাতক দালার নিমূল কমিটির সভাপতি বাবু চন্দন শীল, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি মজিবুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক হাজী ইয়াছিন, সোনারগাঁও থানা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সামসুল ইসলাম ভূইয়া, সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম, নারায়ণগঞ্জ বারের সভাপতি আনিছুর রহমান দিপু, সিদ্ধিরগঞ্জ পৌরসভার সাবেক প্রশাসক আব্দুল মতিন প্রধান, আওয়ামীলীগ নেতা নাজমুল হক খোকা, যুবলীগ নেতা ওমর ফারুক, তোফায়েল হোসেন।
এছাড়াও ওসমান পরিবারের ৩ ছেলে এবং দুই ২ মেয়ের পরিবারের সকল সদস্য উপস্থিত ছিলেন।