নারায়ণগঞ্জের আলোচিত ৭ খুনে র্যাবের ৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ
অ্যাই ব্যাটা চুপ থাক, আমি যা নির্দেশ দেই তাই কর
নারায়ণগঞ্জ,বিজয় বার্তা ২৪
সাতজনকে অপহরণের পর রাতে জানানো হয় ইঞ্জিন চালিত বোট নিয়ে কাঁচপুর যেতে। নির্দেশ মোতাবেক কাঁচপুর যাই। সেখানে ৭ জনের লাশ উঠানোর সময়ে তিনজনই আতকে উঠি। তখন অফিসারদের বলি, লাশ কেন? স্যার আমাদের তো টহল দেওয়ার কথা। লাশ তো বহনের কথা না। তখন আরিফ হোসেন (র্যাব-১১ এর সাবেক উপ অধিনায়ক ও ইতোমধ্যে অবসরে পাঠানো সেনাবাহিনীর মেজর) বলেন, আই ব্যাটা চুপ থাক। আমি যা নির্দেশ দেই তাই কর। পরে ইঞ্জিন চালিত বোটে করে ৭ জনের মৃতদেহ শীতলক্ষ্যা ও ধলেশ্বরীর মোহনাতে নিয়ে ফেলে আসা হয়। নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুনের ঘটনায় সোমবার নারায়ণগঞ্জ আদালতে র্যাবে কর্মরত ৫জনের স্বাক্ষ্যের মধ্যে লিডিং সি ম্যান আবদুস সামাদ, নায়েক আজম আলী ও আবদুর রাজ্জাক আদালতে স্বাক্ষ্য প্রদানকালে এ তথ্য দেন। সাত খুনের ঘটনার সময় তারা নারায়ণগঞ্জ শহরের পুরাতন কোর্ট এলাকাতে অবস্থিত র্যাব-১১ এর ক্যাম্পে ছিলেন যেটার দায়িত্বে ছিলেন এম এম রানা (র্যাব-১১ এর চাকুরীচুত্য ও অবসরে পাঠানো নৌ বাহিনীর কমা-ার)।
সাক্ষ্য দেওয়া অপর দুইজনের মধ্যে মেজর সুরুজ জানান, তিনি নরসিংদি ক্যাম্পে থাকা সময়ে নারায়ণগঞ্জ ক্যাম্পের কয়েকজন সদস্য গিয়ে খাবারের জন্য দুই হাজার টাকা চেয়ে নেন। পরে তিনি সাত খুনের বিষয়গুলো জানতে পারেন।
র্যাব-১১ এর ডিএডি আবদুস সালাম শিকদার জানান, ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল সকালে তাকে মেজর আরিফ নির্দেশ দেন ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের খান সাহেব ওসমান আলী জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের সামনে চেকপোস্ট বসাতে। দুপুরে ফোন দিয়ে জানান, সাদা ও কালো রঙয়ের দুটি প্রাইভেটকার আটকাতে। দুপুরে ওই দুটি প্রাইভেটকার আটকানোর আগেই মেজর আরিফ হোসেন ও কমা-ার এম এম রানাকে বহন করা দুটি গাড়ি ওই কালো ও সাদা প্রাইভেটকারের সামনে গিয়ে গতিরোধ করে। তখন দুটি গাড়ি হতে সাতজনকে নামিয়ে একটি নীল রঙয়ের হাই এইস গাড়িতে উঠানো হয়।
সোমবার সকাল সাড়ে ৯টা হতে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেনের আদালতে গ্রেপ্তারকৃত নূর হোসেন সহ ২৩ আসামীর উপস্থিতিতে ওই ৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। এ নিয়ে ৬৬ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। শুনানী শেষে আগামী ১৩ জুন পরবতী সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করেছে আদালত।
সাত খুনের ঘটনায় ৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে এ্যাডভোকেট সাখাওয়াত গনমাধ্যমকর্মীদের জানান, এ মামলায় এর আগে যারা ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিয়েছেন তাদের দেয়া তথ্যে সাথে আদালতে আজকের দেয়া র্যাবের ৫ সদস্যের দেয়া তথ্যের মিল রয়েছে। তিনি আশা করেন সাত খুনের নিহতের পরিবারের সদস্যরা সঠিক ও ন্যায্য বিচার পাবেন।
তথ্যানুসারে, সাত খুনের ঘটনায় দুটি মামলা হয়। একটি মামলার বাদী বিজয় কুমার পাল হলেন নিহত অ্যাডভোকেট চন্দন সরকারের মেয়ে জামাতা ও অপর বাদী সেলিনা ইসলাম বিউটি হলেন নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী। দুটি মামলাতেই অভিন্ন সাক্ষী হলো ১২৭জন করে। একারণে উভয় মামলার সাক্ষীদের একই সঙ্গে দুই মামলায় জেরা করা হয়।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, তার বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন ও গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম এবং আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তাঁর গাড়িচালক ইব্রাহীম অপহৃত হন। পরে ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ছয়জনের ও ১ মে একজনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
তদন্ত শেষে প্রায় এক বছর পর গত ৮ এপ্রিল নূর হোসেন, র্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। গত ৮ ফেব্রুয়ারি সাত খুনের দুটি মামলায় নূর হোসেন ও র্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। এ মামলায় নূর হোসেন ও র্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ মোট ২৩ জন কারাগারে আটক রয়েছেন। আর চার্জশিটভুক্ত আসামিদের মধ্যে এখনো ১২ জন পলাতক রয়েছে।