বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
নারায়ণগঞ্জের অসহায় সুবিধা বঞ্চিত শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যাংক হিসাব খোলার ঘোষাণ দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৫ (শহর ও বন্দর) আসনের সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমান। এজন্য তিনি নারায়ণগঞ্জের বিত্তবান, গৃহিনী সহ সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতার আহবান জানান। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দাবীর পরিপ্রেক্ষিতে স্কুলটির সার্বিক নিরাপত্তায় নিজ অর্থায়নে ভেতরে এবং বাইরে সিসি টিভি ক্যামেরা স্থাপন, শ্রেনীকক্ষের পুরনো বেঞ্চ বদলে শিক্ষার্থীদের বসার নতুন টুল টেবিল এবং ৫০টি কম্পিউটার দিয়ে একটি কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। পাশাপাশি যেহেতু স্কুলটি নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন এলাকায় অবস্থিত তাই স্থানীয় সংসদ সদস্যের সহযোগীতায় স্কুলের অডিটরিয়ামটি সংস্কার অথবা নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ীদের সহযোগীতায় অডিটরিয়ামটি আধুনিক করে দেওয়ার জন্য নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কর্মাস এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজল এর সহযোগীতা কামনা করেন।
শুক্রবার বিকাল ৪টায় নারায়ণগঞ্জ শহরের মাসদাইর এলাকার নারায়ণগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের (গভমেন্ট গালস্ স্কুল নামে পরিচিত) ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে ২ দিন ব্যাপী সুর্বন জয়ন্তি উৎসবের প্রথম দিনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সুর্বন জয়ন্তি উদযাপনে আর্থিকভাবে সার্বিক সহযোগীতা করেছেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান এবং তার সহ ধর্মিনী মিসেস নাসরিন ওসমান।
সেলিম ওসমান নারায়ণগঞ্জবাসীর কাছে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘আমরা যদি সবাই সম্মেলিত ভাবে কিছু করতে পারি। তাহলে আমাদের নারায়ণগঞ্জ থেকে অনেক ভালো ভালো মানুষের উপত্তি হবে। যার জন্য আমার প্রচেষ্টা। এ প্রচেষ্টার জন্য আপনাদের সহযোগিতা চাই। আমাদের বাচ্চা স্কুলে গিয়ে পড়াশোনা করতে পারে না। আমাদের স্কুল গুলোতে বিজ্ঞানাগার নেই। কম্পিউটার ল্যাব নেই। এরকম দুঃখজন ব্যাপার গুলো দেখতে পাই তখন চিন্তা ভাবনা করি আমরা নতুন নতুন স্কুল তৈরি করবো। আমার সাতটি স্কুলে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার ছাত্র ছাত্রী আছে। সরকার বই দিচ্ছে, মানবতা করছে, টিচার গুলোর বেতন দিচ্ছেন, উপবৃত্তি দিচ্ছেন। তারপরও আমার বাচ্চারা ঠিক মতো পড়ালেখা করতে পারে না, খেতে পারে না। কতো গুলো ছেলে স্কুলের পয়সা জোগাড় করতে পারে না। একটা বাচ্চাকে সর্বনিম্ন ১৫০ থেকে ২০০ টাকা বেতন দিতে হয়। আমি একটা স্কুলের দুই বছরের দায়িত্ব নিয়েছি সেখানে প্রায় ১৪শ ছাত্র ছাত্রী আছে। যাদের পড়ালেখার কোন খরচ দিতে হবে না। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে দেখেছি এ ধরনের বাচ্চারা যারা আছে তারা সম্মান নিয়ে পড়াশোনা করে এবং যারা উচ্চ ঘরে বসবাস করছেন তারা অন্তত্য একজন করে বাচ্চার দায়িত্ব নেন। একজন করে বাচ্চার দায়িত্ব নিতে মাসে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা অথবা ১৫০ থেকে ২০০ টাকার প্রয়োজন হয়। আমি আগামী মাসে একটা ব্যাংক একাউন্ট খোলবো। যেখানে অসহায় বাচ্চারা যাতে লেখাপড়া করতে পারে। তারা যেন বিজ্ঞানাগার পায়। তারা যেন নারায়ণগঞ্জের মুখ উজ্জল করতে পারে। এখন নারী নেতৃত্ব চলছে। আগামীতে নারী নেতৃত্ব যেন নারায়ণগঞ্জ থেকে আসে।
নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান তার বক্তব্যে স্কুলের বর্তমান শিক্ষার্থীদের সাফল্য কামনা করেন। এছাড়াও তিনি সঞ্চালকের অনুরোধে দুই লাইনে একটি গান গেয়ে শুনিয়ে মঞ্চ ত্যাগ করেন।
মিসেস নাসরিন ওসমান বলেন, সবাই আনন্দ উপভোগ করবো। এতো বড় অনুষ্ঠান করতে গেলে একটু মান অভিমান হতেই পারে। আজকে একটা কথাই মনে পড়ছে। আমাদের সময়কার শিক্ষক শিক্ষিকাদের কথা । আমাদের সময়সাময়িক বন্ধুরা বান্ধবীরা। এরা সবাই কোথায় হারিয়ে গেছে আমি জানি না। তাদের সবার কথা মনে পড়ছে। মনে পড়ছে সেই সময়কার দারোয়ারন ভাইদের কথা। এখানে সায়েব আলী নামের একজন মুড়ি বিক্রি করতেন। এই মাঠে দাড়িয়ে মনে পড়ছে মুসলিমা আপার কথা। মনে হচ্ছে মুসলিমা আপা এখনই আমাদের লেফট-রাইট করাবে। অনেক স্মৃতি এই স্কুলের সাথে জড়িয়ে আছে। যার জন্য গানটি গাইতে গিয়ে আমি মনে মনে ব্যথিত হয়ে যাচ্ছিলাম। সবাইকে আমার দেখতে ইচ্ছা করে। আমি আপনাদের সবার জন্য থাকতে চাই। আমাদের মেয়েদের জন্য সবাই দোয়া করবেন। অনুষ্ঠানটির জন্য মুক্তি আমার সাথে সার্বক্ষনিক যোগাযোগ করেছেন। এছাড়াও যারা আজকের অনুষ্ঠানটি আয়োজনে সহযোগীতা করেছেন তাদের সবাইকে আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
জেলা প্রশাসক রাব্বি মিয়াকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে অনুষ্ঠানের সম্মান আরো বাড়িয়ে দিয়েছেন। স্কুলের বড় আপা আমাকে খুব অনুপ্রাণিত করেছেন। স্কুলের সকল শিক্ষক-শিক্ষিকা আমি সবাইকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি। আপনারা সবাই শেষ পর্যন্ত থেকে অনুষ্ঠানটিকে সার্থক করবেন। আপনারা ওদেরকে উৎসাহিত করবেন। আপনাদের উৎসাহ না পেলে অনুষ্ঠান সার্থক হবে না।
মিসেস সালমা ওসমান বলেন, যেদিকে চোখ যাচ্ছে মনে হচ্ছে ফুলে বাগান, মনে হচ্ছে আজকে সবাই শৈশবকে খুঁজে পেয়েছে। যা অত্যন্ত মূল্যবান। এমন মিলনমেলা যেন সব সময় চলে। এ সময়টা যেন কেউ মিস না করে। যখন জীবন যুদ্ধে ক্লান্ত তখন এই মিলন মেলা আমাদের নতুন করে উজ্জীবিত করে। এই মিলন মেলায় যেন সবাই ছোট বেলায় ফেরত গিয়েছে। ছোট বেলার স্মৃতির সাথে যেন আজকের স্মৃতি মিলে মিশে এলাকার হয়ে যায়।
নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক রাব্বি মিয়া তার বক্তব্যে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের প্রশংসা করে বলেন, কিভাবে মানুষের মনোযোগ আকর্ষন করতে হয়। কিভাবে মানুষকে আকৃষ্ট করতে হয় তা আমি সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের কাছ থেকে শিখেছি। আমার কাছে মনে হচ্ছে আজকে যারা আপনারা এখানে এসেছেন অনেক দিন পর আপনারা আপনাদের সহপাঠিদের সাথে দেখা করছেন। কথা বলছেন সেলফি তুলছেন। অনেক স্বপ্ন আপনারা দেখেছিলেন যেগুলো বাস্তবায়িত হয়েছে অনেক গুলো আবার বাস্তবায়িত হয়নি সেগুলো নিয়ে আলোচনা করছেন।
আজকের অনুষ্ঠানটি সার্থক করার জন্য নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কর্মাস এবং বিকেএমইএ এর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
তিনি আরো বলেন, আজকের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে আমার মনে হচ্ছে আমি যে স্কুলে পড়ালেখা করেছি সেই স্কুলের কোন পূর্ণ মিলনী অনুষ্ঠানে আমার যাওয়া হয় না কাজের জন্য। আজকের অনুষ্ঠানে আপনাদের উপস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে আপনারা খুব উপভোগ করছেন। শিক্ষকদের প্রতি আমার অনুরোধ যারা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন আপনারা তাদেরকে সহযোগীতা করবেন। স্কুলটি সরকারী হওয়ায় এই স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি আমি নিজে। সরকারী প্রতিষ্ঠানে বেসরকারীভাবে সহযোগীতা নিয়ে কাজ করা খুব কঠিন ব্যাপার। তবুও আমি চেষ্টা করবো আগামী মাসের মধ্যে এই স্কুলে শিক্ষার্থীদের জন্য একটি মুক্ত মঞ্চ তৈরি করার। যেখানে এই স্কুলের শিক্ষার্থীরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য চর্চা চালিয়ে যেতে পারবেন।
স্কুলটির প্রধান শিক্ষিকা রেবেকা সুলতানার সঞ্চালনায় আরো উপস্থিত ছিলেন সেলিম ওসমানের সহধর্মিনী ও স্কুলের প্রাক্তণ ছাত্রী নাসরিন ওসমান, নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান, তার তারই সহধর্মিনী ও বাংলাদেশ মহিলা সংস্থার নারায়ণগঞ্জ জেলার চেয়ারম্যান সালমা ওসমান লিপি, নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক রাব্বি মিয়া, নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এর সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ রাইফেল ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক খালেদ হায়দার খান কাজল, বিকেএমইএ এর সহ সভাপতি(অর্থ) জিএম ফারুক, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শওকত হাসেম শকু, তার সহধর্মিনী দিপা হাসেম প্রমুখ।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন দেশের জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ। সংঙ্গীতানুষ্ঠান শেষে স্কুলটির প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের অংশ গ্রহনে চমকপ্রদ ফ্যাশন শো অনুষ্ঠিত হয়।