বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
টঙ্গীর রেলগেট এলাকার বিসিক শিল্পনগরীতে ট্যাম্পাকো ফয়েল লিমিটেড নামের একটি প্রিন্টিং এ্যান্ড প্যাকেজিং কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণে সৃষ্ট আগুনে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২৮ এ দাড়িয়েছে। এ ঘটনায় অর্ধশতের বেশি শ্রমিক আহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে নারী শ্রমিকও রয়েছে।
আগুনে পাঁচতলা ভবনটির ওপরের চারতলার অনেকটাই ধসে গেছে। ভবনের বিভিন্ন অংশে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। ভবনের ভেতরে আরো লাশ থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করছে ফায়ার সার্ভিস। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ২৫টি ইউনিট কাজ করছে। এখনো পুরোপুরি আগুন নিয়ন্ত্রণে আসেনি।
ফায়ার সার্ভিস ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শনিবার ভোর ৬টার দিকে ট্যাম্পাকো ফয়েল লিমিটেড লিমিটেড নামক কারখানায় এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ওই কারখানায় প্লাস্টিক মোড়ক তৈরির কারখানায় হঠাৎ-ই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে কারাখানার ভেতরে ভয়াবহ আগুন লেগে শ্রমিক সহ শতাধিক মানুষ আহত হয়।
আহতদের উদ্ধার করে তাৎক্ষণিকভাবে টঙ্গি মেডিকেলে নেয়া হলে ১০ জনকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। এছাড়া গুরুতর আহত ১৯ জনকে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭ জনের মৃত্যু হয়।
এদিকে, আগুনের খবর পাওয়া মাত্রই টঙ্গী ফায়ার সার্ভিসের ৫টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ শুরু করে। পরে তাদের সঙ্গে যুক্ত হয় ঢাকা ও আশপাশের আরো ১৭টি ইউনিট।
অন্যদিকে, বয়লার বিস্ফোরণে ছড়িয়ে পড়া আগুনে নিহতদের স্বজনদের কান্নায় ভারি হয়ে উঠেছে টঙ্গী হাসপাতাল। এখনো পর্যন্ত এ ঘটনায় নিহত ১৪ জনের লাশ মর্গে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. পারভেজ হোসেন। এছাড়া, গুরুতর অবস্থায় ৯ জন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
এরআগে, অন্তত ৩০ জন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। নিহত ২৮ জনের মধ্যে ১৬ জনের পরিচয় জানাগেছে। এখন পর্যন্ত ঢামেকে নিহত চার জনের মধ্যে তিন জনের পরিচয় নিশ্চিত করেছেন মোস্তাফিজ। তারা হলেন, দেলোয়ার হোসেন (৫০), আনোয়ার হোসেন (৪০), ওয়াহিদুজ্জাম স্বপন (৩৩)। নিহতদের অন্য আরেকজন নারী। কিন্তু তার পরিচয় এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে নিহত দেলোয়ার দুর্ঘটনার শিকার টাম্প্যাকো লিমিটেড নামে ঐ পোশাক কারখানায় নিরাপত্তা কাজে নিয়োজিত ছিলেন।
