বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
২৯ অক্টোবর শনিবার বিকেল ৩ টায় শামীম ওসমানের জনসভায় নেতাকর্মীদের জনস্রোত পরিনত হয়েছে। কানায় কানায় পরিপূর্ন ছিলো শামসুজ্জোহা কমপ্লেক্স এর পুরো মাঠ। চাষাঢ়া থেকে শুরু করে পঞ্চবটীর রাস্তাঘাটও ছিলো পরিপূর্ন। দুপুর থেকে বিভিন্ন থানা থেকে আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, সেচ্ছাসেবকলীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা বিশাল বিশাল মিছিল নিয়ে জনসভায় অংশগ্রহন করেন। বিকেল ৩ টায় ভরে উঠে পুরো মাঠ। শামীম ওসমান সহ বিভিন্ন নেতাদের নৌকা সজ্জিত মঞ্চে উঠার সময় নেতাকমীরা ডাক ঢোল বাজিয়ে ও শ্লোগান জানিয়ে তাদের স্বাগত জানান। এসময় শামীম ওসমান বিভিন্ন থানা আগত নেতাকর্র্মীদের ধন্যবাদ জানায়। বিকেল সাড়ে ৩ টায় শুরু হয় নেতাদের একে একে বক্তব্য।
মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন জনসভায় সভাপতির বক্তব্যে আবেগ জড়িত কন্ঠে কেদে ফেলেন। এসময় তিনি বলেন, আমি বঙ্গবন্ধুর সৈনিক। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামীলীগের রাজনীতি করি। আমাকে মেয়র আইভী বলে আমি বেঈমান। আমি আইভীর জন্য নির্বাচনে কাজ করেছি। আইভীকে আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু সে আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে নাই। তাকে এত কিছু করে দেওয়ার পর সে আমাকে বলে বেঈমান। আমি কোন বেঈমানি করি নাই। আওয়ামীলীগের সভাপতি শেখ হাসিনা যাকে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সমর্থন দিবে সেই মেয়র প্রার্থী হবে। আমি মেয়র প্রার্থী হতে চাই না। দলের নেতাকর্মীরা আমাকে ভালবেসে নাসিক মেয়র প্রার্থী হিসেবে সমর্থন দিয়েছেন। সেই ভালবাসা নিয়ে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আওয়ামীলীগের রাজনীতি করে যেতে চাই।
আনোয়ার হোসেনের বক্তব্যের পর জনসভার মূল আকর্ষন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ শামীম ওসমান প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, আমরা আবেগের রাজনীতি করি। যারা আবেগের রাজনীতি করে তাদেরই মরতে হয়। নিজের স্বার্থের জন্য কখনো রাজনীতি করি নাই। তাই নেতাকর্মীরা এই বিশাল জনসভায় অংশগ্রহন করে বুঝিয়ে দিয়েছে তারা কতখানি শামীম ওসমানকে ভালোবাসে। ২০০১ সালের আগে আমি নিজের জন্য রাজনীতি করেছি। এখন আমি বোমা হামলার পর থেকে মানুষের জন্য রাজনীতি করি। মানুষ বাঁচে কতদিন। তাই যতদিন বেঁচে আছি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মানুষের জন্য রাজনীতি করে যাবো। আমি আগেও বলেছি এখনো বলছি দেশে এখনো জঙ্গীবাদ রয়েছে। কিন্তু কেউ বিশ্বাস করে নাই। আবারও কোন বড় জঙ্গী হামলা হতে পারে। তাই আমাদের সজাগ থাকতে হবে। ২১ শে আগষ্ট আমার নেত্রী শেখ হাসিনা উপর বোমা হামলা চালানো হয়েছে। কিন্তু তিনি আল্লাহ রহমতে বেঁচে গেছেন। তার জন্য সবাই দোয়া করবেন। দলে এখন তেলমারাদের সংখ্যা বেড়ে গেছে। আওয়ামীলীগের ২০ তম সম্মেলনে নেত্রী নিজে বলেছিলেন আমাকে আর তেল দিয়েন না। আমরা তেল মারা রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। আমি জননেত্রী শেখ হাসিনার জন্য রাজনীতি করি। জনগনের জন্য রাজনীতি করি। এসময় তিনি মেয়র আইভীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আমার ভাই সেলিম ওসমান সাংসদ নির্বাচিত হয়ে প্রথমেই আইভীর কাছে গিয়ে তাকে বলেছিলেন চলো আমরা নারায়ণগঞ্জের জন্য একসাথে কাজ করি। কিন্তু সে মানে নাই। একসাথে কাজ করলে নারায়ণগঞ্জে ব্যপক উন্নয়ন হতো। নারায়ণগঞ্জকে আইভী ময়লার সহরে পরিনত করেছে। আইভী সম্মিলিত উন্নয়নের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। আমার ছোট বোন মেয়র আইভীকে বলেছিলাম সকলের কাছে ক্ষমা চান কিন্তু সে ক্ষমা চাইনি। আইভী এক সভায় বলেছিলেন দুইনেত্রী দেশকে ধ্বংস করেছে। আমাকে নিয়ে যা কিছু বলেন। নেতাকর্মীদের নিয়েও বলেন সমস্যা নাই। কিন্তু জননেত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে কথা বললে তার সন্তানরা কখনো ক্ষমা করে দিবে না। নেত্রী আইভীকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। নেত্রীতো বোমা হামলাকারীদেরও ক্ষমা করে দিয়েছেন। সে মা তাই সকলকে ক্ষমা করে দেন। কিন্তু তার সন্তানরা কখনো ক্ষমা করবো না। তাই এখনো সময় আছে নেতাকর্মীদের কাছ ক্ষমা চান। তারা ক্ষমা করে দিবে। আসুন ঐক্যবদ্ধ হয়ে আওয়ামীলীগের রাজনীতি করি। এসময় আনোয়ার হোসেনকে নাসিক মেয়র প্রার্থী হিসেবে সমর্থন দিতে নেতাকর্মীদের হাত তুলে সমর্থন দিতে আহ্বান জানান। তখন হাজার নেতাকর্মীরা হাত তুলে আনোয়ার হোসেনকে মেয়র প্রার্থী হিসেবে সমর্থন জানান।
“শামীম ওসমানের ঘাটি নারায়ণগঞ্জের মাটি, জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু, সফল হোক জনসভা”, এই শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে পুরো জনসভা। এসময় নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন থানা থেকে আগত আওয়ামীলীগ ও অঙ্গসংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মীরা বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা ও শামীম ওসমানের সম্মলিত ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে ডাক ঢোল বাজিয়ে জনসভায় যোগদান করেন।
শামীম ওসমানের বক্তব্য শেষে মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন জনসভার সমাপ্তি ঘোষনা করেন।
জনসমাবেশে মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সাংসদ লিয়াকত হোসেন খোকা, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাংসদ, হোসনে আরা বাবলী, তারাবো পৌরসভার মেয়র হাসিনা গাজী, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল হাই, সাধারন সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ মো. বাদল, মহানগর আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ সভাপতি চন্দন শীল, গোপীনাথ দাস, রবিউল হোসেন, সাধারন সম্পাদক খোকন সাহা, যুগ্ন সাধারন সম্পাদক জাকিরুল আলম হেলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক জিএম আরাফাত, জেলা জাসদের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সাত্তার, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি মজিবুর রহমান, ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ্ব এম সাইফউল্লাহ বাদল, বন্দর থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি এম এ রশীদ, শহর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন সাজনু, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাফায়েত আলম সানি, মহানগর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান রিয়াদ সহ বিভিন্ন থানা আওয়ামীলীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবন্দ।