লেখক,আলী আকবার,বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
ইভ টিজিং একটি সামাজিক ব্যাধি, এটা প্রায় সব মানুষই জানেন তবে এর প্রতিকার এখনও প্রায় অস্পষ্ট। কিন্তু প্রতিকার নেই বলা যাবেনা; অবশ্যই আছে। যা আমাদের দেশে এখনও প্রয়োগ করা হয়নি। এ সমন্ধে রয়েছে নানা মুনির নানা মত। বেশীর ভাগের মতামতই কঠোর শাস্তির দিকে। কেউই এই সামাজিক রোগের উৎপত্তির কারণ বা উৎসের দিকে খেয়াল করতে পারছেনা বলে মনে হচ্ছেনা।
ইভটিজিং এর কারণ সমাজেই বিদ্যমান। সাধারণত এ পর্যন্ত যতগুলি এজাতীয় অঘটন ঘটেছে বেশীর ভাগ অপরাধই ক্ষমতারধর পরিবারের সদস্য কর্তৃক নয়তো অর্থ, প্রতাপ বিদ্যমান পরিবারের সদস্য কর্তৃক সংগঠিত। এক্ষেত্রে অপরাধি বেপরোয়া। এই বেপরোয়া মনোভাবটা এক দিনে তৈরী হয়নি। শৈশব হতেই এর সৃষ্টি। পরিবার এর দায়ভার বহন করতে বাধ্য। শৈশবে যে শিশু বঞ্ছনার স্বিকার হয় অথবা অতি আদরে ‘ছোট’ অপরাধের পার পেয়ে যায় কৈশোর হতে তারা বেপরোয়া হয়ে থাকে। এর ব্যতিক্রম হয় না তা নয়। এ ক্ষেত্রে একজন মা তথা একজন নারী এর অন্যতম কারণ। তবে এ কথাও বলা যাবে না এর মধ্যে বাবা কিংবা পুরুষের ভুমিকা নাই বা ক্ষুদ্র। পরিবারের প্রধান নারী এবং পুরুষ উভয়ের দায়বদ্ধতা সমভাবে বিদ্যমান। যদি শৈশব হতে একটি সন্তানের সুপথে পরিচালনার জন্য পরিবার দায়িত্ব পালন করে তবে নিশ্চয় সন্তানটি বিপথগামী হয়না। হ্যা ব্যতিক্রমও হয়; সঙ্গ দোষে। সে দিকেও পরিবারের খেয়াল রাখা উচিত।
ইভটিজিং এর দ্বিতীয় কারণ নিশ্চয় বিপরিত লিঙ্গের আকর্ষণ। এই বিপরিত লিঙ্গের আকর্ষণ আদি কাল থেকেই বিদ্যমান। জীবের জৈবিক ক্ষুধা বা কাম-লালসা যা উঠতি বয়সে মারত্মক আকার ধারণ করে । এখানে শুধু মানুষ না; যাবতিয় জীবের ক্ষেত্রেই প্রায় একই অবস্থা। মানুষ সেটা শোভনীয় পর্যায়ে রাখতে পারে। সাধারণত পশু তা পারেনা। যে মানুষ শোভনীয় পর্যায় রাখতে পারেনা তাদের দ্বারাই অঘঠন ঘটে।
প্রসঙ্গক্রমে বলা যায় বাংলাদেশের দেশের কৃষকেরা প্রাকৃতিক কিটনাশক আবিস্কার এবং এর ব্যাবহারে ব্যাপক সাফল্য লাভ করেছে যা পত্রিকা-টিভিসহ বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমের কল্যানে যানতে পারি। বিশেষ করে শাইখ সিরাজ-এর উপস্থাপনায় বিটিভিতে কৃষি দিবানিশি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সরাসরি তথ্য ভিত্তিক কৃষি সংবাদ প্রচার এবং স্বচিত্র প্রতিবেদন এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখ্যযোগ্য। প্রকৃতিক কিট নাশক এক ধরণের ফাঁদ। যাতে স্ত্রী কিটের শরিরের গন্ধ ব্যবহার করে পুরুষ কিটকে আকৃষ্ট করে তাকে হত্যা করা হয়। এ যেন বিপরিত লিঙ্গের আকর্ষনে সেচ্ছায় আত্ম হনন করা। বিপরিত লিঙ্গের প্রতি পরষ্পরের আকর্ষণ যে কতটা প্রবল তার প্রমাণ জগতে অনেক আছে। যেমন বাদশাহ শাহ-জাহান তার প্রীয়তমার স্মৃতি রক্ষায় তাজমহল গড়েছেন। হেলেনেরে জন্য ধ্বংশ হয়েছে ট্রয় নগরী। এমন হাজার হাজার উধাহরণ টানা যায়। কিন্তু কি কারণে এই আকর্ষণ? বৈজ্ঞানিক মতে মস্তিস্কের ‘পি’ নামক কোষ বিপরিত লিঙ্গকে আকর্ষনের জন্য দায়ি। এই ‘পি’ কোষটা স্ত্রী-পুরুষ উভয়ের মধ্যেই বিদ্যমান। ‘পি’ কোষের কার্য ক্ষমতাই নির্ধারণ করে পরষ্পর পরষ্পরের প্রতি আকর্ষণ। নারী এবং পুরুষ উভয়ের ‘পি’ কোষেরই ক্ষমতা যদি সমান হয় তবে একে অপরের প্রতি সমান আকর্ষণ অনুভব করবে। এবং যদি কম বেশী হয় তবে আকর্ষনেরও তারতম্য হবে।
এ্যারিখ ফার্ম তার আর্ট অব লাভিং গ্রন্থে ‘পি’ কোষের কার্যকারিতাকে অর্থনৈতিক অবস্থান বলে উল্লেখ্য করেছেন। যা আমরা সত্য বলে সমাজে অনুধাবন করি। এর ব্যতিক্রম যে হয় না তা নয়। তবে হিসাবে খুবই নগণ্য। এ অর্থনৈতিক অবস্থান আবার শক্তি বা ক্ষমতার অবস্থানও নির্নয় করে সমাজে। ইভটিজিং সামাজে বর্তমানে মারত্মক আকার ধারণ করেছে। এর একটা প্রতিষেধক অবশ্যই অত্যাবশ্যকীয় যা স্থায়ীভাবে নির্মুল করবে ইভটিজিং-এর মতো সামাজিক অপরাধ। এটা নিশ্চয় সবারই কাম্য। যারা অপরাধ করেছে তারা অপরাধী। এদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া বাঞ্ছনিয়। এ নিশ্চয় অপরাধির বিচার কিন্তু যারা অপরাধের পথে এগোচ্ছে? একজন রোগীকে আমরা জনসমাজ হতে বিচ্ছিন্ন করলাম যাতে তার দ্বারা আর রোগের বিস্তার না হয়। অথচ আমরা রোগের উৎপত্তি বা এর বিস্তার এ সবই আমাদের অজ্ঞাত। এর প্রতিশেধক তথা রোগের নির্মূলের ব্যাপারে কিছুই করলাম না। এতে একজন রোগী নিস্তার পেলেও, রোগের বিস্তার কিন্তু রোধ করা হলো না। রোগটা ধ্বংস করার আমাদের প্রচেষ্টা করা উচিত। অতএব আমাদের পূর্নাঙ্গ বিশ্লেষন করা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার; কোন খন্ডিত বিশ্লেষণ না।