অন্য নিহতরা হলেন- কারখানার শিফট ইনচার্জ সুভাস রায় (৪০), প্রিটিং সহকারী রফিকুল ইসলাম (২৮), অপারেটর রেদোয়ান (৩৫), মামুন (৪০), জয়নুল(৩৪), ইসমাইল, সিকিউরিটি গার্ড হান্নান (৪৫), ক্লিনার শংকর (৪০), ইদ্রিস (৩৫), রাজিব (২৫), নয়ন (৩৫), জাহাঙ্গীর (৫০), হান্নান (৩৫), সোলায়মান (৩০), প্রকৌশলী আনিসুর রহমান (৪০), রাজশ (২২) এদের মধ্যে রাজিব রিকশা চালক আর নয়নের বাড়ি কুমিল্লা বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এছাড়া ঢামেকে চিকিৎসাধিন অবস্থায় আছেন, কৃষ্ণ সরকার (৩৭), সাইদুল (২০), কামাল হোসেন (৩০), ফেরদৌস (৩০), রোকন (৩৫), আশিক (১২), শাহিন (৩৫), কামরুল (২৫), নিজু (২৫), রাসেল (২৫), রাসেল (৩০), আলামিন (৩৩), জাকির (৫৫), রুহুল আমিন (৩০), ইকবাল (৩০), জাহিদুর রহমান (৩৫), ওয়াহিদ (৩৫) ও শাহআলম(৪৫) এদের মধ্যে ৩০ শতাংশের অবস্থা আশঙ্কা জনক বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক।
হাসপাতালে হতাহতদের স্বজনরা ভিড় করছেন। পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের কান্নার রোলে গোটা হাসপাতাল এলাকায় শোকার্ত পরিবেশ বিরাজ করছে। এদিকে, বয়লার বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কারখানার মালিক সিলেট-৬ আসনের সাবেক সাংসদ সৈয়দ মকবুল হোসেন বলেন, বয়লারে কোনো ত্রুটি ছিল কি না তিনি জানেন না। শেষ কবে বয়লার পরীক্ষা করা হয়েছে, তাও জানেন না তিনি। শনিবার কাজ শেষে কারখানা ছুটি হওয়ার কথা ছিল।
সৈয়দ মকবুল হোসেন দাবি করেন, রাতের শিফটে ৭৫ জন শ্রমিকের কাজ করার কথা। শ্রমিকদের বেতন ও বোনাস দেওয়া হয়েছে। হতাহত ব্যক্তিদের সবাইকে সাধ্যমতো সহযোগিতা করবেন বলে তিনি জানান।
স্থানীয় এক শ্রমিক নেতা অভিযোগ করে বলেন, সরকারী ছুটির হিসেবে বৃহস্পতিবার রাতেই সব শ্রমিকের ছুটি ও কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা। তবে কারখানা মালিকের চাপেই শ্রমিকরা শুক্রবার থেকে শনিবার ভোর পর্যন্ত কাজ করছিলো।
গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক আখতারুজ্জামান জানান, অগ্নিকাণ্ডে পাঁচতলা ভবন পুরোটা ধসে গেছে। এখন পর্যন্ত ২১ জন নিহত হয়েছেন।
এদের মধ্যে ভবন থেকে ১৭টি লাশ উদ্ধার করে টঙ্গি ৫০ শয্যার হাসপাতালে রাখা হয়েছে। আর আহত ৩৫ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) নেয়া হলে সেখানে আরও ৪ জনের মৃত্যু হয়। আহতদের মধ্যে ঢামেকে ৩১ জন ও টঙ্গি ৫০ শয্যার হাসপাতালে ১২ জনকে ভর্তি করা হয়েছে।
আখতারুজ্জামান আরো জানান, ঢাকা, সাভার, ইপিজেড, সদর দফতর, টঙ্গি, জয়দেবপুর, শ্রীপুর ও কালিয়াকৈর থেকে ফায়ার সার্ভিসের ২০টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। দুপুর পৌনে ১২টা পর্যন্ত আগুন নিয়ন্ত্রণে আসেনি। হতাহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে।
এর আগে জয়দেবপুর ফায়ার স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন কর্মকর্তা মো. রফিকুজ্জামান জানান, বিসিক নগরীর ট্যাম্পাকো পুটিং লিমিটেড কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণ থেকে এ অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া জানান, সেখানে আহত কয়েকজনকে আনা হয়েছে। তাদের মধ্যে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে একজন নারী আছেন।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম আলম। তিনি আরো জানান, নিহত ব্যক্তিদের প্রত্যেক পরিবারকে ২০ হাজার টাকা ও আহত ব্যক্তিদের ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু। পরিদর্শন শেষে শ্রম প্রতিমন্ত্রী নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে দুই লাখ টাকা করে দেয়ার ঘোষণা দেন।