সয়াবিন তেলের নতুন মূল্য নিয়ে বিক্রেতাদের কারসাজি , ভোক্তার ক্ষোভ
বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
সরকারের নির্দেশনা উপেক্ষা করে খোলা বাজারে পূর্বের মূল্যে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৭৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ লিটার প্রতি ১০ টাকা কমে সয়াবিন তেল বিক্রির নির্দেশনা রয়েছে।এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা।
সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী, ১ মার্চ থেকে বোতলজাত প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ১০ টাকা কমে ১৬৩ বিক্রির নির্দেশনা রয়েছে। তবে ১ মার্চ শুক্রবার ও ২ মার্চ শনিবার ছুটির দিন হওয়ায়, আগের মাল শেষ না হওয়া ও নতুন মাল না আসা সহ নানা কারন দেখিয়ে সরকারের নির্ধারণ করা দামে তেল বিক্রি করছে না বিক্রেতারা।
অন্যদিকে ১০ টাকা কমে সয়াবিন তেল না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন সাধারণ ক্রেতারা। শনিবার সরেজমিনে ডিলার থেকে পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ী থেকে সাধারণ ভোক্তাদের তেল ক্রয় বিক্রয়ে এসব তথ্য জানা যায়।
জানাগেছে, গত ২০ ফেব্রুয়ারি সরকারের পক্ষ থেকে খুচরা বাজারে ঘোষনা আসে ১৭৩ টাকা দামের লিটার তেলের পরিবর্তে ১৬৩ টাকা দামে বিক্রির । আর ৫ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ৮৪৫ টাকা থেকে ৮০০ টাকায় নামার কথা ছিল। সেই সাথে লুজ সয়াবিন তেল লিটার প্রতি ১৫৫ টাকার স্থলে ১৪৯ টাকায় বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু আগের দামের বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। তীর, পুষ্টি, রুপচাঁদা, বসুন্ধরা ও ফ্রেস কোম্পানির বোতলজাত সয়াবিন তেল আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার নিতাইগঞ্জের মা কালী ষ্টোরের মালিক লিটন সাহা। তিনি জানান, তীর সয়াবিন তেলের ডিলার থেকে ১৬৫ দামে এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ক্রয় করেছিলাম। আগে বিক্রি করেছি ১৭৩ টাকায় এখনো বিক্রি করছি একই দামে। আগের দামে কেন নতুন দামে কেন নয়? এমন প্রশ্নের জবাবে দোকানী বলেন, আগে যা মাল কিনেছি সেগুলো সব বিক্রি হয়নি। এই মালগুলো বিক্রি হলে নতুন দামে কম পেলে কম দামে বিক্রি করতে পারবো।
১০ টাকা কমে তেলের দামের সংবাদ পেয়ে দোকানে সয়াবিন তেল কিনতে আসা গোপী দাস বলেন, খবর পেয়েছি তেলের দাম কম কিন্তু দোকানে এসে দেখি তেলের দাম আগের দামই রয়েছে। কোন কিছুর দাম বাড়ার ঘোষনা আসার সাথে সাথেই দোকানদার দাম বাড়িয়ে দেয় । আর দাম কমার ঘোষনা আসলে এত গড়িমসি কেন? অনেকটা ক্ষোভের সুরেই বললেন এই ক্রেতা।
তীর ব্র্যান্ডের তেলের ডিলার মেসার্স মনির ষ্টোরের সত্ত্বাধিকারী মনির হোসেন বলেন, এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল পাইকারী ১৬৮ থেকে ১৬৯ টাকায় বিক্রি করেছি। নতুন দামের ঘোষনা আসছে শুক্রবার । সেদিন তো সব বন্ধ ছিল। আর আজ শনিবারও ব্যাংক বন্ধ ছিল। তাই আগের মাল আগের দামেই বিক্রি করছি। তবে আগামীকাল রবিবার কোম্পানি থেকে নতুন দামে মাল দেওয়ার কথা রয়েছে। ১০ টাকা কম দামে আসলে ১০ টাকা কমে বিক্রি করতে পারবো।