আধুনিক দর্শন শ্রাস্ত্রের জনক দেকার্ত বলেছিলেন, কোন কিছুকে খন্ডিতভাবে বিশ্লেষণ করলে তার মৌলিকত্ব সম্পর্কেই অজ্ঞ থেকে যেতে হয়। অতএব খন্ডিত বিশ্লেষণের কোন উপায় নেই। ইভটিজিং বিপরিত লিঙ্গের আকর্ষণ থেকেই ঘটে। মস্তিস্কের ‘পি’ কোষের কার্যকারিতার এটা একটি প্রক্রিয়া মাত্র। বেশীর ভাগ উঠতি বয়সে হয় এই আকর্ষণ। নর-নারী উভয়েই এজন্য সমক্রিয়াশীল; তবে এর বহি:প্রকাশ ভিন্ন। নরের বহি:প্রকাশ বেশীর ভাগই ঔদ্ধ্যত্বপূর্ণ। নারীর বহির প্রকাশ কোমলিয়। সাধারণত আমাদের ধারণা শুধু ছেলেরাই মেয়েদের উত্যেক্ত করে। আসলে ব্যাপারটা তা নয়।
সমাজ বিজ্ঞানীদের মতে উভয়েই উভয়কে উত্যেক্ত করে থাকে। শুধু পুরুষরাই নারীদের ধর্ষণ করে এটা প্রকাশিত সত্য। কোন এক সময়ে পৃথিবীতে নারীতান্ত্রিক সমাজ ব্যাবস্থা ছিল, পুরুষদের দমিয়ে রাখার জন্য ‘পুরুষ’রাই ধর্ষক এ ধরণের মতবাদ চালু করা হয়। যেমন পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীরাই পতিতা; পুরুষরা নয়। আসলে এই পতিতা শব্দটা একটি উপাধি বাচক; যা পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীর উপরে চাপানো হয়েছে, অবশ্যই নেতিবাচক অর্থে। কিন্তু এর ভিন্ন চিত্রও হতে পারে। নারীও যে ধর্ষক হতে পারে তার প্রমাণ পাওয়া যায়। সম্প্রতিক আমেরিকার আদালতে এক পিতা নালিশ করেছেন তার চৌদ্দ বছরের ছেলে স্কুল শিক্ষিকা কর্তৃক ধর্ষিত হয়েছেন। এবং ঐ স্কুল শিক্ষিকা যথারিতি অন্তসত্ত্বাও হয়েছেন। সুস্পষ্ট প্রমাণের প্রেক্ষিতে আদালত ঔ স্কুল শিক্ষিকাকে সাজাও প্রদান করেছেন। আসলে মানব দেহের নর-নারী উভয় ক্ষেত্রেই উপাদান প্রায় সম পর্যায়ে বিদ্যমান। মানব আর পশুর ক্ষেত্রে ওই উপাদান প্রায় ৯০% একই। বাকি ১০% নর-নারী উভয়ের জন্য প্রযোজ্য। নর-নারীর ভিন্নতা দৈহিক বৈশিষ্টের কারণ তার দেহের অভ্যন্তরে লুকিয়ে থাকা হরমোন। হরমোনের সংখ্যাগত তারতম্যই নারী কিংবা পুরুষ হিসাবে প্রত্যেক শিশুর পরিচয় নির্ধারণ করে।
বিশ্ব শ্রমজীবী মানুষের মুক্তির সপ্নদ্রষ্টা মহামতি কার্ল মার্কস তাঁর ঐতিহাসিক দ্বন্দমূলক বস্তুবাদী দর্শনে উল্লেখ্য করেছেন, সংখ্যাগত তারতম্যের কারণে বস্তুর গুণগত পরিবর্তণ ঘটে। এর প্রমাণ হিসাবে বলাযায় যে ঐ২ঙ হলো পানির বৈজ্ঞানিক চিহ্ন। এখানে ২ ভাগ হাইড্রোজেন ও এক ভাগ অক্সিজেন-এর যৌগিক মিশ্রনে পানিতে রুপান্তরিত হয়। অথচ আমরা জানি হাইড্রোজেন নিজেই জ্বলে; আর অক্সিজেন অপরকে জ্বলতে সাহাজ্য করে (অক্সিজেন ছাড়া আগুন সম্ভব না)। অথচ পানি দিলে আগুন জ্বলে না বরং নিভে যায়। কিন্তু আমরা যদি এক ভাগ অক্সিজেন এর সাথে তিন ভাগ হাইড্রোজেন মিশাই (ঐ৩ঙ) তবে প্রচন্ড শক্তিশালী অগ্নিশিখা রূপধারণ করবে। যা দ্বারা ৩৭ ইঞ্চি পুরু লোহার পাতও কাটা যায়। এখানে কেবল সংখ্যাগত তারতম্যের কারণে আগুন ও পানির রূপ ধারণ করে। নর-নারীর ব্যাপারেও হরমোনের সংখ্যাগত তারতম্যের কারণে নারী এবং পুরুষ। কিন্তু উভয়ের মাঝেই কাম-ক্রোধ-লোভ এ জাতিয় গুণগুলো একই ভাবে ক্রিয়াশীল। শুধু প্রকাশের ভঙ্গিমা ভিন্নমাত্র।
