নারায়ণগঞ্জ,বিজয় বার্তা ২৪
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি হালিম আজাদ বলেছেন, গদফাদাররা ত্বকীকে যেভাবে টর্চার করে হত্যা করেছে তা এই বাংলার মাটিতে মুক্তিযোদ্ধ ছাড়া পাক শাসকেরা কখনো এইভাবে শিশু হত্যা করেনি। হত্যার বিচার জন্য আমরা যেসব সভা করেছি প্রত্যেকটা সভা বন্ধ করতে গদফাদার শামীম ওসমান ও তার ভাই সেলিম ওসমান আমাদের হুমকি দিয়েছে। শুধু তাই নয় তাদের ভাতিজা আজমেরী ওসমানের সন্ত্রাসী বাহিনী রাস্তায় মিছিল করে ত্বকীর বাবার পুতুল পুড়িয়ে তাকে শায়েস্তা করে হত্যার হুমকি দিচ্ছে। এমনকি বিনা ভোটে নির্বাচিত তার চাচা সেলিম ওসমান ডিসি অফিসে সাংবাদিকদের খেয়ে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। ওরা কোথায় নেমেছে। এই হত্যাকরী আজমেরী ওসমান ও তার গদফাদার চাচাদের জায়গা জঙ্গলে হওয়া উচিত।
সন্ত্রাস ণির্মূল মঞ্চের উদ্যোগে শুক্রবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জের ২ নং রেইল এলাকায় তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার ৩ বছর উপলক্ষে সমাবেশ তিনি এসব কথা বলেন।
নিহত ত্বকীর পিতা ও সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহবায়ক রফিউর রাব্বীর সভাপতিত্বে সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের কমিউনিষ্ট পার্টির উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য মঞ্জুরুল আহসান খান,নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি কবি হালিম আজাদ,নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারন সম্পাদক আবদুর রহমান, ন্যাপ নারায়ণগঞ্জ জেলা সভাপতি এ বি সিদ্দিকি, ,দৈনিক খবরের পাতার সম্পাদক মাহবুবর রহমান মাসুম,, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার সাধারন সম্পাদক হিমাংশু সাহা, কমিউনিষ্ট পার্টি নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি হাফিজুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি জিয়াউল ইসলাম কাজল, গন-সংহতি আন্দোলনের নারায়ণগঞ্জ জেলা সমন্বয়ক তরিকুল সুজন, ত্বকী মঞ্চের সদস্য আ্যাডভোকেট আওলাদ হোসেন , বাসদের নারায়ণগঞ্জ জেলা সমন্বয়ক নিখিল দাস।
তিনি আরো বলেন, ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বী দীর্ঘদিন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আন্দোলন করায় তার ছেলে ত্বকীকে হত্যা করা হয়েছে। যখন আজমেরী ওসমানের সহযোগী নির্জন ও ভ্রমরের জবানবন্দী নেয়া হয় তখন তারা বলেছিল আজমেরী ওসমানের নির্দেশে ত্বকীকে গুম করে টর্চার সেলে হত্যা করে নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। এই জবানবন্দীর রিপোর্ট প্রশাসনের কাছে আছে। গত তিনবছরের চার্জশীটে প্রমান হয়েছে আজমেরী ওসমানই এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে।
