বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার রাইজদিয়া এলাকায় পুলিশ কনস্টেবল আরিফুল ইসলামকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় পুলিশ বাদি হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। দায়িত্ব অবহেলা ও অপেশাদারীত্বের কারনে ওই সহকারী উপ-পরিদর্শক এএসআই ফখরুল ইসলামকে সাময়িক ভাবে চাকরী থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। হত্যা কান্ডের ঘটনা তদন্ত করার জন্য তিন সদস্য বিশিষ্ঠ কমিটি গঠন করা হয়েছে। এদিকে এ ঘটনার পর থেকে গ্রেফতারের ভয়ে কয়েটি গ্রামে পুরুষ শুন্য হয়ে পরেছে। যে কোন ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলায় এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে নিহত ব্যবসায়ী আব্দুল মতিনের বাড়িতে সরেজমিনে গিয়ে দেখাযায় তার বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। তার (মতিনের) অকাল মৃত্যু কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছেনা তার পরিবার। নিহত আব্দুল মতিনের বড় মেয়ে শিউলী আক্তার জানান, আমার বাবা দীর্ঘ দিন ধরে পানাম নগরীর আদমপুর বাজারে পান সুপারীর ব্যবসা করতেন। বিনা অপরাধে আমার বাবাকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা এর সঠিক বিচার চাই। মেঝো মেয়ে মিতু আক্তর ও ছোট মেয়ে বিথী আক্তার বলেন, আমার বাবাকে হত্যার পর থেকে আতী¡য়-স্বজনেরা পুলিশী গ্রেফতারের ভয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। আমাদেরকে একটু দেখে শান্তনা দিতেও আসতে পারছেনা। আমরা আমার বাবার হত্যার বিচার সঠিক ভাবে পাবো কিনা তাও যানি না। রাইজদিয়া গ্রামের বাসিন্দা আমান উল্লা বলেন, রাইজদিয়া, নয়ামাটি, নোওয়াইল ও বালুয়াদিঘীরপাড় সহ আসপাশের প্রায় ১০ গ্রামের পুরুষ শূন্য হয়ে পরেছে। এলাকায় বিভিন্ন লোকের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, নিহত আব্দুল মতিনের ৫ ভাইয়ের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। বড় ভাই লতিফ মিয়া, মেঝো ভাই বাতেন মিয়া, সেঝো ভাই দাইয়ান মিয়া, ছোট ভাই দিলীপ মিয়া। তারা সবাই স্থানীয় বাজারে ব্যবসা করে জিবীকা নির্বাহ করে। তারা কোন রকমের মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত নয়। তারা জানান, এএসআই ফখরুল ইসলাম সাদা পোশাকে সাধারণ মানুষকে গ্রেফতারের ভয় দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা আদায় করতো।
সোনারগাঁ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সোহেব মিয়া গতকাল দুপুরে সাংবাদিকদের জানান, এএসআই ফকরুল ইসলামের বিরুদ্ধে এলাকায় অবাদে বিচরন, সাধারণ মানুষকে হয়রানী সহ বিভিন্ন অভিযোগে তাকে অন্যত্র বদলির জন্য এক সপ্তাহ পূর্বে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপারের বরাবর লিখিত ভাবে জানানো হয়েছিল।
থানা সূত্রে জানাযায়, ঢাকা অঞ্চলের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মাহাবুব আলমের নির্দেশে পুলিশ কনস্টেবল আরিফুল ইসলাম ও ব্যবসায়ী আব্দুল মতিন মিয়া হত্যাকান্ডের বিষয়ে সুষ্ঠ তদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মতিয়ার রহমানকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বুধবার রাতেই থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আল আমিন তালুকদার বাদী হয়ে ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত ৩০/৩৫ জনকে আসামী করে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে।
কর্তব্য ও দায়িত্বে অবহেলা ও অপেশাদারীত্বের কারনে এএসআই ফখরুল ইসলামকে সাময়িক ভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ময়না তদন্ত শেষে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ লাইনে জানাযা শেষে পুলিশ কনস্টেবল আরিফুল ইসলামের লাশ মানিকগঞ্জ জেলার সুসন্ধ্যা গ্রামে ও ব্যবসায়ী আব্দুল মতিন মিয়ার লাশ উপজেলার সোনারগাঁ পৌরসভার রাইজদিয়া গ্রামে পাঠানো হয়েছে।
সোনারগাঁ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) এস এম ওবায়েদুল হক জানান, উপজেলা বিভিন্ন এলাকায় মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালনা করার সময় মাদক সেবী আব্দুল মতিনকে গ্রেফতার করার সময় তিনি পানিতে ডুবে নিহত হয়। মতিনের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পরলে এলাকাবাসী একত্রিত হয়ে হামলা চালিয়ে ও পিটিয়ে কনস্টেবল আরিফুল ইসলামকে হত্যা করে। এলাকার পরিস্তিতি নিয়ন্ত্রনে রাখেতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
ময়না তদন্ত শেষে নিহত কনস্টেবল আরিফুল ইসলাম ও ব্যবসায়ী আব্দুল মতিনের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সোনারগাঁ থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) মঞ্জুর কাদের।
নারায়ণগঞ্জের সদ্য যোগদানকারী পুলিশ সুপার (এসপি) মইনুল হক বলেন, দায়িত্বে অবহেলার কারনে এএসআই ফখরুল ইসলামকে সাময়িক ভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য ৩ সদস্য বিশিষ্ঠ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, সোনারগাঁ পৌরসভার রাইজদিয়া এলাকায় বুধবার বিকেলে এক পান ব্যবসায়ীকে মাদক বিক্রেতা আখ্যা দিয়ে ধরতে গিয়ে ওই ব্যবসায়ী পানিতে ডুবে ও এলাকাবাসীর গণধোলাইয়ে পুলিশের এক কনস্টেবলের মৃত্যু হয়েছে। নিহত পান ব্যবসায়ীর নাম আব্দুল মতিন ও পুলিশ কনস্টেবলের নাম আরিফুল ইসলাম আরিফ।