স্টাফ রিপোর্টার,বিজয় বার্তা ২৪
প্রথম ধাপে ৭৩৮ ইউনিয়ন পরিষদে মনোনয়নপত্র দাখিল শেষ হওয়ার পর দেখা গেছে, ২৫টিতে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে চলছেন।
অন্যদিকে আগামী ২২ মার্চ অনুষ্ঠেয় এই ভোটে ৭০টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে দেশের কোনো প্রার্থী নেই অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপির।
প্রার্থী হতে বাধা ও হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে বিএনপির অভিযোগের মধ্যে সোমবার দেশজুড়ে ৭৩৮টি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা নেওয়া শেষ হয়।
স্থানীয় সরকার আইন সংশোধনের পর এবারই প্রথম চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকে ভোট হচ্ছে। সদস্য পদে ভোট আগের মতোই নির্দলীয়ভাবে হচ্ছে।
ইসি থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, ২৫টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাড়া অন্য কোনো দলের প্রার্থী নেই।
ইসির যুগ্মসচিব জেসমিন টুলী বলেন, মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের পর বৈধ প্রার্থীদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় শেষ হলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের নির্বাচিত ঘোষণা করবেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।
তফসিল অনুযায়ী, বাছাইয়ের পর আগামী ২ মার্চ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন।
অর্থাৎ এই ২৫টি ইউনিয়নের বাসিন্দাদের চেয়ারম্যান পদে ভোট দিতে হবে কি না, তা সেদিনই চূড়ান্ত হবে। বাছাই ও প্রত্যাহারের সময় শেষ হওয়ার পর এ সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।
ইসির তথ্যে দেখা যায়, অন্তত তিনটি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী এবং তিনটিতে বিএনপির একাধিক প্রার্থী রয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে হুমকি ও বাধা পেয়ে শতাধিক ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেনি।
কঙবাজারের মহেশখালী উপজেলার কালামারছড়া, খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার যোগীপল এবং কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আলমবাড়ি ইউপিতে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী নৌকা প্রতীক চাইছেন।
অন্যদিকে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কাঠলবাড়ী ও বাঁশকান্দি ইউনিয়ন এবং পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার সুঠিয়াকাঠী ইউনিয়নে ধানের শীষ প্রতীক চাইছেন একাধিক জন।
জেসমিন টুলী বলেন, কোনো দল একাধিক প্রার্থী দিলে সংশ্লিষ্ট দলের সবার মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ার বিধান রয়েছে। এ বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা আইনানুগ ব্যবস্থা নেবেন।
তিনি জানান, প্রথমধাপে ৭৩৮টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ৩ হাজার ৫৬৮ জন। এর মধ্যে ১৬টি দলের ১ হাজার ৯০০ জন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন ১ হাজার ৬৬৮ জন।
নির্বাচন ব্যবস্থাপনা ও সমন্বয় শাখার সহকারী সচিব আশফাকুর রহমান সন্ধ্যায় জানান, আওয়ামী লীগের ৭৪১ জন এবং বিএনপির ৬৬৮ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ২৪৫ জন, জাতীয় পার্টির ৪৮ জন, জাসদের ৩০ জন, বিকল্পধারার ৫ জন, ওয়ার্কার্স পার্টির ২৪ জন, জেপির ২০ জন, বিএনএফের ৭ জন, জেএসডির ১ জন, সিপিবির ৪ জন, তরীকত ফেডারেশনের ১ জন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের ২ জন, কল্যাণ পার্টির ১ জন, ন্যাপের দুজন ও জাকের পার্টির ১ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
যে ২৫ ইউপিতে একক প্রার্থী