তিনি আরো বলেন, নারায়ণগঞ্জে একটার পর হত্যা করা হচ্ছে। কিন্তু তার কোন বিচার না হয়ে উল্টো আমাদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী তৎকালীন নারায়ণগঞ্জ ডিসিকে ত্বকীর হত্যার বিচারের জন্য চিঠি পাঠিয়েছিলেন কিন্তু আজও হত্যাকারী আজমেরী ওসমানের বিচার হয়নি। নারয়নগঞ্জের মাটিতে একদিন ত্বকী হত্যার বিচার হবে। কোন হুকার দিয়ে আমাদের থামােনা যাবেনা। বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরে যাবোনা। আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে এই নারায়ণগঞ্জকে শান্তীর নগরী হিসেবে গড়ে তুলবো আমরা।
সমাবেশে বাংলাদেশের কমিউনিষ্ট পার্টির উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য মঞ্জুরুল আহসান খান বলেন, দেশে রাজন এবং রাকীব হত্যার বিচার হয়েছে। কিন্তু তিন বছরেও ত্বকী হত্যার চার্জশীট পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হয়েছে, ৪০ বছর পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে। কিন্তু ত্বকী হত্যার বিচার হচ্ছেনা এর কারনটা কি? ঐ সকল হত্যাকান্ডের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী আন্তরিক ছিল তাই বিচার কাজ হয়েছে। এখন মানুষ কি বলবে যে ত্বকী হত্যাকান্ডের বিচারের ব্যাপারে তার আন্তরিকতা নাই, তাই বিচার হচ্ছেনা ? জনগন জিম্মি হয়ে গেছে মাফিয়া আর গডফাদারদের কাছে। যারা মাদক ব্যাবসা, ভুমিদস্যুতা,চাঁদাবাজী করছে, এরা সরকারের প্রত্যক্ষ প্রশ্রয়ে চলে, সেজন্য সেই গডফাদারদের বিচার হয়না। যেমনি করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করা যায়নি, তেমনি ত্বকী হত্যার বিচারও বন্ধ করা যাবেনা।
ঐক্য ন্যাপের কেন্দ্রীয় সভাপতি পংকজ ভট্টাচার্য্য বলেছেন, কথা ছিল মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে দিয়ে অর্জিত এই রাষ্ট্র শিশুদের জন্য নিরাপদ হবে। কিন্তু শিশু ত্বকীকে গডফাদাররা বাঁচতে দেয়নি। আমরা বলতে চাই এটা গডফাদারদের রাষ্ট্র না, এটা মুক্তিযুদ্ধের রাষ্ট্র। তিন বছর আগে সিন্ডিকেটের হাতে, গডফাদারের হাতে জীবন দিতে হয়েছে ত্বকীকে। সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে, গোষ্ঠিতন্ত্রের বিরুদ্ধে পিতার লড়াইয়ে শিশু ত্বকী জীবন দিয়ে গেল। এ কত বড় আত্মদান তা বলে শেষ করা যাবেনা।
তিনি আরো বলেন, নারায়ণগঞ্জ এখনও জাগ্রত আছে। হত্যাকারীদের কাছে আত্মসমর্পন করে নাই। সিন্ডিকেটের কাছে মাথা নত করে নাই। রাষ্ট্র ত্বকী হত্যার বিচারে এত অনীহা দেখাচ্ছে কেন ? এর জবাব দিতে হবে। ত্বকী হত্যাকান্ডের বিচারের মধ্য দিয়ে আমরা মানবতার বিচার আদায় করে নেব। ত্বকী হত্যার বিচারের দাবীতে চলমান লড়াই নিস্ফল হবেনা।
রফিউর রাব্বি বলেন, দিপনের হত্যার পর দিপনের বাবা বলেছিল ‘আমি দিপনের হত্যার বিচার চাই না’। কিন্তু আমি ত্বকী হত্যার বিচার চাই। শুধু ত্বকী হত্যা না দিপন হত্যার বিচার চাই, অভিজিৎ হত্যার বিচার চাই। ব্যবসায়ী ভুলু হত্যার বিচার, চঞ্চল হত্যার বিচার, আশিক হত্যার বিচার সহ সকল হত্যাকান্ডের বিচার চাই। এ বিচারের আন্দোলন অব্যাহত রাখবো। ঘাতকদের বিরুদ্ধে সকল জনগন এক সঙ্গে আন্দোলন করতে হবে।
বক্তব্য শেষে ত্বকী হত্যার বিচারের দাবিতে শহরে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়।