নারায়ণগঞ্জ,বিজয় বার্তা ২৪
শুক্রবার বিকাল ৩টায় নারায়ণগঞ্জ চাষাড়া শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি সিপিবি’র ৬৮তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষ্যে জনসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি কমরেড হাফিজুল ইসলামের সভাপতিত্বে কেন্দ্রিয় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রিয় সভাপতি মন্ডলীর সদস্য কমরেড রফিকুজ্জামান লায়েক।
জনসভায় বক্তব্য রাখেন, কেন্দ্রিয় কমিটির সদস্য কমরেড মন্টু ঘোষ, জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শিবনাথ চক্রবর্তী, জেলা কমিটির সাবেক সভাপতি কমরেড জিয়া হায়দার ডিপটি, সাবেক সাধারণ সম্পাদক কমরেড দুলাল সাহা, শহর কমিটির সভাপতি কমরেড আবদুল হাই শরীফ, জেলা কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক কমরেড রবীন্দ্র দাস, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কমরেড বিমল কান্তি দাস, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের নেত্রী শাহানারা বেগম ও গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেনসহ জেলা নেতৃবৃন্দ।
জনসভায় বক্তারা বলেন, সরকার বলছে দেশে উন্নয়ন হচ্ছে, দেশ নাকি মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হচ্ছে। কিন্তু সে উন্নয়নের সুফল তো সাধারণ মানুষ পাচ্ছে না। বিদেশে অবস্থানরত এক কোটি প্রবাসী শ্রমিক তাদের হাড়ভাঙ্গা খাটুনি দিয়ে দেশে টাকা পাঠাচ্ছে। ৪০ লক্ষ গার্মেন্টস শ্রমিকের শ্রমে ঘামে ৭৭% বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আসছে। আর গ্রামের দরিদ্র কৃষক ১৬ কোটি মানুষের খাবার উৎপাদন করছে। যাদের মেহনতে দেশের উন্নয়ন হচ্ছে সেই শ্রমিকের কৃষকের ভাগ্যের কোন উন্নয়ন হচ্ছে না। ধনী দরিদ্রের বৈষম্য দিনকে দিন বাড়ছে। কালো টাকা ও লুটেরাদের উন্নয়ন হচ্ছে। ঘুষ, দুর্নীতি ও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে একটা লুটেরা ধনিক গোষ্ঠী রাতারাতি হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হচ্ছে। এই লুটেরা গোষ্ঠীর অর্থ সম্পদের পাহাড়কেই সরকার বলছে উন্নয়ন। দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। পুলিশের কাছেও মানুষ আজ নিরাপদ নয়। মিথ্যা মামলা, হামলা, চাঁদাবাজিতো আছেই। রাজনৈতিক পরিস্থিতির চরম অবনিত হচ্ছে। ইতিমধ্যে সরকার গণতন্ত্রকে সংকুচিত করে ফেলেছে। উন্নয়নের কথার আড়ালে গণতন্ত্রকে আরও সংকুচিত করতে চাচ্ছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে ঠিকই কিন্তু সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী তাদের কৌশল পরিবর্তন করে ভিতরে ভিতরে ধর্মের আবরনে সংগঠিত হচ্ছে। সরকারের অগণতান্ত্রিক আচরণের কারণে স্বাধীনতাবিরোধী সাম্প্রদায়িক শক্তিরই জনসমর্থন বাড়ছে। যে কোন সময় ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরী হতে পারে। ১৪ দলীয় জোট ও ২০ দলীয় জোট কোন পক্ষই দেশ ও জনগনের পক্ষে রাজনীতি করছে না। লুটপাট আর রাষ্ট্রক্ষমতাই বুর্জোয়া রাজনৈতিক দলগুলোর মূল কথা। এই পরিস্থিতিতে দেশের সকল বাম, প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্য একান্তই প্রয়োজন। শ্রমিক কৃষকের পক্ষে একটি বিকল্প রাজনৈতিক ধারা তৈরী করতে না পারলে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পতিত হবে।
পরিস্থিতি যতই ভয়ঙ্কর হোক কমিউনিস্টরা কখনই ভয় করে না। কমিউনিস্ট পার্টি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে তেভাগা, টঙ্ক প্রথা, ভাষা আন্দোলন, শিক্ষা আন্দোলন, নারী জাগরণ, সাংস্কৃতিক আন্দোলন, উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছে। ৮৪-৮৫ এর উত্তাল শ্রমিক আন্দোলন ও এরশাদ স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনেও কমিউনিস্ট পার্টি ছিল সামনের কাতারে। আজকে দেশের এই পরিস্থিতিকেও কমিউনিস্ট পার্টি মোকাবেলা করবে। নেতৃবৃন্দ দেশের সকল বাম, প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার উদাত্ত আহ্বান জানান।
জনসভা শেষে সন্ধ্যায় একতা খেলাঘর আসর, ক্রান্তি খেলাঘর আসর ও শ্রুতি সাংস্কৃতিক একাডেমী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে।