বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ মাদক স¤্রাট একাধিক হত্যা ও মাদক মামলার আসামী লঞ্চ সোহেলের বাড়িতে শনিবার সকাল ১১টায় অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। এ সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে বাড়ির পিছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যায় লঞ্চ সোহেল ও তার আরেক সহযোগী ইব্রাহিম। এর আগে সিদ্ধিরগঞ্জ পুল মোহম্মদীয়া হোটেলের পিছনে রেল লাইন এলাকা থেকে তার প্রধান সহযোগী মাদক ব্যবসায়ী আলমাস (৪৬)কে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তার দেয়া তথ্যমতে সিদ্ধিরগঞ্জ বাগানবাড়ি এলাকায় লঞ্চ সোহেলের নিজ বাড়িতে এ অভিযান চালায় পুলিশ। পুলিশ আলমাসের কাছ থেকে ২টি গাঁজার রোল উদ্ধার করে। গ্রেপ্তারকৃত আলমাস সিদ্ধিরগঞ্জের ওমরপুল রেল লাইন এলাকার মৃত ছানু মিয়ার ছেলে। তার বিরুদ্ধে জেলা ডিবি ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশের কাছে একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে, প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষনা করলেও কিছু অসাধু কর্মকতার জন্য মাদক ও অপরাধ নির্মূল করতে পারছেনা বলে এমনটাই দাবি করছে সচেতন মানুষ।
এলাকাবাসী জানান, সিদ্ধিরগঞ্জের রেল লাইন, ওমরপুর, বাগানবাড়ি এলাকার মাদকের প্রধান ডিলার লঞ্চ সোহেল। এ এলাকাগুলো ছাড়াও তার মাধ্যমে থানা এলাকার বিভিন্ন মহল্লায় ইয়াবা, হেরোইন, গাঁজা ও বিয়ার পাইকারী সরবারহ করা হয়। তার নিয়ন্ত্রণাধিন রয়েছে একাধিক বিক্রেতা। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- একাধিক মাদক মামলার আসামী ইব্রাহিম ইবু, নুরুজ্জামান মুরুব্বী, ভ্যানগাড়ি বাবু, সাগর ও গ্রেফতারকৃত আলমাস। প্রশাসনের অনেকই লঞ্চ সোহেলের বিষয়টি জেনেও না জানার ভাব করে থাকে তাকে গ্রেপ্তার করছেনা।
জানা গেছে, বরিশাল জেলার আবুল মিয়ার ছেলে লঞ্চ সোহেল ছোটবেলা থেকেই অপরাধ জগতে জড়িয়ে পড়ে। চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, নির্যাতন, মাদক ব্যবসা, খুন, গুমসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ডের সাথে সে জড়িত। এক সময়ে সে রোকসানার মাদকের আস্তানার শীর্ষ ছিলো। চতুর লঞ্চ সোহেলের সাথে মাদক ব্যবসায়ীদের দ্রুত সখ্যতা হয়। পরে রোকসানাকে পল্টি দিয়ে নিজেই মাদক ব্যবসা শুরু করেন। এর আগে ঠান্ডা মাথার লঞ্চ সোহেল তার মাদক বহনকারী গাড়ির ড্রাইভার জুয়েলকে সুকৌশলে নির্মমভাবে হত্যা করে। পুলিশ লাশ উদ্ধার করতে গেলে মাথা ও শরীর বিভিন্ন অংশ আলাদা পায়। এ মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামী লঞ্চ সোহেল। তাছাড়া ৪নং ওয়ার্ডে মোহাম্মদীয়া হোটেলের পিছনের রেলওয়ের সরকারী জায়গা দখল করে বহুতল ভবন করার জন্য আশপাশের লোকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে উঠিয়ে দিচ্ছে মাদক স¤্রাট লঞ্চ সোহেল।
লঞ্জ সোহেলের বর্তমান সেল্টার দাতা হচ্ছে সাবেক নারী কাউন্সিলর ও সাত খুনের মামলার ফাঁসির আসামী নুর হোসেনর কথিত স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস নিলা ও নারায়নগঞ্জ ৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ্ব গিয়াস উদ্দিনের ভাই ও বর্তমান ৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর গোলাম মোহাম্মদ সাদরিলের চাচা তেলচোর নজরুল ইসলাম। এ ভয়ংঙ্কর নজরুলের সেল্টারে থেকে সে সিদ্ধিরগঞ্জে অপরাধ জগত নিয়ন্ত্রণ করছে। সম্প্রতি স্থানীয় কয়েকটি গনম্যাধমে লঞ্চ সোহেলের মাদক ও অপরাধের সংবাদ প্রকাশিত হলে সপ্তাহখানেক ব্যবসা বন্ধ রাখে সে। পরে সে গত দুইদিন আগে পুলিশের সোর্সদের মাধ্যমে কিছু অসাধু পুলিশ কর্মকর্তা ও অন্যান্য আইনশৃংখলা বাহিনী ম্যানেজ করে ব্যবসা শুরু করে।
এ সংবাদ পেয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি মু. সরাফত উল্লা লঞ্চ সোহেলকে গ্রেপ্তার ও তার মাদকের আস্তানা ঘুড়িয়ে দিতে থানার দারোগাদের নিদের্শ দেন। তারই প্রেক্ষিতে এসআই আমিনুল ইসলাম তাকে গ্রেপ্তার করতে অভিযান চালায়।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এস আই আমিনুল ইসলাম লঞ্চ সোহেলের প্রধান সহযোগী আলমাসকে গ্রেপ্তারের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, আলমাসের তথ্যমতে লঞ্চ সোহেলের বাড়িতে অভিযান চালাই। এ সময় ওই বাড়ির মহিলারা বাড়িতে প্রবেশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। অনেক পরে তারা সড়ে দাড়ালে বাড়িতে লঞ্চ সোহেলকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। ধারনা করা যাচ্ছে লঞ্চ সোহেলকে পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিতেই মহিলারা প্রবেশ পথ রোধ করে রাখে।
গ্রেফতারকৃত আলমাস ও পলাতক লঞ্চ সোহেলসহ ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে তিনি আরো জানান লঞ্চ সোহেল ও তার বাহিনীর সদস্যদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত থাকবে।
এদিকে এলাকাবাসী মাদক স¤্রাট লঞ্চ সোহেল ও তার সেল্টারদাতাদের গ্রেপ্তার করার জন্য র্যাব ও পুলিশ সুপারের হস্তক্ষপ কামনা করছে।