বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
নারায়ণগঞ্জ মহানগরের সিদ্ধিরগঞ্জে পুলিশের ভুয়া এএসআই সাইদুর রহমান নামে এক প্রতারককে গত মঙ্গলবার রাতে গোদনাইল ধুনকুন্ডা এলাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ জেলা ডিবি পুলিশ। এ সময়ে তার কাছ কাছ থেকে পুলিশের পোষাক পরিহিত একটি ভুযা পরিচয়পত্রও ভিজিটিং কার্ড উদ্ধার করা হয়। অভিযোগে জানাগেছে পটুয়াখালী জেলার সন্দুখালী গ্রামের হাবিবুর রহমানের ছেলে সাইদুর রহমান (৩৫)। দশ বছর আগে পটুয়াখালী থেকে নারায়ণগঞ্জে এসে ভেনগাড়ীতে করে বিভিন্ন পন্য ফেরী করে বিক্রি করতো। পাশাপাশি রাজ মিস্ত্রির কাজও করতো। কিন্তু এসব কিছুর আড়ালে সাইদুর আরও একটি কাজে জড়িত ছিল তার সেই কাজ করার জন্য রাতের অন্ধকারকে বেছে নিতো সে।
নিজেকে পুলিশের এএসআই পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন বাড়িতে ঢুকে মেয়েদেরকে ব্লাকমেইলিং করে টাকা পয়সা হাতিয়ে নেওয়াই ছিল তার আসল পেশা। এধরনের প্রতারনার জন্য সাইদুর নিজের আসল নাম গোপন রেখে রফিকুল ইসলাম নামে (বিপি ৯১২১৬০৫৬৮০) পুলিশের ভিজিটিং কার্ডও বানিয়েছিল। এই কার্ড দেখিয়ে সে বিভিন্ন স্থানে প্রতারনা করে আসছিল। সম্প্রতি সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইল ধনকুন্ডা এলাকার প্রবাসির স্ত্রী মোসাঃ সাহারা বেগমের কাছ থেকে জমি রেজিষ্ট্রি করিয়ে দেওয়ার নাম করে হাতিয়ে নেয় ১০ লক্ষ্য টাকা। সেই টাকা নেওয়ার পর পুনরায় আরও টাকা দাবী করায় বিষয়টি তারা আইনশৃংখলা বাহিনীকেঅবহিত করে। পরে তাদের মাধ্যমে জানতে পারে সাইদুর রহমান এবং ওই বিপি নাম্বারের কোন এএসআই নেই পুলিশে।
সিদ্ধিরগঞ্জে ভূয়া পুলিশ কর্মকতা গ্রেফতার
পরে মঙ্গলবার রাতে সাইদুরকে টাকা দেওয়ার কথা বলে বাড়িতে আসতে বলে গৃহবধু সাহারা। এসময় নারায়নগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক হুমায়ুন কবির তাকে হাতে নাতে আটক করে। পরে তাকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় সোপর্দ করে। এবিষয়ে ভুক্তভুগি গৃহবধু সাহারা বাদি সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করে। মামলা সূত্রে জানা যায়, গত তিন মাস পূর্র্বে জমি সংক্রান্ত বিষয় নিয়া পুলিশের এএসআই রফিকুল ইসলাম পরিচয় দিয়ে প্রবাসীর স্ত্রী সাহারার বিরুদ্ধে জমি সংক্রান্ত নারায়ণগঞ্জ এসপি অফিসের একটি অভিযোগ নিয়ে তার বাসায় হাজির হয়। সেই সূত্রে সাহারার বাড়িতে রফিক ওরফে সাইদুর কয়েকবার আসা যাওয়া করে। একসময় সাইদুর সাহারার জমি দ্রুত রেজিষ্ট্রি করিয়ে দেওয়ার কথা বলে ১০ লক্ষ্য টাকা দাবী করে।
এরই প্রেক্ষিতে গত জুলাই মাসের ২০ তারিখে নগদ ৩ লক্ষ্য টাকা সাইদুরকে দেয় সাহারা। এর নয়দিন পর জুলাইয়ে ২৯ তারিখে তারিখে আরও ২ লাখ টাকা প্রদান করে সাইদুরকে। এর পরে আরও কয়েকবার সাহারার কাছ থেকে আরও ৫ লাখ টাকা আদায় করে সাইদুর। এমনি করে ১০লাখ টাকা নেওয়ার পরেও প্রতারক সাইদুর সাহারার কাছে আরও ২ লাখ টাকা দাবী করে। ১০লাখ টাকা দেওয়ার পরে আবার অতিরিক্ত টাকা চাওয়ায় তা দিতে অস্বীকৃতি জানায় সাহারা। এতে করে সাইদুর তাকে নানা রকম ভয়ভীতি প্রদর্শন করতে থাকে। পরে বিষয়টি সাহারা নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশকে অবহিত করে। পরে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ সাইদুরের বিপি নাম্বার যাচাই করে জানতে পারে এ নাম্বারে এবং নামে কোন পুলিশ নেই। নাম এবং বিপি নাম্বার দুটোই ভুয়া। বিষয়টি প্রতারক সাইদুরকে বুঝতে না দিয়ে টাকা দেওয়ার কথা বলে তাকে আসতে বলে সাহারার বাসায়।
টাকা নেওয়ার জন্য মঙ্গলবার (৩০ অক্টোবর) রাতে সাইদুর সাহারার বাসায় আসে। এসময় গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক হুমায়ূন কবির তাকে হাতেনাতে আটক করে। পরে তাকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় সোপর্দ করে। এদিকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় খোঁজ নিয়ে জানায় যায় ধৃত ভুয়া পুলিশ রফিকুল ইসলাম ওরফে সাইদুরের নামে চলতি বছরের জুলাইয়ে ৭ তারিখে শান্তা নামে এক নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা হয়েছে। সেই থেকে পুলিশ তাকে খুজছে।
এদিকে সাহারার দায়েরকৃত প্রতারণার মামলা এবং শান্তার দায়ের করা নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা দুটির তদন্ত কর্মকর্তা সিদ্ধিরগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক দীলিপ কুমার বিশ্বাস। তিনি জানান রফিকুল ইসলাম ওরফে সাইদুর একজন ভূয়া পুলিশ। সে পুলিশ পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন স্থানে অপকর্ম করে বেড়াতো। এর আগে তার নামে গত জুলাই মাসে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি মামালা হয়েছিলে। আমরা তাকে খুঁজে বেড়াচ্ছি।