নারায়ণগঞ্জ,বিজয় বার্তা ২৪
সিদ্ধিরগঞ্জের বহুল আলোচিত মাদকের অভয়ারন্য আইলপাড়া পাঠানটুলি এলাকায় মাদকের উৎস দিয়ে কোটি টাকার মিশনে নেমেছে মাদক ব্যবসায়ীরা। একদিকে আইনশৃংখলা বাহিনী অন্যদিকে ক্ষুব্দ এলাকাবাসীর তোপের মূখে থেকেও আরো বেপোরোয়া হয়ে উঠছে মাদক সিন্ডিকেট। একদিকে আইনশৃংখলা বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উদাসিনতা অন্যদিকে একাধিক কর্মকর্তার সাথে মাদক ব্যবসায়ীদের সখ্যতা ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, এলাকার অসাধু মাতবরসহ সন্ত্রাসীদের ছত্রছায়ায় মাদকের বড় বড় চালান এনে নিরাপদে জেলাসহ পাশ্ববর্তী জেলা এলাকাগুলোতে সরবারহ হচ্ছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। হাতের নাগালে অবাধে মাদক পেয়ে ধ্বংসের মুখে পতিত হচ্ছে যুবসমাজ, নারী পুরুষসহ অসংখ বাযোজৈষ্ঠ ব্যক্তিবর্গ। প্রতি সপ্তাতে ৩/৪ বার মাদকের কোটি টাকার চালান এ এলাকাগুলোতে ট্রানজিট করে সরবারহ হয়। এ সুযোগে কোটি টাকা কামিয়ে নেয়ার মিশনের এ গুলো নিয়ন্ত্রন করছে ওই মহলহুলো ঘরে বসে খাজনা আদায়ের জমিদারী প্রথায়।
জানা যায়, এক সময়ের মাদকের অভয়ারন্য সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল এলাকা সাতখুনের ঘটনার পর আইনশৃংখলা বাহিনীর নজরদারীতে থাকায় মাদকের শীর্ষ কারবারীরা বেছে নেয় পাঠানটুলি ও নতুন আইলপাড়া এলাকাকে। এই এলাকাগুলো সিদ্ধিরগঞ্জ থানার আওতাধীন হলেও সদর ও ফতুল্লা মডেল থানার সিমানাবর্তী অঞ্চল। তিন থানার সিমানাবর্তী অঞ্চল বিধায় পুলিশ সিমানার বিরোধ নিয়ে একে অপরের উপর দায়দায়িত্ব বর্তিয়ে থাকে। এ সুযোগেই মাদকের কারবারীরা নৌপথে মাদক এনে এসিআই, পানির কল দিয়ে ও সড়ক পথে হাজিগঞ্জ —দিয়ে মাদকের বড় বড় চালান নিয়ে আসে আইলপাড়া পাঠানটুলি এলাকায়। এছাড়াও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশের ডিউটি বদলের সময় পূর্বাঞ্চল থেকে মাদকের বড় বড় চালান ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শিমরাইল মোড়ে নামিয়ে সরাসরি থানা কার্যালয়ের সামনে দিয়ে কিম্বা হিরাঝিল মিজিমিজি হয়ে জালকুড়ির ভেতর দিয়ে নিয়ে আসে আইলপাড়া পাঠানটুলি এলাকায়। তবে থানা কার্যালয়ের সামনে দিয়ে মাদক সরবাহের আগে আইনশৃংখলা বাহিনির অসাধু কর্মকর্তাদের নির্দেশনা থাকে বলে একটি সূত্র জানায়।
প্রতি সপ্তাতে ৩/৪ বার মাদকের বড় চালান এ এলাকাগুলোতে আসে। আর এগুলোর নেপথ্যের লোকেরা ধরা ছোয়ার বাহিরে থেকে যায়। মাদকের এ চালান গুলো গ্রহন করে ভাগ বন্টন করে নেয় একাধিক মাদক ব্যবসায়ী। এদের মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হলো- রুমা, সেন্টু, সাইদুল, সাগর, আসমা ও শেরু। এদের মাধ্যমে মাদকগুলো জেলাসহ পাশ্ববর্তী জেলা গুলোতে সরবারহ হয়। রুমা সুন্দরী বিধায় সহজেই পুলিশের চোখ এড়িয়ে যেতে পারে বিধায় তার মাধ্যমেই অধিকাংশ ইয়াবার চালানগুলো ট্রানজিট হয়। নিজ গোপনাঙ্গসহ শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে ইয়ারা রেখে অবাধে বিচরন করে মাদক সরবারহ করে বলে মাদক ব্যবসায়ীদের হট আইটেম গার্ল বনে যায় রুমা। এদিকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার নতুন আইলপাড়া পাঠানটুলী এলাকার মাদক স¤্রাজ্ঞী রুমা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ থাকার পরও পুলিশ রহস্যজনক কারণে গ্রেফতার না করায় এলাকারবাসী ক্ষুব্দ হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে মাদকের শেল্টারদাতা নারী লিপ্সু সেন্টু আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। রুমা ও সেন্টুর অনৈতিক কার্যকলাপে এলাকার কিশোর ও তরুণ সমাজ হচ্ছে বিপদগামী।
মাদক স¤্রাজ্ঞী রুমা কারাবন্দি মাদক সম্্রাট দেলোয়ার হোসেন দেলুর স্ত্রী। তার বিরুদ্ধে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একাধিক অভিযোগ থাকার পরও পুলিশের সাথে দহরম মহরম সখ্যতা থাকার কারণে গ্রেফতার করছে না। দেলোয়ার হোসেন দেলুর শেল্টারদাতা ও গ্রেফতার হওয়ার পূর্বে দেলুকে রক্ষার জন্য যিনি আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছেন সেই নারী লিপ্সু সেন্টু রুমাকে নিয়েই মাদক সিন্ডিকেট পরিচালনা করছে। আর সাংবাদিকদের দেখে নেবার হুমকি সহ স্থানীয় এলাকার সমাজকর্মীদের খুন করার পরিকল্পনা করছে বলে বিভিন্ন সূত্রে প্রকাশ। সেন্টু রুমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ থাকার পর পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার এস.আই ওমর ফারুক ঘটনাস্থল তদন্তে সেন্টু ও রুমার বাড়িতে অভিযান চালায়। কিন্তু তদন্ত হওয়ার পর এখনও পর্যন্ত কোন গ্রেফতার নেই।
অন্যদিকে সাইদুল নীরবে পুলিশের সাথে সখ্যতা করেই মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। সাইদুলকে নিয়মিত থানায় দেখা যায় বলে অনেকে জানান। শাহজাহান ড্রাইভারের মেয়ে ফেন্সি ময়না এলাকা ছেড়ে ডন চেম্বারে বসবাস করছে। সেখান থেকে আইলপাড়া এলাকায় ফেনসিডিল সরবরাহ করছে। শুধু তাই নয় রুমার অন্যতম সহযোগী সাগর প্রকাশ্যেই ইয়াবা বিক্রির পাশাপাশি সাথে অস্ত্র নিয়ে চলাফেরা করছে। এতে এলাকার লোকজন আরো শঙ্কিত হয়ে পড়ছে। এলাকায় যে কোন সময় মাদক সিন্ডিকেট অঘটন ঘটাতে পারে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আইলপাড়া পাঠানটুলী এলাকাকে মাদকমুক্ত করতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফর ও র্যাবকে মাদক বিক্রেতাদের গ্রেফতার করতে নির্দেশনা দিয়েছেন। এলাকায় আরো যারা মাদক বিক্রি করছে তারা হলো ইস্তি, জিতু, অনিক, মিলন, কানা সোহেল, সজিব, ইমরান, মিন্টু, উজ্জ্বল, রাজুসহ আরো অনেকে। তাদেরকে দ্রুত গ্রেফতার করা হবে বলে পুলিশ সূত্রে জানা যায়।
এদিকে এলাকাবাসী মাদক বিক্রেতা ও শেল্টারদাতাদের গ্রেফতার করতে মোবাইল কোর্টের জন্য জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা সহ এ ব্যাপারে জেলা পুলিশ সুপার দ্রুত ব্যবস্থা নিবেন বলে অভিভাবক মহল আশা করছেন।
এ ব্যাপারে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি মু. শরাফত উল্লাহ দাবী করেছেন তার থানা এলাকায় নিয়মিত মাদক বিরোধী অভিযান অব্যাহত আছে। মাদক বিক্রেতারা কেউই রেহাই পাবে না। গত মাসে রেকর্ড সংখ্যক মাদক মামলা হয়েছে। মাদক বিরোধী অভিযান অব্যাহত রয়েছে। পর্যায়ক্রমে সকল মাদক ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।