বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এমপি বলেছেন, অবশ্যই এই বাংলাদেশ জঙ্গিমুক্ত হবে। মানুষ দরজা খুলে ঘুমাবে। সেই দিন বেশি দুরে না। কোন ষড়যন্ত্রই আমাদের অগ্রযাত্রাকে বাঁধাগ্রস্থ করতে পারবে না। বিএনপি নেতারা একদিকে বলে জঙ্গি হামলায় নিহতরা জঙ্গি কী না সন্দেহ আছে। অন্যদিকে জাতীয় ঐক্যের কথা বলে। কার সঙ্গে ঐক্য? জামায়াতের সঙ্গে? ঐক্য হয়ে গেছে। ৭১’ সালে জাতি একবার বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। আর এবার জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। শহরের বরফকলে বিআইডব্লিটিএর পোর্টকে কন্টেয়ার টার্মিনাল করার জন্য ব্যবসায়িদের দাবির প্রেক্ষিতে মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এবং নারায়ণগঞ্জের পোশাক খাতকে আরো সামনে দিকে এগিয়ে নিতে আমরা সহায়তা করবো।
তিনি শনিবার বিকেলে শহরের ইসদাইর সামসুজ্জোহা স্টেডিয়ামে বিকেএমইর উদ্যোগে আয়োজিত ব্যবসায়িদের সঙ্গে মত বিনিময় সভায় এসব কথা বলেন। এরআগে সকালে ফতুল্লার চাঁদমারীস্থ নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কর্মাস এন্ড ইন্ডাস্ট্রি এর নবনির্মিত নিজস্ব ৭তলা ভবনের উদ্বোধন করেন মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। পরে তিনি চেম্বার ভবনে অবস্থিত অর্থ মন্ত্রনালয় ও এডিবি’র অর্থায়নে ও উদ্যোগে বাস্তবায়িত এবং বিকেএমইএ’র অধীনে পরিচালিত এসইআইপি ট্রেনিং কোর্স উদ্বোধন শেষে দুপুরে নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়ায় ১০ তলা অত্যাধুনিক বিকেএমইএ কমপ্লেক্স নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং নির্মাণ কাজের শুভ উদ্বোধন ও মৃত ৮০ জন শ্রমিকদের পরিবারের মাঝে গ্রুপ বীমার ২ লাখ টাকার চেক হস্তান্তর করেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে যখন বিকেএমইএর যাত্রা শুরু হয় তখন রফতানী হতো ৩০০ মিলিয়ন ডলারের পোশাক। বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে তৈরী পোশাক খাতে ২৮ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার রফতানী হচ্ছে। যা বিশ্বে দ্বিতীয়। আমাদের পরে রয়েছে ভিয়েতনাম, ভারত, পাকিস্তান। আমাদের রফতানী আয়ের ৮২ শতাংশ আসে তৈরী পোশাক খাত থেকে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে এগিয়ে যাচ্ছে। আগে বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলা হতো। আর এখন বাংলাদেশের উত্থানকে বিষ্ময়কর বলা হচ্ছে। কেনিয়ার বাণিজ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ এ ব্যাপারে আমার কাছে জানতে চেয়েছিলেন, তখন আমি বলেছি বাংলাদেশের জনসংখ্যা যখন সাড়ে ৭ কোটি ছিল তখন খাদ্যে ঘাটতি ছিল। আর এখন জনসংখ্যা ১৬ কোটি হলেও আমাদের খাদ্য উদ্বৃত্ত রয়েছে। আমাদের বাজেট এক সময় মাত্র ৭৮৬ কোটি টাকা ছিল। এখন বাজেট ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা। আগে ৬৮টি দেশে ২৫টি পণ্য রপ্তানী হতো। আর এখন পৃথিবীর সকল দেশে ২ শতাধিক পণ্য রপ্তানী হচ্ছে। আগে রিজার্ভ ছিল ৫০০ কোটি টাকা। আজকে সেটা ২৯ বিলিয়ন ডলারের বেশী। পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রীকে আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম আপনাদের রপ্তানী কতো। তখন তিনি জানিয়েছিলেন ২৪ বিলিয়ন ডলার। আর আমাদের রপ্তানী ৩৪ বিলিয়ন ডলার। লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি ৩৭ বিলিয়ন ডলার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা সব ক্ষেত্রে পাকিস্তানের থেকে এগিয়ে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভারতের চেয়ে এগিয়ে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের এই অর্জন এই সফলতাকে আর্ন্তজাতিকভাবে ভবিষ্যতবানী করা হচ্ছে। মাল্টিন্যাশনাল ব্যাংক গোল্ডম্যান স্যাকস বলেছে যে ১১টি দেশ আগামীতে অর্থনৈতিক ভাবে উন্নতি লাভ করবে তার মধ্যে বাংলাদেশ রয়েছে। জেপি মর্গ্যান সিঙ্গাপুর, তুরস্ক, বাংলাদেশসহ ৫টি দেশের কথা বলেছে। আমাদের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করার বাংলাদেশে তথাকথিত জঙ্গী ও সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। তবে তারা সফল হবে না। কারণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষ ও বিচক্ষণ। ভয়ভীতি আতঙ্ক তার মধ্যে নেই। সমস্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঐক্যবদ্ধ। গুলশানে হলি আর্টিজানে উদ্ধার অভিযান চালিয়ে ১৩ জন জীবিত উদ্ধার করেছে যেটা ইতিহাসে বিরল। কল্যানপুরে জঙ্গী তৎপরতা রুখে দিয়েছে।
তোফায়েল বলেন, যারা ২০১৩ সালে জঙ্গী তৎপরতা দেশকে অস্থিতিশীল করে ব্যবসা বাণিজ্যে ক্ষতি করেছিল। ২০১৪ সালে নির্বাচনে অংশ না নিয়ে আগুনে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করেছিল। ২০১৫ সালে ৯৩ দিন আগুন সন্ত্রাস চালিয়ে আমাদের অগ্রযাত্রাকে রুখতে চেয়েছিল তারাই আজকে এ ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে। আমি বিশ^াস করি কোনদিন সন্ত্রাস জঙ্গীবাদ তৎপরতা সফল হয়না। বঙ্গবন্ধু আমাদের ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলতে বলেছিলেন। আমরা সেটা করেছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে ঘরে ঘরে সন্ত্রাস বিরোধী দুর্গ গড়ে তুলছি। কোন কিছুতেই আমাদের এই অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করা যাবেনা। গত কয়েকদিনে বিএনপির কয়েক নেতার বক্তব্যে এটা বোঝা গেছে তারা জঙ্গীবাদের পক্ষে। তারা বলেছে পুলিশের অভিযানে নিহতরা জঙ্গী কিনা সেটা নিয়ে সন্দেহ আছে। ৬৯ এ আসাদ, মতিউর মকবুলদের হত্যা করেছিল সেই মোনায়েম খানের নাতি কেন গুলশানে না থেকে কল্যাণপুরে থাকবেন। নিহতরা কেন গুলশান, সাতক্ষীরায় না থেকে কল্যাণপুরে থাকবে। আপনারা প্রস্তুত থাকবেন। প্রধানমন্ত্রীর গৃহীত পদক্ষেপে বাংলাদেশ শান্তির দেশে রূপান্তরিত হবে। যারা জঙ্গী সন্ত্রাসীদের রক্ষা করতে চায় আড়াল করতে চায় তারা ইতিমধ্যে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে। তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে শূণ্য হয়ে যাবে।
অন্যানের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি শামীম ওসমান, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি সেলিম ওসমান, নারায়ণগঞ্জের সংরক্ষিত নারী এমপি অ্যাডভোকেট হোসনে আরা বেগম বাবলী, এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি আব্দুল মাতলুব আহমাদ, বিকেএমইর প্রথম সহ-সভাপতি মঞ্জুরুল হক, সহসভাপতি আসলাম সানি প্রমুখ। উপস্থিত ছিলেন, বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতউল্লাহ আল মামুন, রপ্তানী উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান মাফরুহা সুলতানা, জেলা প্রশাসক আনিছুর রহমান মিয়া, পুলিশ সুপার ড. খন্দকার মহিদউদ্দিন, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ সচিব ইসরাত হোসেন খান, বাংলাদেশ উইম্যান চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রিজের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সেলিমা আহমেদ, নারায়ণগঞ্জ চেম্বারের এর সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজল, বিকেএমইএ সহ সভাপতি (অর্থ) জিএম ফারুকসহ বিকেএমইএ ও চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রিজসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও শ্রমিক প্রতিনিধিরা।