বিজয় বার্তা ২৪ডেস্ক (হাবিবুর রহমান বাদল)
উদ্বিগ্ন আর উৎকন্ঠার মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছে নারায়ণগঞ্জবাসী। গত কয়েকদিনের ছিনতাই, হত্যা, ছিনতাইকারীদের গুলিতে সহোদর দুইভাই আশংকাজনক অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর প্রহর গুনছে। বাড়ী থেকে বের হয়ে নিরাপদ ভাবে বাড়ীতে ফিরে যেতে পারবে কিনা তা নিয়েও সর্বদাই চিন্তিত হয়ে থাকে স্ব স্ব পরিবারের সদস্যরা। নারায়ণগঞ্জের কয়েকটি ঘটনায় আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতিতে যে আতংক এ বিষয়ে বলার অপেক্ষা থাকে না। নারায়ণগঞ্জে সেভেন মার্ডারের পর বর্তমান জেলা পুশিশ সুপার ডা.খন্দকার মহিদউদ্দিন যোগদান করার পর জেলার আইনশৃংখলা পরিস্থিতি কয়েক মাস স্বাভাবিক খাকলেও গত কয়েকমাসে জেলার বিভিন্ন এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে অনেকটাই তিক্ত বিরক্ত জেলাবাসী। অপরদিকে অপরাধীরা তাদের অপরাধ কর্মকান্ড করে সহজে পালিয়ে গেলেও জড়িতদের আইনের আওতায় আনাতো দূরের কথা মূল রহস্যই উদঘাটন করতে সম্পূনটাই ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে আসছে জেলা পুলিশ প্রশাসন। অথচ জেলাবাসী বর্তমান পুলিশ সুপার ডা.খন্দকার মহিদউদ্দিন যেভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল তা প্রশংসার যোগ্য হলেও গত কয়েকদিনের আইনশৃংখলা চরম অবনতির কারনে নারায়ণগঞ্জবাসীর কাছে সে ব্যর্থ এসপি হিসেবেই বিবেচিত বলে আমি মনে করি। নারায়ণগঞ্জের প্রশাসন সম্পর্কে সাধারণ মানুষের আস্থা থাকলেও বিগত দুইটি ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে যেভাবে নারায়ণগঞ্জকে উপস্থাপন করা হয়েছে এতে নারায়ণগঞ্জ সর্ম্পকে নেতিবাচক অবস্থান তৈরি করেছে। সেভেন মার্ডার ও সর্বশেষ ফাইভ মার্ডারের ঘটনা আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় এমনভাবে প্রচারিত হয়েছে দেশের বাইরের মানুষ মনে করে নারায়ণগঞ্জ মানেই একটি অস্থিতিশীল এলাকা। প্রকাশ্যে গুলি করে একটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের প্রায় ২৯ লাখ টাকা ছিনতাই, ছিনতাইকারীদের গুলিতে সহোদর দুইভাই আশংকাজনক অবস্থায় হাসপাতালে মৃত্যুর প্রহর গুনছে, শহরের বাবুরাইল এলাকায় একই পরিবারের ৫ জনকে জবাই করে হত্যা, মোট কথা নারায়ণগঞ্জে বর্তমানে অস্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করছে। আর আমার মতে এর মূল কারন হচ্ছে জেলা পুলিশ প্রশাসনের গাফলতি। জেলা প্রশাসনের গাফলতির কারনেই অপাধীরা অপরাধ সংগঠিত করে অতি সহজে পালিত যেতে সক্ষম হচ্ছে। অথচ ঘটনার সাথে জড়িত প্রকৃত অপরাধীদের আটক করতে পারছে না পুলিশ। আর যাদেরকেই আটক করছে অনেকটা চাপে পড়ে এলাকার তালিকাভ’ক্ত সন্ত্রাসীদের আটক করে জেলা প্রশাসন আইওয়া করে তাদের দায় দায়িত্ব শেষ করছে। ফলে অধরাই রয়ে যাচ্ছে অপরাধীরা অন্ধকারেই থেকে যাচ্ছে ঘটনার মূল রহস্য। আমি যে কয়েকবার দেশের বাইরে গিয়েছি, পরিচিত