নাম প্রকাশ করতে অনিইচ্ছুক এক বিক্রেতা বলেন, কোম্পানি থেকে ডিলার মাল ক্টক করে রাখে। আর কোম্পানিও দাম কমলে আস্তে আস্তে কমায়। অন্যদিকে দাম বাড়লে কোম্পানি আর ডিলার দুজনে এক দিনের মধ্যে দাম বাড়িয়ে দেয়। ওনাদের কাছে থেকে যা আমাদের পাইকারী ব্যবসায়ীদের বেশী দামে কিনতে হয়। খুচরা ব্যবসায়ীরাও এই সুযোগে সাধারণ ক্রেতাদের কাছে থেকে বেশী দামে মাল বিক্রি করে ফায়দা নেয়।
দিগুরবাবুর বাজারের টুটুল জেনারেল স্টোরের দোকানী দুলাল বলেন, ডিলার কাছে বসুন্ধরা প্রতি লিটার ক্রয় করেছি ১৬৮ টাকায় আর বিক্রি করছি ১৭০ টাকায়। পাঁচ লিটার তেল কিনেছি ৭৯০ টাকায় আর বিক্রি করছি ৮০০ টাকায়। তীর লিটার প্রতি ক্রয় করেছি ১৬৮ টাকায় এবং বিক্রি করছি ১৭০ থেকে ১৭২ টাকায়। লিটারে দুই টাকা চার টাকা এবং পাঁচ লিটারে ৫-১০ টাকা লাভ না করলে খামো কি?ডিলার এখনো নতুন দামে মাল দেয়নি তাই আগের দামেই মাল বিক্রি করতে হচ্ছে।
কথা হয় নগরীর দিগুরবাজার, কালীরবাজার ও নিতাইগঞ্জ এলাকার কয়েকজন সাধারণ ক্রেতার সাথে। তারা জানান, ১৭৩ টাকা লিটার তেলের মূল্যই রয়ে গেল। ১০ টাকা কম মূল্যের নির্দেশনা কেউই তো এখনো মানছেনা। তাহলে কি বানিজ্য মন্ত্রনালয় সেন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের কাছে ব্যর্থ? তেল নিয়ে কারসাজি আর কত। আমরা সাধারণ ভোক্তারা স্বাভাবিক দামেই তেল সহ নিত্য প্রয়োজনীয় পন্য ক্রয় করতে চাই।
ফায়ার ঘাট এলাকার উৎপাদনকারী প্রতিষ্টান পুষ্টির ডিলার নিউ একে ট্রেডার্স এর ম্যানেজার পবন বলেন, আজকে শনিবার লিটার প্রতি ১৬৯ টাকায় এবং পাঁচ লিটার ৭৭০ টাকায় পাইকারের কাছে বিক্রি করেছি। কোম্পানি থেকে ক্রয় মূল্যের পর কত টাকা লাভে তেল বিক্রি করছেন? এই প্রশ্নটি এড়িয়ে যান তিনি। নতুন দামে না বিক্রি করে আগের দামে কেন বিক্রি করছেন? কোম্পানি নতুন দামে মাল দেয় নাই। কোম্পানি মাল দিলে নতুন দামে বিক্রি করতে পারবো।
পুষ্টি তেলের পাইকারী বিক্রেতা আর কে দাস রোডের ইমরান স্টোর এর মালিক ইমরান হোসেন বলেন, পুষ্টি তেলের ডিলার আমাদের পাইকারদের কাছে এখনো নতুন দামে তেল দেয়নি এবং পাইনি। তাই নতুন দামে ১০ টাকা মূল্যে বিক্রি করতে পারচ্ছি না।
ফ্রেস সয়াবিন তেলের পাইকারী দোকান মেসার্স আজমেরী ট্রেডিং এর মালিক শাহাদাৎ বলেন, পুষ্টি ও ফ্রেস তেল লিটার প্রতি ১৬২ থেকে ১৬৫ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। সেই সাথে পাঁচ লিটার বোতলজাত সয়াবিন ৭৭০ থেকে ৭৮০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। আগের কিনা মাল আগের দামেই তাই বিক্রি করছি। আশা করা যায় আগামী ২/১ দিনের মধ্যে স্বাভাবিক দামে কিনতে পারবো এবং বিক্রয়ও এই দামে করতে পারবো।
সাদিক স্টোর এর মালিক রাকিব হোসেন বলেন, খোলা সয়াবিন তেল প্রতি লিটার আগের দামেই ১৫৫ টাকায় বিক্রি করছি। নির্ধারিত কম মূল্যে পেলে কম মূল্যে বিক্রি করতে পারবো।
তবে একেবারে ভিন্ন কথা বলছে সয়াবিন তেল উৎপাদনকারী একাধিক প্রতিষ্টান। এসব প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে, সরকারী নির্দেশনা অনুযায়ী ১ মার্চ থেকে ১০ টাকা কম মূল্যে বোতলজাত সয়াবিন তেল উৎপাদন ও সরবরাহ শুরু হয়েছে। ২ মার্চ নারায়েণগঞ্জের রুপগঞ্জে বিভিন্ন তেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে মনিটরিং করেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের টিম। এ সময় প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ এ কথা জানান।