ইভটিজিং বা যৌন নিপিড়ণ এ জাতিয় ব্যাপার গুলো সাধারণত এক মুহুর্ত বা এক দিনেই ঘটে যায় না। এ জন্য বহু সময় প্রয়োজন হয়। একটা ক্ষেত্র তৈরী হতে হয়। এক দিনেই একটা বখাটে তৈরী হয়না। এর একটা প্রক্রিয়া থাকতে হয়। এ প্রক্রিয়াটা যেভাবে তৈরী হয় সে দিকে খেয়াল রাখা প্রয়োজন। যদিও নর-নারী উভয়ের মাধ্যমেই এ ধরণের অপরাধ সংঘটিত হতে পারে। বর্তমানে আমাদের সমাজে এটা প্রকট আকার ধারণ করেছে। এসব অপরাধি পুরুষেরা শুধু উঠতি বয়সেরই হবে তা নয় পরিনত বয়সেরও হতে পারে। বয়স্ক নারী-পুরুষও এ অপরাধ করতে পারে। ২০০৭ সালে জুন মাসের ১১ তারিখে আমেরিকার ইদাহো অঙ্গ রাজ্যের সিনেটর ল্যারি ক্রেইব যৌন নিপিড়নের অপরাধে গ্রেফতার হন। এবং সাজা ভোগ করে। তার পরও উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েদের অপরাধের মাত্রা অতিরিক্ত যা আমাদের সমাজে মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।
এর একটা মূল কারণ হতে পারে অর্থনীতি। অনেকেই বলবেন, এটা কি করে সম্ভব? অর্থ আয়ের উৎসই নির্ণয় করে অর্থ ব্যায়ের মাত্রা ও পন্থা। একজন মানুষ নিশ্চয় তার কষ্টার্জিত অর্থ যেনতেন ভাবে ব্যায় করবেন না। আর অর্থের পরিমানই নির্ণয় করে ভোগ বিলাশের পরিমান। যৌনতা ভোগবিলাশিতারই অংশ। যেনতেন ভাবে আয় করা অর্থই হলো ভোগ বিলাশের উৎস।
ধরা যাক, একজন কিশোর তার পিতার পকেট হতে চুরি করে ৫০টি টাকা নিল। এ টাকা দিয়ে সে কি করবে? অবশ্যই খাতা কলম বই বা এ জাতীয় কোন পণ্য সে কেনবেনা। এ টাকা দিয়ে সে আনন্দ খুজবে। বড়জোড় বন্ধুবান্দব নিয়ে আড্ডা মেরে চা-সিগারেট খেয়ে কিংবা হলে গিয়ে কোন ছবি দেখে টাকাটা নষ্ট করে ফেলবে। এতে করে তার সাথীরাও উৎসাহিত হবে। এভাবেই বখাটেপনার শুরু। অতএব অর্থ কোননা কোন ভাবে বখাটেপনার মূলকারণের একটি।
ইভটিজিং-এর জন্য সমাজব্যবস্থাও অধিকক্ষেত্রে দায়ী। আমাদের সমাজ ব্যাবস্থা আগের মতো নাই, আগে সমাজে একটা সামাজিক বন্ধন ছিল, শ্রদ্ধাবোধ ছিল, পারিবারিক বন্ধন ছিল, পরষ্পরে শ্রদ্ধাবোধ ছিল। এর সবই এখন উল্টে ফেলা হয়েছে। মোট কথা পারিবারিক ব্যাস্থার কারনে আজ সমাজব্যস্থা উচ্ছন্নে যাচ্ছে পর্যায়ক্রমে।
