বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে আর্ন্তজাতিক সপ্তাহ পালন উপলক্ষে মানবাধিকার সংগঠন অধিকার নারায়ণগঞ্জে মানববন্ধন করেছে। শনিবার বেলা ১১টায় নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। অধিকার নারায়ণগঞ্জ ইউনিটির সমন্বয়ক সাংবাদিক বিল্লাল হোসেন রবিনের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে অন্যানের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, অধিকারের কর্মী এম কবীর ইউ চৌধুরী, এস এম এনামুল হক প্রিন্স, রাজিয়া সুলতানা শিশির, তাওফিকুল ইসলাম দীপু, মো: আশরাফ সিদ্দিকী দুপুর, ছিফায়েত উল্লাহ মাসফি, প্রিয়াঙ্কা রায়, নাদিয়া, সাংবাদিক মঞ্জুরুর আহমেদ অনিক, শিমুল, আফরিন, শামীম আরা রিতা, চিত্তরঞ্জন কটন মিলস উচ্চ বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সদস্য মো: আমিনুল ইসলাম, শিক্ষার্থী আবুল খায়ের, হাসিবসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ প্রমুখ।
মানববন্ধন চলাকালে অধিকারের ঘোষনাপত্র পাঠ করেন অধিকারের নারায়ণগঞ্জ সমন্বয়ক বিল্লাল হোসেন রবিন। ঘোষনা পত্রে বলা হয়,
প্রতি বছর মে মাসের শেষ সপ্তাহে গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গঠিত সংগঠনগুলো সারা বিশ্বে গুমের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সপ্তাহ পালন করে। গুমের বিরুদ্ধে এই সপ্তাহটি ১৯৮১ সালে গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের নিয়ে গড়ে ওঠা ঋঊউঊঋঅগ (ফেডারেশন অফ অ্যাসোসিয়েসন অফ রিলেটিভস অফ ডিসএ্যাপিয়ার্ড ডিটেইনিস) নামের দক্ষিন আমেরিকার একটি সংগঠন প্রথম পালন করা শুরু করে। এরপর থেকেই গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের স্মরণে গণমানুষের সংগঠনগুলো পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সপ্তাহটি পালন করে আসছে।
গত ২৮ মে থেকে বাংলাদেশসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে গুমের বিরুদ্ধে আর্ন্তজাতিক সপ্তাহ পালন শুরু হয়েছে, যা ৪ জুন আজ রোববার পর্যন্ত চলবে। অধিকারএর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মানবাধিকার কর্মীরা ভিকটিম পরিবারগুলোকে সঙ্গে নিয়ে মিছিল-সমাবেশ ও মানববন্ধনের মাধ্যমে গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণ করছে এবং তাঁদেরকে নিজ নিজ পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেবার দাবি জানাচ্ছে।
২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশে গুমের ঘটনা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এই সময়ে অনেকগুলো গুমের ঘটনা ঘটেছে এবং রাজনৈতিক কর্মীরা এর শিকার হয়েছেন, যা এখনও অব্যাহত রয়েছে। আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর অনেকেরই কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। ভিকটিমদের পরিবারগুলোর দাবি, আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাই তাঁদের ধরে নিয়ে গেছে এবং এরপর থেকে তাঁরা গুম হয়েছেন অথবা পরে তাঁদের কারো কারো লাশ পাওয়া গেছে।
অধিকার এর তথ্য অনুযায়ী ২০০৯ সাল থেকে ২০১৭ সালের ৩১ মে পর্যন্ত ৩৭৫ জন গুমের শিকার হয়েছেন। এদের মধ্যে ৪৮ জনের লাশ পাওয়া গেছে, ১৯০ জন জীবিত ফেরত এসেছে অথবা পরবর্তীতে তাঁদেরকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে এবং ১৩৭ জনের এখনো পর্যন্ত খোঁজ পাওয়া জায়নি। উল্লেখ্য, অধিকার তখনই গুমের ঘটনা লিপিবদ্ধ করে, যখন গুম হওয়া ব্যক্তিটির পরিবার এবং প্রত্যক্ষদর্শীরা এই বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে অভিযোগ করেন যে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য পরিচয় দিয়ে গুম হওয়া ব্যক্তিটিকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ।
গুম মৌলিক মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। এটি রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের একটি হাতিয়ার। শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার নামে গুম জনিত অপরাধ মূলতঃ তাঁদের বিরুদ্ধেই প্রয়োগ করা হয়; যাঁদেরকে সরকার শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করেছে। গুম হওয়া ব্যক্তিরা প্রায়শঃই নির্যাতনের শিকার হন এবং তাঁদের জীবন নিয়ে তাঁরা সব সময় ভীত সন্ত্রস্ত থাকেন। তাঁদের এবং তাঁদের পরিবারগুলোকে সব ধরনের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়। এমনকি তাঁরা আইনি সুরক্ষা থেকেও বঞ্চিত থাকেন। গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের স্ত্রী-সন্তানরা আর্থিক ও সামাজিকভাবেও তাঁদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হন।
বাংলাদেশের মানবাধিকার কর্মীদের গণভিত্তিক সংগঠন অধিকার রাজনৈতিক ও নাগরিক অধিকার বাস্তায়নের জন্য বিভিন্ন আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক নেটওয়ার্কের সদস্য হিসেবে বিদ্যমান মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টি বাংলাদেশের জনগণের নাগরিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার রক্ষায় মানবাধিকার পরিস্থিতির পর্যবেক্ষণ ও ডকুমেন্টেশনে নিয়োজিত রয়েছে। এই কাজ করতে যেয়ে অধিকার এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মানবাধিকার কর্মীরা বিভিন্ন ধরনের নিপীড়ন এবং হয়রানীর শিকার হচ্ছেন। সম্প্রতি অধিকারএর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কুষ্টিয়ার মানবাধিকার কর্মী হাসান আলী ও আসলাম আলী ২০ দিন কুষ্টিয়া কারাগারে বন্দি থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।
অধিকার মনে করে সত্যিকারের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এবং সব ধরনের অন্যায়-অবিচারের প্রতিকার করতে বাংলাদেশের জনগণকে সংগঠিত হওয়া এবং প্রতিবাদের ভাষা খুঁজে নেয়া ছাড়া আর কোন বিকল্প নাই। তাই গুমসহ ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিটি মানবাধিকার কর্মীকে দেশের জনগনকে সঙ্গে নিয়ে সোচ্চার হতে হবে।