বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলায় মামুন মিয়া নামে এক অটোরিকশা চালককে মুক্তিপণ দাবিতে অপহরণের পরে হত্যায় জড়িত ছিল তারই বন্ধু সোনারগাঁয়ের উত্তর পাড়ার মাসুদ রানা। হত্যাকাণ্ডের পরে গ্রেফতার হয়ে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলেও এরপর জামিনে বের হয়ে দীর্ঘ ১০ বছর ধরেই পলাতক ছিল মাসুদ রানা। তার অনুপস্থিতিতেই সম্প্রতি ওই হত্যা মামলায় তাকে ফাঁসির দণ্ড দিয়েছেন আদালত।
অবশেষে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মাসুদ রানাকে মঙ্গলবার রাতে ডিএমপি কামরাঙ্গীরচর থানার পশ্চিম নবীনগর এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১১ এর একটি দল। গ্রেফতার মাসুদ রানা সোনারগাঁ থানার বাঘরী উত্তরপাড়া এলাকার আবুল হাসেমের ছেলে।
বুধবার বিকেলে র্যাব-১১ এর সিনিয়র এএসপি ও মিডিয়া অফিসার মো. রিজওয়ান সাঈদ জিকু এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, ২০১২ সালের ৮ জুলাই বিকেলে সিএনজি নিয়ে বের হন মামুন মিয়া। রাতে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। পরে খবর আসে তাকে অপহরণ করা হয়েছে। তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। পরে অপহৃতের পরিবার অনুনয়-বিনয় করলে মুক্তিপণ এক লাখ ৩০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়। অপহৃতের পরিবারকে মুক্তিপণের এক লাখ ৩০ হাজার টাকা নিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পাঠানটুলী এলাকার একটি নির্মাণাধীন বাড়ির নিচ তলায় নিয়ে রাখতে বলে। মুক্তিপণের টাকা পেলে অপহৃতকে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে মুঠোফোনে প্রতিশ্রুতি দেয় অপহরণকারীরা।
এ বিষয়টি সোনারগাঁ থানা-পুলিশকে জানিয়ে এক লাখ ৩০ হাজার টাকা কথা মতো ওই স্থানে রেখে আসে অপহৃতের পরিবার। পরে অপহরণকারী চক্র উল্লেখিত স্থান থেকে টাকা নিতে আসলে পুলিশ ৩ আসামিকে আটক করে। অন্যান্য আসামিরা পালিয়ে যায়।
আটক আসামিরা জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, গত ২০১২ সালের ৮ জুলাই রাত ৯টার দিকে হাতুপাড়া হতে সিএনজি গাড়িসহ মামুনকে অপহরণ করে। পরে পুলিশ ভিকটিম মামুনকে ও গাড়িটি উদ্ধারের জন্য আটক আসামিদের নিয়ে অভিযান পরিচালনা করে ভিকটিম অটোরিকশা চালক মামুন মিয়াকে হত্যার কথা জানতে পারে। পরবর্তীতে সোনারগাঁ থানা-পুলিশ তদন্তে সন্দিগ্ধ বন্দর থানার শ্রীরামপুরের মো. গাফফার ও সোনারগাঁয়ের উত্তর পাড়ার মাসুদ রানা ওরফে মাসুদকে গ্রেফতার করে তাদের দেখানো মতে সোনারগাঁ থানার কাজীপাড়া কবরস্থান সংলগ্ন একটি পুকুর হতে অপহৃত সিএনজি চালক মামুন মিয়ার ছিন্নভিন্ন হাড়গোড়, মাথার খুলি, ব্যবহৃত জুতা ও জামা উদ্ধার করে। পরে গ্রেফতাররা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
পরবর্তীতে আসামিরা জামিনে বের হয়ে আআত্মগোপনে চলে যায়। ২০২৩ সালের ২৫ জুন নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত দায়রা জজ ১ম আদালতের বিচারক উম্মে সরাবন তহুরা দুইজন অপহরণকারীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার রায় ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে প্রত্যেককে এক লাখ টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরো এক বছরের কারাদণ্ড দেন। এছাড়া আরেকটি ধারায় দুজনের সাত বছরের কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরো ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়।
গ্রেফতার আসামিকে পরবর্তী আইন অনুযায়ী কার্যক্রমের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাব।