বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
সিদ্ধিরগঞ্জে একটি ডাকাতি মামলায় রিমান্ডে নেয়া আসামীকে নির্যাতনের ভয়ভীতি দেখিয়ে তার দুই স্ত্রীকে ধর্ষণের ঘটনাটি এক লাখ টাকার সমঝোতায় পুলিশ কর্মকর্তা আতাউর রহমানকে রেহাই দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনার শুরুতে ধর্ষিতা দুই নারী গণমাধ্যমের কাছে এসআই আতাউরের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙ্গুল তুললেও শুক্রবার বিকেলে আইনজীবীর চেম্বারে এক লাখ টাকা সমঝোতায় পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে নিতে ওই দুই নারীকে চাপ সৃষ্টি করা হয়। পরে রাতে এসআই আতাউরের নাম বাদ দিয়ে দুই সোর্স নজরুল ও শুভকে আসামী করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন ধর্ষিতা দুই সতীনের একজন। শুক্রবার দুপুর থেকে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত জেলা পুলিশের উদ্ধর্তন কর্মকর্তারা সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় অবস্থান করে এসআইকে বাদ দিয়ে ওই সোর্সদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলাটি করান। শনিবার সকালে নারায়ণগঞ্জ শহরের ১০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে ধর্ষিতা দুই সতীনের মেডিকেল পরীক্ষা করা হয়েছে। এদিকে মামলা থেকে রেহাই পেলেও শনিবার দুপুরে এসআই আতাউর রহমানকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা থেকে প্রত্যাহার (ক্লোসড) করে পুলিশ লাইনে পাঠানো হয়েছে। অপর দিকে ধর্ষিত পরিবারের সদস্যরা চরম আতংকের মধ্যে রয়েছেন বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, ৩১ আগস্ট রাতে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পাশেই সোর্স নজরুলের ভাড়া বাসায় ধর্ষণের শিকার হয় দুই সতীন। বৃহস্পতিবার আদালতপাড়ায় গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে ওই দুই সতীন বিস্তারিত জানান। তাদের পক্ষের আইনজীবী মজিবুর রহমানও এর সত্যতা নিশ্চিত করে জানিয়েছেন যে ওই দুই সতীন তার কাছেও এসআই আতাউর রহমান এবং দুই সোর্স নজরুল ও শুভর নাম বলেছেন। এছাড়া শুক্রবার সকালে এক গণমাধ্যমকর্মীর মুঠোফোনে ধর্ষিতা দুই সতীনের একজন ফোন করে জানান, তাদেরকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রফিকুল ইসলাম, এসআই আতাউর রহমান সহ কয়েকজন কল করে থানায় যেতে বলছে। এসআই আতাউরের নাম বলায় তাদেরকে হুমকি ধমকি দেয়া হচ্ছে। তারা জানান, তারা আদালতে মামলা করবেন এজন্য তারা কোর্টে এসেছেন। আদালত মামলা না নিলে তারা ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করবেন।
এদিকে শুক্রবার বিকেল ৩টার দিকে নারায়ণগঞ্জ নতুন কোর্ট ভবনের পাশে চাঁদমারীস্থ অ্যাডভোকেট মজিবুর রহমানের চেম্বারে আসেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানার (পরিদর্শক) তদন্ত মোঃ রফিকুল ইসলাম ও এসআই ওমর ফারুক। পরে তারা ঘটনা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়ে আইনজীবি মজিবুর রহমানের চেম্বার থেকে ধর্ষিতা দুই সতীনকে পুলিশের হেফাজতে থানায় নিয়ে যান।
রাতে এ ব্যাপারে অ্যাডভোকেট মজিবুর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, আমার চেম্বারে বসে পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা দুইজন নারীকে চাপ দিয়ে ১ লাখ টাকায় রফাদফা করে। রোববার ওই ১ লাখ টাকা দিয়ে দিবে জানিয়েছে পুলিশ। পরে দুইজনকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় নিয়ে জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে নিয়ে সমঝোতার লেখায় স্বাক্ষর করা হয়।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি সরাফতউল্লাহ জানান, শুক্রবার রাতেই ধর্ষিতা দুই সতীনের একজন (ছোট বউ) বাদি হয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় গ্রেফতারকৃত পুলিশের দুই সোর্স নজরুল ও শুভকে আসামী করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত নজরুল ও শুভকে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ ১০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের আরএমও ডা. আসাদুজ্জামান জানান, শনিবার সকালে ধর্ষিতা দুই সতীনের মেডিকেল পরীক্ষার নমুনা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট আসার পরে বিস্তারিত জানা যাবে। তবে তাদেরকে কারা ধর্ষণ করেছে সেটা জানতে হলে ডিএনএ টেস্ট করাতে হবে।
৩ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) ফারুক হোসেন জানান, তদন্তে পুলিশের এসআই আতাউর রহমানের কোন সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। ঘটনাটির মূল হোতা ছিল সোর্স নজরুল। তবে দায়িত্বে অবহেলার কারনে শনিবার এসআই আতাউর রহমানকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা থেকে ক্লোসড করে পুলিশ লাইনে পাঠানো হয়েছে।
মহিলা পরিষদ নারায়ণগঞ্জ মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক শাহানারা খানম জানান, তারা গণমাধ্যমে দুই সতীনকে ধর্ষণের ঘটনাটি শুনেছে। তারা এ ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেন এবং দোষীদের শাস্তি দাবি করেছেন।