স্টাফ রিপোর্টার,বিজয় বার্তা ২৪
দেশের অর্থনীতিকে রাবিশে পরিণত করার জন্য অর্থমন্ত্রী ও বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর দায়ী। অবিলম্বে অর্থমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের পদত্যাগ দাবি করেছে বিএনপি।
শুক্রবার বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান। অবিলম্বে বাংলাদেশ ব্যাংক সহ সকল ব্যাংক লুটপাটকারীদের চিহ্নিত করে বিচারেরও দাবি জানিয়েছেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ফান্ড থেকে রিজার্ভের এ পর্যন্ত সরকার কর্তৃক স্বীকারকৃত দশ কোটি দশ লাখ মার্কিন ডলার লোপাট বা চুরি হয়ে গেছে। ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ন্যাক্কারজনক জালিয়াতির ঘটনা এটি। এই টাকা চুরিতে বর্তমান বাংলাদেশ সরকারের প্রভাবশালী মহল ও সংঘবদ্ধ চক্র জড়িত বলে বাংলাদেশ ব্যাংক স্বীকার করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা এখন উড়ছে ফিলিপাইনের জুয়ার আসরে। এ সংক্রান্ত বিস্তারিত খবর আজকের সকল জাতীয় দৈনিকে ফলাও করে প্রচার হয়েছে।
তিনি বলেন, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের দশ কোটি দশ লাখ মার্কিন ডলার চুরি করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের দাবি-হ্যাক করে এই অর্থ সরিয়ে নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন-যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের বিশাল অংকের অর্থ দেশের বাইরে থেকে অজ্ঞাতনামা হ্যাকার’রা চলতি বছরের ফেব্রুয়ারী মাসে হ্যাক করে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক বলছে-তাদের এখান থেকে হ্যাকিং হয়েছে এর কোন প্রমাণ নেই। তারা এর দায় পুরোপুরিভাবে বাংলাদেশের ওপরই চাপিয়েছে। কয়েক মাস পূর্বে দেশের আর্থিক খাতে এতবড় জালিয়াতির ঘটনা ঘটলেও সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ৮০০ কোটি টাকা উধাও হয়ে যাওয়ার খবর পত্র পত্রিকায় প্রকাশ হলে দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে এ বিষয়টি প্রথমে অস্বীকার করে লুকোচুরি শুরু করে। পরে ঘটনার সত্যতা এবং পত্র পত্রিকার আলোচনা-সমালোচনায় তারা বিষয়টি স্বীকার করত: নড়েচড়ে বসেন। জালিয়াতির এতবড় ঘটনায় বাংলাদেশ সরকারের প্রভাবশালী মহল ও ব্যাংক কর্মকর্তারা জড়িত বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ পর্যায় থেকে স্বীকার করাও হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা সহ নেতৃবৃন্দ যারা গত তিন বছরে সরকারী কাজের বাইরে ঠুনকো অজুহাতে সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক, হংকং, মালেশিয়া, ফিলিপাইন, শ্রীলংকা, দুবাই ভ্রমন করেছেন তাদের পাসপোর্ট যাচাই করে অনুসন্ধান করলেই এই আন্তর্জাতিক জালিয়াত চক্রের রাঘব বোয়ালদের সংশ্রব বেরিয়ে আসবে। ইতোমধ্যে কয়েকজন রাঘব বোয়াল পর্যায়ের কর্মকর্তার পাসপোর্টও জব্দ করা হয়েছে। এতো বিশাল পরিমান অর্থ ফেরত পাওয়া যাবে কী না তা নিয়ে গভীর সংশয় প্রকাশ করেছেন আমাদের দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদগণ। এর আগে ইবিএল ও ডাচ বাংলা ব্যাংক থেকে শত শত কোটি টাকা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে লোপাট হয়েছে। সরকার লোক দেখানো তদন্ত ও কয়েকজনকে গ্রেফতার করলেও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থতার কারনেই ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে অর্থ লুটপাটের ভয়াবহ চিত্র প্রকাশ পাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সর্বশেষ বিশাল অংকের অর্থ লোপাটের ঘটনায় দেশের আর্থিক খাতে ব্যাপক ধ্বস নামবে বলে আশংকা প্রকাশ করেছেন দেশের শীর্ষ পর্যায়ের অর্থনীতিবিদরা। দেশের অর্থনীতিকে রাবিশে পরিণত করার জন্য অর্থমন্ত্রী ও বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর দায়ী। ৮০০ কোটি টাকা হ্যাক হয়ে যাওয়ার পরও তারা এখনও দায়িত্ব পালন করছেন কোন নৈতিক অধিকারে। আমরা অবিলম্বে অর্থমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের পদত্যাগ দাবি করছি।
তিনি আরও বলেন, নিরাপত্তার অজুহাতে বাংলাদেশ থেকে কার্গো বিমানে মালামাল পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাজ্য। এর ফলে দেশের গার্মেন্টস শিল্প বিপর্যয়ের মুখে পড়বে বলে আশংকা প্রকাশ করেছে গার্মেন্টস মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সহ বিশেষজ্ঞরা। ৬০শতাংশের বেশী পণ্য রপ্তানী হয় ইউরোপীয় ইউনিয়নে। এর মধ্যে সবচেয়ে প্রভাব বিস্তারকারী দেশ যুক্তরাজ্য। স্বাভাবিক কারনেই যুক্তরাজ্যে পণ্য পরিবহনের নিষেধাজ্ঞায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন রপ্তানীকারক তথা ব্যবসায়ীরা।
এ অবস্থা চলতে থাকলে রপ্তানীতে অশনি সংকেত দেখা দিবে এবং অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে দেশের গার্মেন্টস সহ বিভিন্ন রপ্তানী খাত। দেশ বঞ্চিত হয়ে পড়বে গার্মেন্টস খাত থেকে প্রাপ্ত বিপুল অংকের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন থেকে। এদিকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরুন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি দিয়েছেন-বিমান বন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার না করলে যুক্তরাজ্যে নিষেধাজ্ঞায় পড়তে পারে বাংলাদেশী যাত্রীবাহি ফ্লাইটগুলোও। বিষয়টি আজকের বিভিন্ন পত্রিকায় উঠে এসেছে। এর আগে বাংলাদেশ থেকে কার্গো বিমানে মালামাল পরিবহনে অস্ট্রেলিয়া নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা বাতিল করেছে।
গতকালও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ স্বীকার করেছেন-কিয়ামত পর্যন্ত চেষ্টা করলেও জিএসপি’র সব শর্ত পূরণ সম্ভব হবে না। এটি মন্ত্রীর দায়িত্ব এড়ানো বক্তব্য, কারন তারা কোন সীমা মেনে চলতে চান না। মূলত: ভয়াবহ এক অবরোধের মধ্যে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এর মূল কারন দেশে গণতন্ত্রহীনতা, জবাবদিহীতার অভাব। যার কারনে দেশের অর্থনৈতিক সেক্টরে চলছে ‘জোর যার মুল্লুক তার’ মতো অরাজক পরিস্থিতি। সকল দলের অংশগ্রহনে একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করে ঐক্যবদ্ধভাবে লুটপাটের অর্থনীতি মোকাবেলা করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব বলে বাংলাদেশ বিএনপি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে।