বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক দলগুলোর পরিকল্পনা সাজানো এবং সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করে দিয়েছে। সংবিধান অনুসারে ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির মধ্যে আগামী নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানে পথ নকশা চূড়ান্ত করছে নতুন নির্বাচন কমিশন। এবারের নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও তীব্র প্রতিদ্বন্ধিতাপূর্ণ হবে ধরে নিয়ে নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক দলগুলো আগাম প্রস্তুতি ও কৌশলের ওপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে ইসলামপন্থী সংগঠনের সমর্থন নেওয়াসহ বিভিন্ন কৌশল দৃশ্যমান হচ্ছে। বিশেষ করে হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সম্পর্ক উন্নয়নের রাজনীতিতে শুরু হয়েছে নতুন মেরুকরণ। হেফাজতের সমর্থন পেতে বিএনপিও কৌশলে পা ফেলছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তার অন্যতম বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি বিএনপিতে চলছে নির্বাচনী প্রস্তুতি। কোন্দল নিরসন করে দল গোছানো, কর্মী সমাবেশ, প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে প্রচারণা, দলের সদস্য বাড়ানোর মতো কর্মসূচিতে ব্যস্ত রয়েছে উভয় দল। বিভিন্ন অনুষ্ঠান কিংবা সভাগুলোতে এখন থেকেই নৌকার পক্ষে ভোট চাইতে শুরু করেছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। দেরিতে হলেও নারায়ণগঞ্জ বিএনপি দল গোছানো থেকে শুরু করে এখন প্রকাশ্যে নির্বাচনী প্রস্তুতির বিষয়টি সামনে আনছে বিএনপিও। আর চলতি সংসদে প্রধান বিরোধী দল এইচ এম এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টিও (জাপা) নতুন জোট গঠন করেছে। এরপর থেকে নারায়ণগঞ্জ জাতীয় পার্টিও একক ভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহন করার ব্যাপারেও প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি।
প্রসঙ্গ, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি। প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করলেও শেষ পর্যন্ত আগামী নির্বাচনে দলটি অংশ নেবে কি না এ নিয়ে এখনো বড় প্রশ্ন রয়ে গেছে। কারণ বিএনপি নেতারা এখনো নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের দাবিতে বক্তব্য-বিবৃতি দিয়ে যাচ্ছেন। তবে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা ও বিএনপির একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতা বলেছেন, দলের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য হলেও বিএনপি আগামী নির্বাচনে যাবে। এদিকে কয়েকযুগ পর বিরতি দিয়ে আওয়ামী লীগ সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু করতে যাচ্ছে। নতুন সদস্য সংগ্রহ অভিযান হিসেবে বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়গুলোতে ফরম বিতরন শুরু করে দিয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের পাশাপাশি বিএনপিও জোট করেই নির্বাচনে অংশ নেবে। এ ক্ষেত্রে জামায়াতবিরোধী ধর্মভিত্তিক ছোট ছোট দল ও কওমিপন্থীদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের কৌশল নিয়েছে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগ। আগামী নির্বাচনে লড়াই কঠিন হবে ধরে নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন কর্মকা-ের চিত্র তুলে ধরার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। নির্বাচনের সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়ে, উন্নয়নের চিত্র জনগণের সামনে তুলে ধরতে দলীয় সংসদ সদস্যদের বারবার নির্দেশ দিচ্ছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে হিসেবে নারায়ণগঞ্জের আওয়ামীলীগের সাংসদদ্বয়রা তাদের নেতাকর্মীদের কাছে পৌছে দিচ্ছেন।
দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনের পর সাংগঠনিক দিক থেকে নাজুক অবস্থায় পড়েছিল বিএনপি। দলের নেতাকর্মীরাই বলছে, সংসদের বাইরেও দলটির কর্মকা- নেতিয়ে পড়েছে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিকদল জামায়াতে ইসলামী। দলটি এরই মধ্যে হারিয়েছে নিবন্ধন। নিবন্ধনহীন কোনো রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। এ কারণে জামায়াত নিয়েও বড় বিপদে আছে বিএনপি। এদিকে আওয়ামী লীগ কৌশলে হেফাজতে ইসলামের সান্নিধ্যে যাওয়ায় বিএনপি নেতারা এখন সংশয়ে আছেন যে আগামী নির্বাচনে তাঁরা হেফাজতের সমর্থন পাবেন কি না। জানা গেছে, বিএনপিও হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে কৌশলে সম্পর্ক উন্নয়নের পরিকল্পনা করছে।
নারায়ণগঞ্জের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কোনো ‘সমঝোতা’ হয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে নারায়ণগঞ্জ জেলা হেফাজতে আমির মাওলানা আবদুল আউয়াল বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে আমাদের সংগঠন অংশ নেবে না। আমরা আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে এটাই দাবি থাকবে যে, ইসলামবিদ্বেষী কাউকে যেন আমাদের কেউ সমর্থন না দেয়। আওয়ামী লীগের সঙ্গে হেফাজতের কোনো সমঝোতা হয়নি বলেও তিনি দাবি করেছেন।
নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল হাই বলেন, একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মোতাবেক আমরা সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছি। প্রাথমিকভাবে আমরা সদস্য সংগ্রহে নেমেছি। বিএনপি জামায়াত জোট সরকার আন্দোলনের নামে জনগনের যানমাল ধ্বংস মহ নীরিহ মানুষকে হত্যার মধ্য দিয়ে দেশকে জঙ্গী রাষ্ট্রে পরিনত করার যে হীন চেষ্টা চালিয়েছে তা সাধারন মানুষের মাঝে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।
নারায়ণগঞ্জ বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি আলহাজ্ব মোহাম্মদ শাহ্ আলম বলেছেন, সুষ্টু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি নিরষ্কুশ ভাবে বিজয় লাভ করবে। আর হেফাজতের বিভিন্ন দাবি নিয়ে আন্দোলন সংগ্রামে বিএনপি সর্বদাই সহযোগিতা করে গেছেন। আর সঠিক সময়ে নারায়ণগঞ্জ হেফাজত সঠিক সিদ্ধান্ত হাতে নিবেন এমনটাই প্রত্যাশা বিএনপি নেতৃবৃন্দের।