হয়েছে দেশের বিভিন্ন জেলার অনেক লোকজনদের সাথেই। আমার পরিচয় জানতে চাইলে, যখন বলেছি আমি নারায়ণগঞ্জের সন্তান। এটা জানার পর পরই অনেকে আগ্রহভরে প্রশ্ন করেছে আমরা কিভাবে থাকি? কোন অবস্থয় বসবাস করি? এদের অবস্থা শুনে আমার কাছে মনে হয়েছে আমরা যেন কোন ভিন্নগ্রহে বাস করি। সূর্য ডোবার সাথে সাথেই নারায়ণগঞ্জের মানুষ যেন ঘরের থেকে বের হয় না। এই অবস্থা আমাদের জন্য কোন অবস্থাতেই সুখকর নয়। নারায়ণগঞ্জের আ্ইনশৃঙ্খলা বাহিনী সেভেন মার্ডারের তথ্য ইতিমধ্যেই উদঘাটন করেছে। মাত্র দুই দিন আগে ঘটা পাচঁ খুনের ঘটনাও পুলিশের কাছে পরিস্কার। এর পরও কেন আমাদের এই অবস্থা? বহিবিশ্বে আমাদের নারায়ণগঞ্জ সর্ম্পকে কেনই বা প্রবাসীদের ভিন্ন ধারনা। নারায়ণগঞ্জের সন্তান হিসেবে এটা আমাদের জন্য গর্বের বিষয় নয় বরং এটা আমাদের নারায়ণগঞ্জবাসীর জন্য লজ্জার। বাস্তবতা হলো নারায়ণগঞ্জের প্রশাসন কোন ব্যাপারেই কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারে না। আইন এখানে তার নিজস্ব গতিপথে চলছে বলে আমার মনে হয় না। তার প্রমাণ আইন যদি তার নিজস্ব গতিতে চলতো তাহলে যানজটের মতো একটি ঘটনা নিয়ে নারায়ণগঞ্জে তোলপাড় সৃষ্টি হতো না। একজন সাংসদকে তার দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে ট্রাফিকের ভুমিকায় অবতীর্ণ হতে হতো না। এর কারণ যানজট নিরসন, ফুটপাত দখলমুক্ত আর পরিচ্ছন্ন শহর গড়ে তোলা যাদের দায়িত্ব এক্ষেত্রে সম্পূর্নভাবে ব্যর্থ বলা চলে। পাশাপাশি সাংসদ শামীম ওসমান মাদকের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করে একাধিক অনুষ্ঠানে বলছেন, যে পরিবারে একজন ছেলে কিংবা মেয়ে মাদকাসক্ত সেই বাড়িটি একটি দোযখে পরিণত হয়। এজন্য তিনি পকেটের পয়সা খরচ করে স্টিকার বানিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে তুলে দিয়েছেন। মাদক ব্যবসায়ী, ভূমি দস্যু আর সন্ত্রাসীদের চিহিৃত করা মাত্র আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানোর অনুরোধ করেছেন। নারায়ণগঞ্জ মাদকে সয়লাব হয়ে গেছে। এখন স্কুল-কলেজের ছাত্রদের পাশাপাশি ছাত্রীরাও মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। শুধু তাই নয় অনেক গৃহবধু এই মাদকের কড়াল গ্রাসে আক্রান্ত। মাদক কারা বেচে, কোথায় বেচে, কিভাবে মাদক বেচাকেনা হচ্ছে এ তথ্য পুলিশের মাঠ পর্যায়ের কর্মী জানে না এ কথা বললে আমি তাদের সাথে দ্বিমত পোষণ করছি। আমরা একাধিকবার মাদক ব্যবসায়ীদের নাম-ঠিকানা, বিক্রয়ের স্টাইলসহ বিস্তারিত তুলে ধরে মাদক ব্যবসায়ীদের চক্ষুশূলে পরিণত হয়েছি। এর পরও এ সমাজকে রক্ষার জন্য আমাদের যুবকরা যাতে বিপদগামী না হয় এজন্য ডান্ডিবার্তা ক্ষুদ্র পরিসরে হলেও দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। আমাদের কোন অভিভাবক নেই, নেই কোন লগ্নিকারক। যে কারণে পাঠকই আমাদের একমাত্র ভরসা। আমরা কারো ভরসায় কিংবা অর্থানুকুল্যে পত্রিকা প্রকাশ করি না বলেই যা সত্য যা কল্যানকর তাই লিখি। আমরা আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করি না। এই শ্লোগানকে উপরে রেখে সত্য বলতে চাই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি আল্লাহর কোরআন ছুয়ে শপথ করে মাদকের টাকা খাবো না, মাদক বিক্রি করতে দিবো না। আমার বিশ্বাস একমাসে নারায়ণগঞ্জের কোথাও মাদক খুজে পাওয়া যাবে না। সেভেন মার্ডারের নায়ক নুর হোসেন একসময় নারায়ণগঞ্জের মাদক নিয়ন্ত্রন করতো এখন বন্দুক শাহীন সহ আঞ্চলিক ভিত্তিতে পাড়া-মহল্লায় মাদক বিক্রেতা গজিয়ে উঠেছে। মাদক বিক্রেতাদের অভিযোগ মাদক বিক্রি না করলে তারা পুলিশকে টাকা দিবে কিভাবে। আর টাকা না দিলে তাদের ধরে নিয়ে যাবে। সেই সাথে পুলিশের কথিত সোর্সরা মাদক বিক্রেতা সৃষ্টিতে সহায়ক ভুমিকা পালন করছে। আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করতে চাই মাদক বিক্রেতাদের পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। কিন্তু আসুন না এই মিথ্যাকে মিথ্যা হিসাবে প্রমানের জন্য কড়িত কর্মা। পুলিশ সুপার ও তার উর্ধ্বতন সহকর্মীরা ওয়াদা করে একবার চেষ্টা করি মাদক বন্ধ হয় কিনা। নারায়ণগঞ্জে আরেক সমস্যা বলা চলে সংবাদপত্র। নারায়ণগঞ্জে কয়টি পত্রিকা প্রকাশিত হয় জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট তা সঠিক সংখ্যা বলতে পারবেন বলে আমার মনে হয় না। প্রেস এন্ড পাবলিকেশন এক্টকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে যত্রতত্র পত্রিকা প্রকাশিত হচ্ছে। এই সব পত্রিকায় প্রকাশের খরচ জোগায় কে তার হিসাব নিজেরাও জানে কিনা আমার সন্দেহ। আমার জানা মতে, নারায়ণগঞ্জ জেলা ম্যাজিষ্ট্রেটের অনুমোদন সাপেক্ষে নারায়ণগঞ্জ থেকে ডিকলারেশন প্রাপ্ত দৈনিক পত্রিকার সংখ্যা ১৪টি। এর মধ্যে তিনটি বন্ধ, একটি অনিয়মিত। তারপরও সাংবাদিকদের সংখ্যা গুনে শেষ করা যাবে না। এব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ নিউজ পেপার ওনার্স এসোসিয়েশন বর্তমান জেলা প্রশাসকের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন। এমনকি তার সম্মেলন কক্ষে প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান আইন বহির্ভুত পত্রিকা প্রকাশের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়ার পরও প্রশাসন নিরব। এছাড়া ডান্ডা-বেরীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ শহরবাসী। পেশাদার সাংবাদিকরা নিজেদের পরিচয় আড়াল করে মান-সম্মান বজায় রেখে নিজ দুরত্বে অবস্থান করে চলেছে। এত কিছু বলার পিছনে যে বিষয়টি আমি বলতে চাই তা হলো, নারায়ণগঞ্জে জঙ্গীদের নিয়ে প্রশাসনের যেন কোন মাথা ব্যাথা নেই। একথা সত্য নারায়ণগঞ্জের জঙ্গীরা এখন অনেকটা নিরবই বলা চলে। কিন্তু আমার সাড়ে তিন দশকের অভিজ্ঞতা বলছে এই নিরবতা আগামী দিনের বড় ধরনের আঘাত হানার পরিকল্পনার পস্তুতি না তো? নারায়ণগঞ্জে জঙ্গীদের বিরুদ্ধে দেশীয় গণমাধ্যম শুধু নয় বিদেশী গণমাধ্যমও একাধিক সংবাদ প্রচার করেছে। নারায়ণগঞ্জের