দেশের অসহিষ্ণু রাজনীতিও এই ইভটিজিং-এর অন্যতম প্রধান কারন। বর্তমান অসহিষ্ণু রাজনীতিতে অপরাধীদের ব্যবহার করা হয়। শিশু-কিশোরদের যথেচ্ছা ব্যাবহার করা হয়। শিক্ষাজীবন ব্যহত করে হৈহুল্লরে উৎসাহিত করা হয়। অবোধ শিশুদের অপরাধে উৎসাহিত করা হয়। শিশুর মস্তিস্কে অপরাধ প্রবনতা জন্ম নেয়। বিজাতিয় আনন্দের সুখ অনুভব করে। ফলে ক্রমাস্বয়ে সুন্দর সুস্থমনের শিশুও অপরাধের দিকে যেতে থাকে।
দেশের প্রচলিত শিক্ষাব্যাবস্থাও ইভটিজিং-এর জন্য অনেকাংশে দায়ী, আমাদের শিক্ষাব্যাবস্থায় সুনাগরিক গড়ার কোন লক্ষ্য আছে কিনা তা গুণিজনদের মাথায় আছে বলে মনে হয় না। শিক্ষার সংশ্লিষ্ঠ যেসব প্রতিষ্ঠান রয়েছে মুনাফাই এদের প্রধান লক্ষ্য। তবে উপরতলার জন্য বিকল্প ব্যাস্থা আছে, তাদের সন্তানদের ভিন্ন উপায় আছে।
কিছু দিন আগে শিক্ষা মন্ত্রনালয় হুকুমজারী করেন কোন রকম নোটবই সাজেশন বা এ জাতিয় কোন বই প্রকাশ অথবা বিক্রয় করা যাবেনা। অনেকেই সাধুবাধ জানালেন, অথচ এই হুকুমজারীর অশ্ব অল্প কিছু দিনের মধ্যেই ডিম্ব দিল। নোট-সাজেশন বহাল তবিয়তে রইলো এবং নতুন মোড়কে তাদের শক্তির প্রকাশ ঘটাল। মজার ব্যাপার হলো মুল বইয়ের প্রশ্নগুলিও সাজেশন বই ভিত্তিক। আর কোচিংব্যাস্থা ? স্কুল শিক্ষকের কোচিং না করলেই ফেল। এছাড়াও এসেসমেন্টের অপসেট পেপারের ধাক্কায় অনেক শিশু শিক্ষা জীবন থেকে অপরাধ জীবনে যেতে বাধ্য হয়েছে। রয়েছে রং-বেরং এর কোচিং সেন্টারের হাজার ভাগ পাশের নিশ্চয়তা। এতসব বানিজ্য উপাধানের ধকল কয়টা পরিবার সহ্য করতে পারে ? এসব ভাবার কারোই ফুরসত নাই।
একটা কথা মনে পড়ল রাশিয়া আমাদের মুক্তিযুদ্দের সরাসরি সাহায্যকারী দেশ। আমাদের সদ্যস্বাধীন দেশের শিক্ষা প্রতিনিধীরা রাশিয়া শিক্ষা সফরে যান, স্কুল পরিদর্শন করেন যথারীতি শিক্ষার্থীদের কিছু প্রশ্ন করেন; এর মাঝে একটা প্রশ্ন ছিল, ‘এক সের দুধে কি পরিমান পানি মিশালে ক্রয় দামে বিক্রি করলেও নির্দ্দিষ্ট পরিমান মুনাফা অর্জন করা যাবে। প্রশ্নটি আমাদের সপ্তম শ্রেণীর সমমানের প্রশ্ন। সে দেশের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরাও কোন উত্তর দিতে পারে নাই। এতে আমাদের প্রতিনিধীরা মহাখুশি। কিন্তু বিপত্তি হল তখন যখন একজন শিক্ষার্থীর মন্তব্য করে বসলো “দুধে পানি মিশ্রনতো অপরাধ”। সেদিন আমাদের রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধিরা কোন প্রকার লজ্জা পেয়েছিলেন কিনা অথবা আমাদের শিক্ষা ব্যাবস্থা সম্পর্কে কোন ব্যবস্থা নিয়েছিলেন কিনা তাও আজ জানা যায়নি।