ঝালকাঠির নলছিটির উপজেলার নাচনমইল, বাগেরহাটের মংলা উপজেলার সোনাইলতলা, রামপাল উপজেলার মালিকেরবে, চিতলমারীর চরবানিয়ারি, বড়বাড়িয়া, হিজলা, সন্তোষপুর, কলাতলা;
ফকিরহাট, মুলঘর, মোল্লাহাটের আটজুড়ি, কোদালিয়া, কুলিয়া, উদয়পুর, বেমরতা, বিষ্ণুপুর, ডেমা, গোটাপাড়া, যাত্রাপুর, মোড়েলগঞ্জের পঞ্চকরণ;
বরগুনা সদরের বুড়িচর; ভোলা সদরের দক্ষিণ দিঘলদী; মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার কুতুবপুর; মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার জৈনসার এবং সাতক্ষীরা কলারোয়া উপজেলার সোনাবাড়িয়া ইউনিয়ন।
ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, ইউপির মতো নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার নজির খুব কম।
গত পৌর নির্বাচনেও মেয়র ও কাউন্সলর পদে ১৪০টি পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘটনা রয়েছে। দশম সংসদ নির্বাচনে সর্বোচ্চ ১৫৩ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্িবতার রেকর্ড বর্তমান ইসির অধীনে ঘটেছে।
৭০টিতে বিএনপির প্রার্থী নেই
নির্বাচন ব্যবস্থাপনা ও সমন্বয় শাখার সহকারী সচিব আশফাকুর রহমানের তথ্য অনুযায়ী, ৭০টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে বিএনপির কোনো প্রার্থী নেই।
ইউপি ভোট পরিচালনার দায়িত্বে থাকা বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান রবিবার বলেছিলেন, ৭১৮টিতে চেয়ারম্যান পদে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রার্থী হবেন বিএনপি নেতারা। বাকি ২০টি শরিক দলগুলোকে ছেড়ে দিচ্ছে তারা।
২০টি জোটের শরিককে ছেড়ে দেওয়ার পরও অন্তত ৫০টি ইউনিয়নে প্রার্থী নেই বিএনপির।
মঙ্গলবার সকালেই বিএনপির এক সংবাদ সম্মেলনে দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, শতাধিক ইউনিয়নে আমাদের প্রার্থীদের হুমকি দেওয়া হয়েছে এবং তাদের জমা না দেওয়ার ঘটনার কথা আমরা জানতে পেরেছি। এখনো পুরো তথ্য আমাদের কাছে আসেনি।
এই অভিযোগের প্রতিক্রিয়ায় ইসি সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ঢালাও অভিযোগ নয়, স্পেসিফিক অভিযোগ দিতে হবে; কখন, কে, কোথায় এটি করেছে, তা জানাতে হবে। তখন আমরা ব্যবস্থা নেব।
‘অদৃশ্য ব্যক্তির’ বিরুদ্ধে অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া কঠিন বলে মন্তব্য করেন বিএনপির সমালোচনায় থাকা ইসির সচিব।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, কোথাও কাউকে বাধা দেওয়া ও মনোনয়নপত্র জমা না দেওয়ার এমন অভিযোগ এখনও কমিশনে আসেনি।
বিএনপির অভিযোগের বিষয়ে ইসির উপ সচিব রকিব উদ্দিন মণ্ডল বলেন, যেসব অভিযোগ সোমবার পর্যন্ত এসেছিল, সেসব ক্ষেত্রে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে বিএনপির এমন ঢালাও কোনো অভিযোগ আমাদের হাতে আসেনি।
যেসব ইউপিতে বিএনপির প্রার্থী নেই- ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার কুলকাঠি; পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়ার তেলিখালী; বাগেরহাট জেলার মংলার বুড়িরডাঙ্গা, কাড়াপাড়া, কচুয়ার ধোপাখালী, গজালিয়া, কচুয়া, রাড়ীপাড়া, রামপালের গৌরন্বা, রাজনগর; বরগুনা জেলার বদরখালী, ফুলঝুরি, কেউড়াবুনিয়া, আমতলীর কুকুয়া;
লক্ষীপুর জেলার রামগতির চরপোড়াগা; শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ীর বাঘবে-, সাতক্ষীরা জেলার দেবহাটার কুলিয়া, কালীগঞ্জের চম্পাফুল, ধলবাড়িয়া, কৃষ্ণনগর, বৈকারী, কলারোয়ার দেয়াড়া, জুগীখালী, কেরালকাতা;
খুলনা জেলার দাকোপের লাউডোব, কৈলাশগঞ্জ, কামারখোলা, তিলডাঙ্গা, তেরখাদার সাচিয়াদাহ, ছাগলাদাহ, তেরখাদা; গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গীপাড়ার বর্নি, ডুমুরিয়া, গোপালপুর, কুশলী, পাটগাতী; যশোর জেলার মনিরামপুরের হরিহরনগর; ঢাকা জেলার দোহারের নয়াবাড়ী; নেত্রকোণা জেলার খালিয়াজুরীর গাজীপুর; নোয়াখালী জেলার হাতিয়ার চরঈশ্বর, চরকিং।