স্টাফ রিপোর্টার.বিজয় বার্তা ২৪
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবেস ভাষার বিকৃতি রোধে সবাইকে সচেতন হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাছাড়া তিনি বলেছেন, আমাদের দেশের একটি শ্রেণির মানুষের মধ্যে এমন প্রবণতা তৈরি হয়েছে যে তাদের শিশু-সন্তানদের ইংরেজি মাধ্যমে না পড়ালে যেন ইজ্জতই থাকে না!
রবিবার বিকালে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, কষ্ট হয় তখনই যখন দেখি মানুষের মধ্যে বাংলা ভাষাকে ভুলে যাওয়ার প্রবণতা। যেন বাংলা ভুলে গিলেই গুণের কাজ! মানুষ আঞ্চলিক শব্দ ব্যবহার করবে, এটি তার নিজস্ব এলাকার ভাষা- কিন্তু বাংলাকে ভুলে যাবে না। এছাড়া জীবন জীবিকার জন্য নতুন নতুন ভাষা শিখতে হবে। ভাষা শেখায় অপরাধ নেই। যে যত ভাষা শিখতে পারবে ততই উন্নতি। কিন্তু এখনকার মানুষজনের মধ্যে একটি জিনিস লক্ষ্য করি তা হলো- ইংরেজি মাধ্যমে সন্তানদের না পড়ালে যেন ইজ্জতই থাকে না।
ইংরেজি মাধ্যমে পড়ে তাদের ফলাফল কত ভালো, এই প্রশ্নও রাখেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বাংলাকে বিকৃত করে ইংরেজি ধাঁচে বলার প্রবণতাও এখন তৈরি হয়েছে। এসব থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।
তিনি বলেন, এখানে একটা কালচার দেখা যাচ্ছে বাংলাকে বিকৃত করে ইংরেজি একসেন্টে বলতে পারাটাকে মনে করে যেন গৌরবের বিষয়। এ বিষয়ে মানুষকে আরো বেশি সচেতন করা উচিৎ মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভাষার বিকৃতিটা যেন না হয়। বিশ্বায়নের যুগে মানুষকে বিদেশি ভাষা শিখতেই হয়। কিন্তু তা যেন মাতৃভাষাকে অবহেলা করে না হয়। ছোট ছোট বাচ্চাদের ইংরেজি মিডিয়ামে না পড়ালে যেন ইজ্জতই থাকে না। কয়টা ছেলেমেয়ে ইংরেজি মিডিয়ামে পড়ে এসএসসিতে ভালো রেজাল্ট করেছে? তেমন কিন্তু খুব বেশি দেখা যায় না।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে ভাষা রক্ষার কাজ এবং গবেষণা বাড়াতে হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের সব ভাষা রক্ষার দায়িত্ব এখন আমাদের ওপর। আমি ধন্যবাদ জানাই এই প্রতিষ্ঠানটি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উঠে এসেছে। আশাকরি এই প্রতিষ্ঠান হবে বিশ্বের মাতৃভাষার গবেষণার স্থান। আমাদের লক্ষ্য আছে গবেষণার জন্য আলাদা বরাদ্দের। ইতোমধ্যে আইন করে দেওয়া হয়েছে, যেন ইনস্টিটিউটের কার্যক্রম বন্ধ না হয়। আগামীতে যা যা লাগবে তাই করবো। আমাদের সরকায় চায় গবেষণা হোক। পাশাপাশি আদিবাসীদের নিজস্ব ভাষার গবেষণাও এখানে করতে হবে।
শেখ হাসিনা আরো বলেন, এই দেশ আমাদের দেশ, বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। ভাষা ব্যবহার ও চর্চায়, সংবাদমাধ্যম যেন সচেতনতা তৈরি করে আমি সে আহ্বান জানাবো। এছাড়া ধন্যবাদ জানাই যারা মোবাইল ফোনে বাংলায় এসএমএস পদ্ধতি তৈরি করেছেন তাদের।
ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ আন্দোলনে প্রাণ বিসর্জনকারী রফিক, সালাম, বরকত, জব্বারসহ নাম না জানা ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। কোনো অর্জনই সহজে আসে না। তাদের রক্তেই আমরা পেয়েছি বাংলা।
‘ভাষাকে ভালোবাসি আমরা, মায়ের ভাষায় কথা বলবো। এটি তো আমাদের অধিকার। ইউনেস্কোকে ধন্যবাদ দিবসকে ‘আন্তর্জাতিক’ স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য,’ যোগ করেন তিনি।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। স্বাগত বক্তৃতা করেন শিক্ষা সচিব সোহরাব হোসেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. আতিউর রহমান অনুষ্ঠানে ‘২১ শে ফেব্রুয়ারি বাঙালি মননের বাতিঘর’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
ইউনেস্কোর ঢাকা অফিসের প্রধান বিয়াট্রিস কালডুন শুভেচ্ছা বক্তৃতায় ইউনেস্কোর মহাপরিচালক মিজ ইরিনা বুকোভার শুভেচ্ছা বাণী অনুষ্ঠানে পড়ে শোনান। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক জিনাত ইমতিয়াজ আলী ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
অনুষ্ঠানে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, মন্ত্রী পরিষদ সদস্য, সংসদ সদস্যবৃন্দ, মন্ত্রী পরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, দপ্তর-অধিদপ্তর এবং স্বায়ত্ত শাসিত প্রতিষ্ঠানের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যবৃন্দ, কূটনৈতিক মিশনের সদস্যবৃন্দ এবং উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানের কমৃকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে ভাষা শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।