রাষ্ট্রীয় বিচার ব্যাবস্থা অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধির মূল কারণ। বিচার পক্রিয়া পূর্বেও ছিল এখনও আছে। তবে নিশ্চয় এত বেশী প্রশ্নবিদ্ধ ছিলনা। একজন বিচার প্রার্থীকে সাধারণত প্রথম এক জন পুলিশের নিকট যেতে হয়। তাদের সহায়তামূলক দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা প্রায় সবাই অবগত আছেন। এর পর আইনি পক্রিয়ায় আদালতে আইনি লড়াই। সেখানে আইনজীবী, আইনজীবীসহকারীদের কর্তব্য সচেনতা আদালত সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ববোধ তাও সবার জানা। বিচারের সময়কাল বাদি-বিবাদি উভয়ের আইনজীবীই জানেন কে প্রকৃত দোষি আর কে দোষি নয় তবুও লড়াই চলবে পেশাগত দক্ষতার; সত্য এবং ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য নয়। স্বাক্ষীরা আসবে হলফ করে বলবে যাহা বলিব সত্য বলিব। সত্যবৈ মিথ্যা বলিবনা। অথচ বাংলাদেশের সবাই জানেন, টাকায় বিক্রি হয় আইন। ভাড়ায় মিলে স্বাক্ষী। বিচার বিভাগের সততা, সচ্ছতা, দীর্ঘসূত্রিতা অপরাধীকে শাস্তি প্রদান। বিভিন্ন ব্যাপারে বিচারালয় একটা অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়ে উঠে। আইনি পক্রিয়া পদে পদে ব্যহত করা, অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত না করা, অথবা নির্দোষব্যক্তিকে শাস্তি প্রদান, যার কারণে অপরাধ প্রবনতা আরও বেরে যায়। নতুন অপরাধীর সৃষ্টি হয়।
দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা অধিকাংশ অপরাধের জন্য দায়ী। অন্য-বস্ত্র-বাসস্থানের নিশ্চয়তা না থাকায় কৃষি ভিত্তিক আয় প্রয়োজনের তুলনায় পর্যাপ্ত না বিধায় মানুষ শহরমুখি ধাববান। ধারণ ক্ষমতার অধিক মানুষের শহরে অবসস্থান, জনাকির্ণ শহরে অপরিচিত পরিবেশে অপপরাধ প্রবনতা বারে, জন্ম হয় নতুন অপরাধীর। মোটামেটি এসব কারনে ইভটিজিং জাতিয় অপরাধ সংঘঠিত হয়।
ইভটিজিং-অপরাধীদের দৃষ্টান্তমুলক বিচার হওয়া আবশ্যকিয়। অবশ্যই ন্যায় বিচার হতে হবে, বিচারে কোন ভাবেই প্রভাব খাটানো বিগ্নতা সৃষ্টি অহেতুক কালক্ষেপন করা নয়। বিচার সম্পূর্ণ স্বচ্ছ-প্রক্রিয়ায় হতে হবে। বিচারের প্রদত্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। প্রচার মাধ্যমে বিচারের পূর্ণাঙ্গতা প্রকাশ করতে হবে। যাতে করে ভবিষ্যতে আর কোন অপরাধি এ জাতিয় অপরাধ করতে ভয় পায়। এটা রাষ্ট্রের অবশ্যই কর্তব্য।
