বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
নারায়ণগঞ্জের শহরের অক্টো অফিস মোড়ে সেই ৭তলা ভবনের নির্মাণ কাজ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। ৭ তলা ভবন থেকে হাতুড়ি পড়ে অল্পের জন্য এক গৃহবধূ ও তার শিশু ছেলে রক্ষা পাওয়ার ঘটনা নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে বুধবার দুপুরে সরেজমিনে ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে যায় ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ। এসময় পুলিশের কাছে ভবনটির ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান রাজউকের কোন অনুমোদন দেখাতে পারেনি। যে কারণে পুলিশ সেই ভবনটির নির্মাণ কাজ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে।
জানা গেছে, ঢাকার উত্তরায় গার্ডার চাপায় প্রাইভেটকারে থাকা ৫ জন নিহতের রেশ কাটতে না কাটতে গত ১৬ আগষ্ট বিকেল পৌনে ৬টার দিকে নারায়ণগঞ্জ শহরের ইসদাইর অক্টো অফিস মোড় এলাকায় ৭ তলা ভবন থেকে হাতুড়ি পড়ে অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছেন এক গৃহবধূ ও তার শিশু ছেলে। নির্মাণাধীন ৭ তলা ভবনটি থেকে হাতুড়ি পড়ে টাইলস ভেঙ্গে যাওয়া ছবি ও যেই মিস্ত্রির হাত থেকে হাঁতুড়ি পড়ে গিয়েছে তার স্বীকারোক্তিমূলক বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। নির্মাণাধীন ভবনটিতে কোন রকম নিরাপত্তা বেষ্টনী ছিল না। এ নিয়ে এলাকার সাধারণ মানুষ চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে।
অল্পের জন্য রক্ষা পাওয়া অক্টোফিস এলাকার গৃহবধূ ইসরাত জাহান ঘটনাস্থল থেকে জানান, সে তার তিন বছরের শিশু বাচ্চাকে নিয়ে ওই নির্মাণাধীন ভবনের নীচ দিয়ে যাচ্ছিল। সেই সময় হঠাৎ তার শিশু সন্তানের প্রায় মাথার সামনে দিয়ে হাতুড়ি ৭ তলা ওপর থেকে পড়ে।
তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আজকে আমার ছেলের কিছু হয় নাই আল্লাহ রক্ষা করেছেন। কিন্তু এদের নির্মাণধীন ভবনে কোন নিরাপত্তা বেষ্টনী ছিল না।
ঘটনাস্থলে গেলে ওই ভবনে কাজ করা মিস্ত্রি জানান, হাতুড়ি দিয়ে কাঠ ছুটাতে গিয়ে হাতুড়িটি হাত ফসকে পড়ে গেছে। এক্ষেত্রে তারা মালিক পাভেলকে বলেছিল কাজ করার সময় একটি নিরাপত্তা বেষ্টনী দিয়ে দিতে। কিন্তু মালিক পাভেল তা আদৌ করেনি।
এ বিষয়ে কাসফা টাওয়ারের ওই এলাকার মুদী দোকানি সেলিম মিয়া জানান, হাতুড়িটি যে টাইলসের সিঁড়িটিতে পড়েছে সেটি অবৈধ সিঁড়ি। সেটি কোন অনুমোদন নেই রাজউকের। এটা সবাই এলাকার জানে। কিন্তু মালিক পাভেল রাজউক এক আত্মীয় পরিচয়ে প্রভাব খাটিয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই কোন নিয়ম না মেনে ওই বাড়িটি নির্মাণ কাজ চালিযে যাচ্ছে। সে ফটুপাত দখল করে সিঁড়ি নির্মাণ করেছে। এটি দেখেও দেখে না কতৃপক্ষ।
এদিকে বুধবার গণমাধ্যমে ৭ তলা ভবন থেকে হাতুড়ি পড়ে অল্পের জন্য এক গৃহবধূ ও তার শিশু ছেলে রক্ষা পাওয়ার ঘটনা নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলে বিষয়টি নজরে আসে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রহিমা আক্তার ঘটনাটি তদন্ত করে দেখার জন্য সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রিফাত ফেরদৌসকে নির্দেশনা দেন। এরপর ইউএনও বিষয়টি ফতুল্লা মডেল থানার ওসি রিজাউল হক দিপুকে জানালে তিনি ঘটনাস্থলে পুলিশের একটি টিম পাঠান। ঘটনাস্থলে যাওয়া ফতুল্লা মডেল থানার এসআই পলাশ জানান, ভবনটির ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান রিলায়েন্স এর মালিক পাভেল জানিয়েছেন ফ্ল্যাট মালিক সেলিম তার ফ্ল্যাট এই কাজ করেছেন। এই কাজের জন্য তারা দায়ী নন। তবে এসময় ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানের মালিক পাভেল রাজউকের কোন কাগজ দেখাতে পারেনি।
ফতুল্লা মডেল থানার ওসি রিজাউল হক দিপু জানান, ভবনটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান রাজউকের কোন কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। যে কারণে আমরা ভবনটির নির্মাণ কাজ বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছি।
উল্লেখ্য, কয়েক মাস আগে শহরের চাষাঢ়া-মিশনপাড়া সংযোগ সড়কে নির্মাণাধীন ১১ তলা ভবন থেকে লোহার শাবল মাথায় পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান সাবেক ফুটবলারের স্ত্রী। সেই ঘটনায় মামলা হলেও এখানে অর্থলোভী অনেক ডেভেলপাররা নিরাপত্তা বেষ্টনী ছাড়াই বেপরোয়াভাবে নির্মাণ কাজ চালাচ্ছেন।