তিন জঙ্গী এখন ভারতের কারাগারে। জেএমবির শীর্ষ নেতা সালাউদ্দিনকে পুলিশ হত্যা করে কেড়ে নেয়া হয়েছে। বন্দরের সেই সালাউদ্দিন এখনো ধরা-ছোয়ার বাইরে। জেএমবির কর্মপদ্ধতি বিভিন্ন কায়দায় চলছে। কখনো শ্রমিক কখনো বা রিকশা চালক, আবার কখনো বা সাংবাদিক। এমনই পরিচয়ে তারা কাজ করে চলেছে। গত বছরে একাধিক নামধারী সাংবাদিক পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে। তারা স্থানীয় পত্রিকায় কর্মরত বলে পরিচয়পত্র দেখিয়েছে। পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তিতে জামাত-শিবিরকে আর্থিক ভাবে সহায়তা কারী এমন অনেকের নাম প্রকাশ করেছে। শুধু তাই নয় জামাত-শিবির তথা জঙ্গীদের অর্থে নারায়ণগঞ্জের বেশ কয়েকটি পত্রিকা প্রকাশিত হয় বলেও গ্রেফতারকৃতরা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে। এত সবের পরও প্রশাসন কি করেছেন, গণমাধ্যম তার কিছুই জানে না। সম্প্রতি ময়মনসিংহের প্রাচীনতম পত্রিকা দৈনিক জাহানের ব্যবস্থাপনা সম্পাদককে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র সহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেফতার করেছে। গোয়েন্দা সংস্থা বলেছে, দৈনিক জাহানের সীমানা প্রাচীরের ভিতরেই উক্ত পত্রিকার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক মেহেদী হাসানের বাড়ি। এই বাড়িতেই অস্ত্র তৈরির কারখানা ছিল। যেখানে গোয়েন্দা পুলিশ অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধারসহ মেহেদীকে গ্রেফতার করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মতে, জেএমবির সাথে যোগসাজশেই পত্রিকার অফিসের পাশে মেহেদী হাসানের বাড়িতে অস্ত্র তৈরির কারখানা গড়ে তোলে। যা জেএমবি ব্যবহার করতো। আমরা গত দুই বছরে একাধিক বার জেএমবির বিরুদ্ধে সত্য ও ব¯‘নিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশ করতে গিয়ে আতংকের মধ্যে পত্রিকা প্রকাশ করে চলেছি। কিন্তু রহস্যজনক কারণে প্রশাসনের এহেন নিরবতা জঙ্গীদের যেমন উতসাহিত করছে তেমনি নারায়ণগঞ্জে অপসাংবাদিকতার বিস্তার বাড়ছে। এব্যাপারে জনপ্রতিনিধিরা মাঝে-মধ্যে তাদের বিরুদ্ধে খবর প্রকাশ হলে ক্ষোভ প্রকাশ করে শান্ত হয়ে যায়। আমরা চাই জাতির বিবেক হিসাবে পরিচিত দেশের চতুর্থ স্তম্ভ হিসাবে স্বীকৃত প্রকৃত পেশাদার সাংবাদিকদের নিয়ন্ত্রণে সংবাদপত্র প্রকাশিত হোক। কারো দয়ায় কিংবা আশির্বাদে নারায়ণগঞ্জে অপসাংবাদিকতা যেন বিস্তার না পায় এব্যাপারে জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন ও বিবেকবান মানুষের প্রতি আমাদের সবিনয় নিবেদন এই শহরটা আমাদের, আপনাদের। আসুন নারায়ণগঞ্জকে মাদক মুক্ত, অস্ত্রমুক্ত, ভুমিদস্যু মুক্ত শহর সহ নারায়ণগঞ্জ বাসীকে একটি শান্তির শহর উপহার দেই। আর এ ক্ষেত্রে পেশাদার সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ ভুমিকা এইসময়ের জন্য সবচেয়ে বেশী জরুরী।
হাবিবুর রহমান বাদল
প্রকশক ও সম্পাদক
দৈনিক ড্যান্ডিবার্তা