স্টাফ রিপোর্টার,বিজয় বার্তা ২৪
এবার জাতীয় সংসদে প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান ও ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামের কঠোর সমালোচনা করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, তারা এখনো বসে আছেন গণতন্ত্রকে ধরাশায়ী করতে।
সোমবার জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, কোনোরকমে গণতন্ত্রকে ধরাশায়ী করে অসাংবিধানিক সরকার আসলে তাদের কপাল খুলবে, সেই ষড়যন্ত্রেই তারা লিপ্ত। এদের ষড়যন্ত্র এখনো শেষ হয়নি। গণতন্ত্রকে এতটুকু ধরাশায়ী করা যায়, অগণতান্ত্রিক কিছু আসে তাদের কপাল খুলবে- সেই অবস্থা বাংলাদেশে কখনো হবে না। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। যে যতই ষড়যন্ত্র করুক বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা কেউ রোধ করতে পারবে না। এ আত্মবিশ্বাস আমাদের আছে। এ দেশের জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করবে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। কোনো ষড়যন্ত্রই দেশের এই অগ্রগতি রুখতে পারবে না।
মাহফুজ আনামকে ডিজিএফআইয়ের সাবেক কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমিন ও ব্রিগেডিয়ার বারির ‘স্টাফ’ আখ্যায়তি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাকে দুর্নীতিবাজ বানাতে তার পত্রিকা যতকিছু লিখেছে সেগুলো নাকি ডিজিএফআই সাপ্লাই দিয়েছে। প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারে লেখা থাকে নির্ভিক সাংবাদিকতা। আলোর কথা বলে অন্ধকারের কাজ করে। এই দুটো পত্রিকা হয় ডিজিএফআইয়ের এজেন্ট হয়ে কাজ করেছে নতুবা মাইনাস টু ফর্মুলার সঙ্গে জড়িত ছিল। ষড়যন্ত্রে লিপ্ত না থাকলে অসত্য সংবাদ ছাপাবে কেন? ব্রিগেডিয়ার আমিন ও বারীর চোখের আলো হয়েছিলেন ওই দুটি পত্রিকার সম্পাদক। এরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাজনীতি করতে চাইলে, ক্ষমতায় যেতে চাইলে তারা রাস্তায় নামুক, জনগণের কাছে যাক। রাজনীতি করার এত শখ, ক্ষমতায় যাওয়ার এত শখ থাকলে মানুষের ভোট নিয়ে আসুক।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুটো পত্রিকায় ২০টি বছর ধরেই আমার বিরুদ্ধে লেখা হচ্ছে। কারাগার থেকে মুক্ত হওয়ার পর থেকে এ দুটি পত্রিকা আমি পড়ি না। ভালো কিছু লিখলেও শেষ দিকে আমাকে খোঁচা দেবে। এ খোঁচা খেয়ে আমি আত্মবিশ্বাস হারাব। তবে পড়ব কেন?
১/১১-এর ঘটনা বর্ণনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ওয়ান-ইলেভেনে স্থায়ীভাবে ক্ষমতায় থাকতে প্রথমেই আমার ওপর আঘাত আসে। আমি তো সরকারে ছিলাম না, বিরোধী দলে ছিলাম। তবে কেন প্রথমে আমাকে গ্রেপ্তার করা হলো। আমাকে দুর্নীতিবাজ বানাতে ওই দুটি পত্রিকা একের পর এক মিথ্যা সংবাদ ছাপিয়ে গেছে। ডিজিএফআইয়ের ব্রিগেডিয়ার বারী ও আমিনের হাত থেকে ওই সময় কেউই রেহাই পায়নি। ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, শিক্ষক, ছাত্রদের ওপর যারা নির্যাতন করেছে তাদের সঙ্গে কী সখ্যতা ছিল তার ব্যাখ্যা কী প্রথম আলোর মতিউর রহমান ও ডেইলি স্টারের মাহফুজ আনামরা দিতে পারবে?
নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নাম উল্লেখ না করে শেখ হাসিনা বলেন, এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে আরেকজন জড়িত। নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের জন্য মাঠে নেমেছিলেন তিনি। উনার দেওয়া তালিকা নিয়ে একজন সম্পাদক লোক যোগাতে নেমেছিল। কিন্তু কেউ আসেনি। ওই ভদ্রলোককে আমিই মোবাইল ফোনের ব্যবসা করতে দিয়েছিলাম। ব্যাংকের এমডি পদে আইন লঙ্ঘন করে ১০ বছর পর্যন্ত ছিলেন। আইন লঙ্ঘন করলেন, মামলায় হারলেন- আর সব দোষ শেখ হাসিনার। এমডি পদ হারানোর ক্ষোভ পড়ল গিয়ে পদ্মা সেতুর ওপর। আমেরিকার বন্ধুকে দিয়ে অর্থ বন্ধ করালেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতুতে আমাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হলো। আমি চ্যালেঞ্জ করলাম। এখনো সেই প্রমাণ তারা দেখাতে পারেনি। একটি এমডি পদ হারানোর ক্ষোভের আগুনে জ্বলল আমাদের বাংলাদেশ। নোবেল পুরস্কার পেয়েও একটি এমডির পদ ছাড়তে পারেন না। ওখানে কী মধু আছে? এত বড় আন্তর্জাতিক পুরস্কারের তবে মর্যাদাটা কোথায় থাকল? অনেকে ভেবেছিল বিশ্বব্যাংক থেকে টাকা না নিয়ে বাংলাদেশ চলতে পারবে না।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, বিএনপি নির্বাচনে না এসে ভুল করেছে। সেই ভুলের খেসারত দেশের জনগণ দেবে না। রাজনৈতিক ভুলের খেসারত তাদেরই দিতে হবে। বিএনপি-জামায়াতের জ্বালাও-পোড়াওয়ের কারণে জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও তারা দাঁড়াতে পারছে না। কারণ দেশের মানুষ জ্বালাও-পোড়াও পছন্দ করে না।
সংসদ নেতা বলেন, বিএনপি একটি জঙ্গি দল। বিএনপি-জামায়াত জোট একটি জঙ্গি সংগঠন। জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে এরা এখনো সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। যেই হত্যা, খুন, অস্ত্র, বোমাসহ ধরা পড়ছে তাদের সবার গোঁড়া খুঁজলে দেখা যাচ্ছে আগে হয় ছাত্রশিবির কিংবা ছাত্রদল করেছে। পুলিশ বাহিনীকে ধন্যবাদ জানাই, কারণ তারা দিনরাত পরিশ্রম করে দেশকে রক্ষা করছে।
সমপ্রতি গ্যাসের বিস্ফোরণে পুরো একটি পরিবার শেষ হয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেকে রয়েছেন একটি মাত্র দিয়াশলাইয়ের কাঠি খরচ হওয়ার ভয়ে গ্যাস জ্বালিয়ে রাখেন। একটি কাঠির চেয়ে জীবনের মূল্য বেশি না। আর যেখানে গ্যাসের চুলা জ্বলবে সেখানের জানালার দরজা খুলে রাখার জন্যও প্রধানমন্ত্রী সবার প্রতি অনুরোধ জানান।
যানজট প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, দেশের মানুষের আর্থিক স্বচ্ছলতা বেড়েছে। তাই যাদের একটি গাড়ি দরকার, তারা ২-৩টা গাড়ি কিনছে। এসব কারণেই যানজট বাড়ছে। তিনি বলেন, আমাদের দেশ আমরা গড়ব, উন্নত করব, আমরাই পারব- এটা মনে রেখেই সবাইকে চলতে হবে। আমরা যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করেছি। আমরা পারব না কেন? আমরা কেন পরমুখাপেক্ষী হব? আমরা সবাই মিলে কাজ করলে দেশ দরিদ্র থাকার কথা না। কতটুকু দেশকে দিতে পারলাম, দেশের জনগণকে কতটুকু দিতে পারলাম- এটাই আমার রাজনীতি।
সংসদ নেতা বলেন, আমাদের দেশের মানুষ কথা বলতে পছন্দ করে। এখন ৩২টি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের লাইসেন্স দিয়েছি। আর এসব টিভিতে সমানভাবে কথা বলে যাচ্ছেন, আবার বলছেন কথা বলার স্বাধীনতা নেই! সত্য-মিথ্যা দিয়ে মনের মাধুরী মিশিয়ে সবাই কথা বলেই যাচ্ছেন। কাউকে তো বাধা দেওয়া হচ্ছে না।
তিনি বলেন, গণমাধ্যমকে কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করি না। সাংবাদিকদের জন্য কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করেছি। মিডিয়ার জন্য আমি যত সুযোগ দিয়েছি, অতীতে কেউ দেয়নি। কিন্তু আমিই সবচেয়ে বেশি ভিকটিম।