পরিবার শিশুদের লালনে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। শিশুরা যাতে কোন প্রকার অপরাধ প্রবন না হয়। প্রয়োজনে রাষ্ট্রিয় প্রচার মাধ্যমে শিশু লালন প্রক্রিয়ামূলক অনুষ্ঠান চালু করতে হবে। যাতে করে আমাদের মায়েরা শিশুদের সুনাগরিক হিসাবে গড়ে তুলতে পারে। কোন ভাবেই অর্থনৈতিক হেয়ালপিনা চলবেনা। অর্থের প্রতি শিশুদের লোভ জাগানো থেকে বিরত থাকতে হবে।
শিশুর শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি মানসিক সুস্থতাও আবশ্যিক। শিশু মনে যে ছাপ পরে পরবর্তিতে তাই প্রকাশ পায়। যা কোন মতেই অবহেলার সুযোগ নাই। শিশুদের কোন মতেই অনৈতিক কাজে ব্যাবহার করা যাবেনা। রাজনৈতক কোন কারনে শিশুদের ব্যাবহার করা সম্পুর্ন নিষিদ্ধ করতে হবে। বর্তমানে বেশিরভাগ রাজনৈতিক কর্মসুচী বখাঠে তৈরির শুতিকাঘার। শিশু-কিশোরদের রাজনৈতিক দল বা তাদের অধিকাংশ কর্মকান্ড হতে অপেক্ষাকৃত দুরে রাখাই ভালো। শিক্ষা মুলক অনুষ্ঠান-খেলাধুলা যা শিশুদের সুস্থ মানসিক ও দৈহিক গঠনে সাহায্য করে তা ব্যাতিক্রম। অপ্রাপ্ত বয়সে রাজনীতি আইন করে বন্ধ রাখা উচিৎ।
শিক্ষাব্যাবস্থার আমুল পরির্বতন করতে হবে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কোন ভাবেই বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান হিসাবে গ্রহণ যোগ্য নয়। দেশের সমস্ত শিশুদের শিক্ষার আওতায় আনতে হবে, কমপক্ষে মাধ্যমিক শ্রেনী পর্যন্ত বাধ্যতামুলক করতে হবে। কোচিং-সাজেশন-গাইড-প্রাইভেট পড়ানো সহ সকল প্রকার বাণিজ্য শিক্ষা প্রতিষ্টান হতে নির্মুল করতে হবে। বর্তমান এবং ভবিষ্যত কার্যকরি শিক্ষা ব্যাস্থা চালু করা উচিত। সংবিধান রাষ্টীয় কর্ম-পদ্ধতি, নিয়ম-নীতি এবং এর বাস্তবায়নের ধারক, জনগণ যেমন আইন কানুন মেনে ভেট খাজনা টেক্স বিভিন্ন কর প্রদান করে বশ্যতা স্বিকার করতে বাধ্য ঠিক তেমনি রাষ্ট্রেও সংবিধান মতে জনগণের অন্য বস্ত্র বাসস্থান শিক্ষা চিকিৎসা নিরাপত্তা প্রদানে বাধ্য। প্রয়োজনে রাষ্ঠ্র শিক্ষাখাতে অধীক ভূর্তকি দিতে হবে। মনে রাখা দরকার শিক্ষা সকল প্রকার অপরাধ নির্মূলের প্রধান চিকিৎসা। শিক্ষা বাণিজ্য বন্ধ না করলে অপরাধ প্রবনতা বিশেষ করে ইভটিজিং এর মতো অপরাধ বন্ধ করা যাবেনা। কাজটা সহজ না তবে অসাধ্য কোন ব্যাপারও নয়। শুধু মাত্র সদিচ্ছা-শিক্ষানুরাগী মনোভাব থাকা দরকার। শিক্ষাসংশ্লিষ্ট সব দুর্নিতীতে সঠিক আইনি পদক্ষেপ নেয়া, কোনভাবেই ছাড় দেয়া নয় অবশ্যই নতুন কোন অপরাধ সৃষ্ঠি না করে। শিশুর শিক্ষাজীবন নিশ্চত করতে পারলে অপরাধের মাত্রা অনেকাংশে কমে যাবে।
