স্টাফ রিপোর্টার,বিজয় বার্তা ২৪
আজ ২৫ ফেব্রুয়ারি। কলংকিত পিলখানা ট্রাজেডির ৭ম বার্ষিকী। ২০০৯ সালের এই দিনে পিলখানায় বিডিআর সদর দফতরে বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ মেধাবী সেনা কর্মকর্তা প্রাণ হারান।
সেনা কর্মকর্তার পরিবারের সদস্যরা প্রতি বছর এই দিনে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন নিহতদের কবরে। এবারও এর বত্যয় ঘটেনি। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় বনানী কবরস্থানে শহীদ সেনা পরিবারের যে সদস্যদের দেখা যায়, তার অধিকাংশ ছিল অশ্রুভেজা। মুখে শোকের ছায়া। কেউ হারিয়েছেন স্বামী, কেউ পিতা, কেউ বা ভাইকে।
প্রিয় মানুষটির কবরের উপর গোলাপ বিছিয়ে দিয়ে একে একে দাঁড়িয়ে থেকেছেন কবরের পাশে। অনেকেই ছিলেন একেবারেই নির্বাক। ‘যার চলে যায় সেই বুঝে হায়, বিচ্ছেদের কি যন্ত্রণা-’ গানের লাইনটির মতো কঠিন এক বাস্তবতা তৈরি হয় সেখানে।
সকালে কর্মকর্তাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন ও মোনাজাতের আয়োজন করা হয়। শুরুতে রাষ্ট্রপতির পক্ষে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল আবুল হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পক্ষে সিনিয়র সচিব ড. মো মোজাম্মেল হক খান পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর সেনাপ্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক, বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল আবু এসরার, নৌ বাহিনী প্রধান ভাইস এডমিরাল নিজাম উদ্দিন আহমেদ, বর্ডার গাডের্র মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ যৌথভাবে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পরে শহীদ পরিবারের সদস্যরা নিহত স্বজনদের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে দোয়া পাঠ করেন।
সাত বছর আগের এই দিন সকাল ৯টা ২৭ মিনিটে রাইফেলস-বিডিআর-এর বিপথগামী কতিপয় সদস্য দাবি-দাওয়ার নামে পরিকল্পিতভাবে পিলখানায় নারকীয় হত্যাকাণ্ড চালায়। ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি এই দু’দিনে তারা ৫৭ জন চৌকস সেনা কর্মকর্তাসহ আরো একজন সৈনিক, দুইজন সেনা কর্মকর্তার স্ত্রী, ৯ জন বিডিআর সদস্য ও ৫ জন বেসামরিক ব্যক্তিকে নৃশংসভাবে হত্যা করে এবং তাদের পরিবারকে জিম্মি করে ফেলে।
চারটি প্রবেশ গেটেই নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আশেপাশের এলাকায় গুলি ছুঁড়তে থাকে। জন্ম নেয় এক বীভৎস ঘটনার। শুরু হয় লুটপাট, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের।
নির্মম, নৃশংস এ হত্যাযজ্ঞ ও ববর্রতার পর প্রথমে লালবাগ থানায় ও পরে নিউমার্কেট থানায় সদর ব্যাটালিয়নের ডিএডি তৌহিদুল আলমসহ ছয়জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে মামলা করে পুলিশ। এ মামলায় কয়েক হাজার বিডিআর সদস্যকে অজ্ঞাতনামা হিসেবে আসামি করা হয়।
বিদ্রোহের ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলায় বিশেষ আদালত ১৫২ জনকে ফাঁসি, ১৬১ জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও ২৬৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করে। ২৭১ জনকে খালাস দেয়া হয়েছে।