এম.এ মাসউদ বাদল,বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
বাংলাদেশে নির্বাচন এলে এক শ্রেণীর ভূইফোর সমাজ সেবক জনদরদীর আবির্ভাব ঘটে। নানা ধরনের শ্লোগান শোনা যায়- অমুক ভাইয়ের চরিত্র ফুলের মত পবিত্র। তমুক ভাই … ইত্যাদি ইত্যাদি।
মজার বিষয় হল এই ফুলের মত চরিত্রবান জনদরদী সমাজ সেবকগণদেরকে কস্মীন কালেও সাধারণ মানুষের আশে-পাশে দেখা যায় না। বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে বিপরীতমুখী, সমাজ বিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত থাকেন অনেকে। নির্বাচন এলেই বোল পাল্টে রাতারাতি জনদরদী ও সমাজ সেবক বনেযাওটা ওপেন সিক্রেট হওয়া স্বত্ত্বেও দেশের সহজ-সরল খেটে খাওয়া মানুষগুলো সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হিমসীম খায়। সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার পেছনে যে বিষয়গুলো কাজ করে তার মধ্যে অন্যতম কালোটাকা ও রাজনৈতিক ধান্দা।
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রথম বারের মতো রাজনৈতিক দলগুলো দলীয় প্রতীক প্রদানের ফলে কতিপয় অসাধু রাজনৈতিক ব্যক্তি নিজের নাক কেটে অন্যের যাত্রা ভঙ্গকরার নোংরা খেলায় জড়িয়ে পরেন। দুঃখজনক বিষয় হলেও সত্য যে, ঐসব নেতাদের অনুগামীরা বুঝে হোক বা না বুঝে হোক নেতার আনুগত্য প্রকাশ করার মাধ্যমে নিজেদের পায়েই কুঠারাঘাত করছেন। স্থানীয় নির্বাচনে প্রতীকের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া এক ধরনের নোংরামী ছাড়া কিছুই না। জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয় দল ভিত্তিক, যে দল ভাল কাজ করবে বলে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা থাকে, তারা ঐ দলের প্রতীককে ভোট দেয়। অপরদিকে যারা দল কানা তারা ভাল-মন্দ বিবেচনা করে না। তাদের ভাবনা একটাই আমাদের দল ক্ষমতায় গেলে লুটেপুটে খাব। স্থানীয় নির্বাচনের বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিন্ন। এখানে দল নয় ব্যক্তিই প্রাধান্য পায়, কারণ দলকানা ধান্দাবাজদের দ্বারা তাদের কিছু নেতা-কর্মী লাভবান হতে পারে কিন্তু এলাকার কোন উন্নয়ন হয় না। দলকানা নেতারা তাদের নেতা-কর্মীদের সুযোগ-সুবিধা প্রদান করতে গিয়ে উন্নয়নের কথা ভুলে যান বিধায় আমাদেরকে স্মরণ রাখতে হবে “স্থানীয় নির্বাচনে দলের চাইতে ব্যক্তির গুরুত্ব অনেক বেশি”।
সে হিসাবে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর কোন বিকল্প আছে বলেতো মনে হয় না। বিগত ৫ বছরে ডা. আইভীর কর্মকান্ডই তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। একজন মহিলা তার প্রতিপক্ষের সাথে যেভাবে লড়াই করে অদম্য শক্তি নিয়ে সিটি কর্পোরেশন এলাকার অবকাঠামোর উন্নয়ন করেছেন, সারা বাংলাদেশেও তারমত একজন সৎসাহসী পুরুষ লোক খুঁজে পাওয়া দুরহ। যেমন এক সময়ে ফেনীর জয়নাল হাজারীর বিরুদ্ধে কথা বলার মত কোন লোক ছিল না।
ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী নগরের উন্নয়নের পাশাপাশি তার সৎ সাহসীকতা দিয়ে যে পরিচয় তুলে ধরেছেন তাতে নারায়ণগঞ্জের সচেতন মহল বিভিন্ন সভা-সমাবেশে তার প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন। ৬ ডিসেম্বর কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার এনসিসির ২৭ নং ওয়ার্ডের যুব দলের নেতা কর্মীদেরকে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী এড. সাখাওয়াত হোসেন খানের পক্ষে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন, অথচ ৩ ডিসেম্বর টেলিভিশন টকশোতে বিএনপি নেতা তৈমুর আলম খন্দকারকে টেলিভিশনের উপস্থাপক প্রশ্ন করেছিলেন, “বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া আপনাকে এনসিসির মেয়র পদে নির্বাচন করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন, সে প্রস্তাব আপনি গ্রহণ করলেন না কেন? উত্তরে তৈমুর আলম খন্দকার বলেন, বিএনপির টিকেটে মেয়র হলেও কাজ করার কোন সুযোগ নেই, যাই দু-একজন যৎসামান্য করছে তাও ক্ষমতাসীনদের পা চেটে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছেন। আমার পক্ষে কারো পা চাটা সম্ভব হবে না বলে নির্বাচনে যাইনি।” এমতাবস্থায় খন্দকার খোরশেদ আলমকে নিয়ে বোদ্ধা মহলের প্রশ্ন উঠেছে যে, আমের চাইতে আটি বড় হলে যে অবস্থা খোরশেদ আলমের হয়েছে সে অবস্থা। ওয়াকিব হাল মহলের ধারণা এড. সাখাওয়াত হোসেন খানও নির্বাচিত হলে পা চাটার কাজটি করতে পারবেন না। তাতে ফলাফল কি দাঁড়াল? এড. খান যদি নির্বাচিত হন তার দ্বারা কোন প্রকার উন্নয়ন করা সম্ভব হবে না। কারণ তিনি নিজেকে সামলাতেই ৫টি বছর কেটে যাবে। ফলে ৫টি বছর নগর বাসী উন্নয়ন কর্মকান্ড থেকে বঞ্চিত হবে। কারো পা না চেটে নিজেকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার নজীর স্থাপন করেছেন বাংলাদেশের একমাত্র প্রথম মহিলা মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। সুতরাং সবকিছুর বিচার বিশ্লেষণ করেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, “ভোট দেব কাকে”? -(রাজনীতি বিশ্লেষক ও কলামিষ্ট)