তামাক সহ সব ধরনের মাদক বা নেশা জাতীয় দ্রব্য শিশুদের নাগালের বাইরে রাখা, অপ্রাপ্ত বয়স্ক কারো নিকট এ রধরনের বস্তু বিক্রয় বা হস্থান্তর সম্পূর্ণ নিষিদ্ধএবং শাস্তির বিধান নিশ্চিত করা। প্রয়োজনে নতুন আইন প্রনয়ন করতে হবে। রাষ্ট্রের পাশাপশি এটা জনগনেরও কর্তব্য।
ইভটিজিং সহ অপরাধমুক্ত দেশ গড়তে হলে রাষ্ট্রের সর্বস্তরে সচ্ছতা জবাবদিহিতা আইনের সঠিক প্রয়োগ এবং অর্থনৈতিক সুসম বন্টনব্যাবস্থা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
অশালীন কুরুচিপূর্ণ কাম ঊদ্দিপনাই ইভ টিজিং-এর বেশীর ভাগ ঘটনার জন্য দায়ী। শুধুমাত্র আইন থাকলেই হবেনা আইনের সঠিক প্রয়োগ সামজিক সচেতনতা, পারিবারিক সুশিক্ষার নিশ্চয়তা সৃষ্টি করতে পারলে অপরাধ মুক্ত সমাজ তথা অপরাধ মুক্ত দেশ আশা করতে পারি।
দর্শনশাস্ত্র মতে প্রত্যেক ঘটনার এক বা একাধিক কারণ থাকে আবার কারণের ও কার্য্যকারণ থাকে, শুধু মাত্র কারণ দ্বারা কোন ঘটনা বিশ্লেষন করলে সেই ঘটনা সর্ম্পকে অজ্ঞই থেকে যেতে হবে। দেকার্তের মতে পুরাটা বিশ্লেষন দরকার (ঘটনা+কারন+কার্য্যকারন)। মাওজেদং এর উক্তি ‘শিকড়ের সন্ধানে যাও, শিকড়ে পুষ্টি যোগাও’ তবেই সেটা মহীরূহ হবে।
ধরাযাক কোন এক সন্তান টাকা চুরি করেছে, পিতা তার শাসন করলো, এখানে পিতার শাসন কারন, ছেলের চুরি ঘটনা, আর কার্য্যকারন হলো ছেলেটার প্রয়োজন। পিতার শাসন ছেলেটার সংশোধনের জন্য। এ শাসন বিফলে যাবে যদি ছেলের প্রয়োজন বিশ্লেষন করে উপযুক্ত ব্যাস্থা না নেয়া হয়।
একজন কৃষক জমিতে চাষাবাদ করতে আগাছা পরিস্কার করে আবার আগাছা জন্মায় কারন আগাছার মুল থেকে যায়। তদ্রুপ অপরাধের মুলের বিশ্লেষন না করলে সাময়িক ভাবে হয়তো অপরাধ কিছুটা কমবে কিন্তু নির্মূল হবেনা।
এযাবৎ অনেক পত্রিকায় অনেক গুণিজনের লেখা, মন্তব্য, সমাধানের মতামত ছাপা হয়েছে, মুল্যবান তথ্য-যুক্তি আমরা পেয়েছি, অনেক সভা-সমাবেশ, অনেক প্রতিবাদ করা হয়েছে কিন্তু প্রতিরোধ হয় নাই, ইভটিজিংয়ের মুলউৎপাটনের সহজ কোন উপায় বের হয় নাই।
খন্ডিত নয় অপরাধের পুর্নাঙ্গ বিশ্লেষন করলেই এর সমাধান বের হবে, হতে বাধ্য। এবং আমরা পেতে পারি অপরাধমুক্ত পরিবেশ।
লেখক: