বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় রিমান্ডে থাকা ডাকাতি মামলার আসামির স্ত্রী ২ সতিনকে ধর্ষনের ঘটনায় পুলিশের এসআই আতাউর বহাল তবিয়তে থাকলেও সোর্স নজরুল ইসলাম ওরফে তোতলা নজরুল ও শুভকে আটক করেছে পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ ওই দু,সোর্সকে আটক করে। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(ডিএসবি) মোঃ ফারুক হোসেনকে প্রধান করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। জবান বন্দি গ্রহন করার জন্য পুলিশ ধর্ষিতা ২ সতিনকে গতকাল শুক্রবার বিকেলে থানায় হাজির করেছে। তদন্ত টিমের কাছে জবান বন্দি দেওয়ার পর অপরাধিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে বলে পুলিশ জানায়।
অভিযোগ জানা গেছে, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশের এক সোর্সকে ডাকাতি মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য ১ দিনের রিমান্ডে আনে পুলিশ। গত ৩১ আগষ্ট বুধবার রিমান্ডে আনার পর ওই আসামিকে মারধর করা হবে না বলে তার স্ত্রীর কাছে ২৫ হাজার টাকা দাবি করে সোর্স নজরুল ও শুভ। ২৫ হাজার টাকা না দিলে সারারাত মারধর ও আরো মামলায় ঢুকিয়ে চালান করা হবে বলে ভয় দেখায়। পুলিশের মারধর থেকে স্বামীকে রক্ষা করতে ২ সতীন বুধবার রাত ১০ টায় থানায় গিয়ে সোর্স নজরুল ও শুভর সাখে দেখা করে। তখন ২ সতিনকে সোর্সরা একটি ফ্ল্যাট বাসায় নিয়ে দেনদরবার শুরু করে। দেনদরবারে এক পর্যায় ২ সতিন সোর্সদের হাতে ৬ হাজার টাকা দেয়। কিন্তু বাকী টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় সোর্স নজরুল ও শুভ ২ সতিনের সাথে রাত কাটানোর প্রস্তাব দেয়। তাতে রাজি না হলে বাকী ১৯ হাজার টাকা দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করে বিভিন্ন হুমকি দেয়। এক পর্যায় ইচ্ছার বিরুদ্ধেই আসামির বড় স্ত্রীকে সোর্স নজরুল ও ছোট স্ত্রীকে শুভ পৃথক দু,টি কক্ষে নিয়ে ধর্ষন করে। পরে রাত সাড়ে ১২ টার দিকে ওই বাসায় যায় এসআই আতাউর। এসময় আতাউর মাতাল ছিল। এসআই আতাউর নিজেও আসামির ছোট স্ত্রীকে ধর্ষন করে। দু,সতিনের সাথে ধর্ষন উৎসব চালায় তারা।
পরদিন বৃহস্পতিবার ১ সেপ্টেম্বর বিকেলে রিমান্ডের আসামিকে আদালতে প্রেরণ করলে আদালত তাকে জেল হাজতে পাটানোর নির্দেশ দিলে স্বামীকে দেখতে যাওয়া ২ সতিন আদালতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। এসময় ২ সতিনের শশুর তাদের সাথেই ছিল। আদালত পারা থেকেই প্রকাশ পায় ২ সতিন ধর্ষনের ঘটনা। এক কান দু,কান করে ঘটনাটি জানা জানি হয়ে পড়লে বৃহস্পতিবার রাতেই পুলিশ সোর্স নজরুল ও শুভকে আটক করে। তবে একই অপরাধে অভিযুক্ত এসআই আতাউর বহাল তবিয়তেই থানায় ঘুরা ফিরা করছে। আটককৃত দুসোর্সদের বিরুদ্ধে ধর্ষনের অভিযোগ তুলে পুলিশের ভাবমূর্তি যাতে ক্ষুন্ন না হয় সেজন্য এসআই আতাউরকে নির্দোষ প্রমাণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে জানা গেছে।
এ দিকে ওই ২ সতিন ধর্ষনের ঘটনায় গতকাল শুক্রবার স্থানীয় ও জাতীয় বিভিন্ন দৈনিক প্রত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে শুরু হয় তোলপাড়। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করতে জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(ডিএসবি) মোঃ ফারুক হোসেনকে প্রধান করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটির অপর দুই সদস্য হচ্ছেন সহকারী পুলিশ সুপার ক অঞ্চল আব্দুল্লাহ আল মাসুদ ও জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক (ডিআইও-১) মামুনুর রশিদ মন্ডল। কমিটি গঠন করার পরই ধর্ষিতাদের সন্ধান শুরু করে পুলিশ। শেষ পর্যন্ত বিকেল ৫ টায় পুলিশ ধর্ষিতাদের থানায় হাজির করতে সক্ষম হয়। ধর্ষিতারা পুলিশ হেফাজতে আর আটককৃত সোর্স থানা হাজতে রয়েছে। তদন্ত কমিটির সদস্যরা ধর্ষিতাদের জবান বন্দি গ্রহন করার পর অপরাধিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে বলে থানা পুলিশ জানায়। এ রির্পোট লিখা পর্যন্ত (রাত ৮ টা) তদন্ত টিমের সদস্যরা সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় অবস্থান করছে।
উল্লেখ্য য়ে,সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় দায়ের করা একটি ডাকাতি মামলায় মিজমিজি দক্ষিণপাড়া এলাকার কাচাঁ তরকারি বিক্রেতা এক ব্যক্তিকে গত ২৯ আগস্ট গ্রেফতার করে পুলিশ। সে একসময় থানা পুলিশের সোর্স ছিল। পরে ৩১ আগস্ট তাকে নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অশোক কুমার দত্তের আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। রিমান্ড মঞ্জুর করার পর আসামীকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা হেফাজতে নেয়া হয়।