বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
নারায়ণগঞ্জ মহানগরের সিদ্ধিরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠা অর্ধশত অবৈধ মশার কয়েল তৈরি কারখানায় চুরি করে গ্যাস ব্যবহার করার গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। তিতাস গ্যাসের নারায়ণগঞ্জ দপ্তরের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ম্যানেজ করে এ সকল অবৈধ মশার কয়েল তৈরি কারখানায় প্রতিমাসে কোটি কোটি টাকার গ্যাস চুরি করে ব্যবহার করছে। সিদ্ধিরগঞ্জের কান্দাপাড়া, সাহেবপাড়া, মৌচাক, মিজমিজি পশ্চিমপাড়া, হাজেরা মার্কেট,বাতানপাড়া, সানারপাড়, আটিগাঁও, ধনুহাজীরোড , মিজমিজির পুকুরপাড়, পাইনাদির শাপলা চত্বর, জালকুঁড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে অর্ধশত মশার কয়েল তৈরির কারখানার সন্ধান পাওয়া গেছে। সাইনবোর্ড বিহীন এসব কারখানা গুলোর প্রধান ফটকে বাইরে দিয়ে তালা ঝুলিয়ে রাখে যাতে সহজেই কেউ কারখানায় প্রবেশ করতে না পারে। অভিযানের খবর পেয়ে অতিসহজেই মালিক ও শ্রমিকরা কারখানার পিছনের গেট দিয়ে নির্বিঘেœ পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
ধনুহাজীরোডে দেলোয়ারের বাড়ি ভাড়া নিয়ে মোঃ ফজলুল হক ও মোঃ আবিদ নামে দুজনে ইউনাইটেড ব্র্যান্ডের মশার কয়েল, কারখানা, মৌচাক এলাকায় নাসিক ২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ের ১০০ গজ পশ্চিমে একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে তোফাজ্জল হোসেন এপেক্স ব্র্যান্ডের কয়েল, তৈরি করছে। এই তোফাজ্জল দীর্ঘ ৫ বছর অবৈধ ভাবে তিতাসের গ্যাসের অবৈধ সংযোগ নিয়ে মশার কয়েল তৈরির কারখানা গড়ে তুলেছে।
তোফাজ্জল হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন রাতের অন্ধকারে চুরি করে গ্যাস সংযোগ নিয়েছেন, তিতাস গ্যাসের কর্মকর্তাদের প্রতিমাসে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দিয়ে তোফাজ্জল দীর্ঘ ৫ বছর এই অবৈধভাবে গ্যাস ব্যবহার করে কয়েক কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।
তোফাজ্জল আরও জানায়, তিতাস গ্যাসের অভিযান নামলে আগেভাগেই অভিযানের খবর তিতাস গ্যাসের ওই অসাধু কর্মকর্তারা জানিয়ে দেওয়ার কারণে অবৈধ কয়েল কারখানায় চুরি করে গ্যাস ব্যবহারের কোন সমস্যা হয়না, দলবল নিয়ে কারখানায় তালা ঝুলিয়ে ৩-৪ ঘন্টা আত্মগোপনে থাকতে হয়। তিতাস গ্যাসের লোকজন ও ভ্রাম্যমান আদালত চলে গেলে আবারও কারখানায় গ্যাস চুরি করে কয়েল উৎপাদন করা হয়।মিজমিজি কান্দাপাড়া আনন্দলোক উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০০ গজ পশ্চিমে সোহরাবের বাড়ি ভাড়া নিয়ে জাহাঙ্গীর বসুন্ধরা ও কিং কোবরা ব্র্যান্ডের মশার কয়েল, মিজমিজি পশ্চিমপাড়া বুকস গার্ডেন এর ২০০ গজ দক্ষিণে একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে প্রিন্স ও একই এলাকায় এখলাছ উদ্দিন ও হারুন বিভিন্ন ব্যান্ডের কয়েলসহ আরও কয়েকটি ব্যান্ডের কয়েল উৎপাদন করছে,। মিজমিজি বাতানপাড়া ফাজিল মাদ্রাসা সংলগ্ন জনৈক শামসু, পাইনাদি শাপলা চত্বর এলাকায় রমজান ও লাবলুসহ বিভিন্ন এলাকায় আরও রয়েছে একাধিক কয়েল কারখানা। তিতাস গ্যাসের এই অবৈধ গ্যাস সংযোগ নিয়ে কয়েল কারখানার মালিকরা গ্যাস চুরি করে কয়েল উৎপাদন করছে।
জানা যায়, সিদ্ধিরগঞ্জের ধনুহাজীরোড, মৌচাক, মিজমিজি, মিজমিজি পশ্চিমপাড়া, সাহেবপাড়া, কান্দাপাড়া, সানারপাড় সবচেয়ে বেশী কয়েল কারখানা গড়ে উঠেছে।
স্থানীয় মাহবুব বলেন, অবাধে কয়েল ফ্যাক্টরী গুলো গড়ে উঠার কারণে বিষাক্ত ক্যামিকেল,দুর্গন্ধ ও ময়লা পানির কারণে অনেকের হাপানি, শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগ ছড়িয়ে পড়ছে, ফলে আমাদের বসবাস করতে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন প্রকার ছাড়পত্র ছাড়াই শুধু নারায়ণগঞ্জ সিটিকরপোরেশনের ট্রেডলাইসেন্স নিয়ে কয়েল কারখানার মালিকরা এই অবৈধ ব্যবসা করে যাচ্ছে বছরের পর বছর। প্রতিটি বাড়ি মোটা অংকেরা অগ্রিম টাকা ও ভাড়া দিয়ে ২ বছর থেকে ৫ বছর চুক্তিতে এই অবৈধ কারখানা খুলে প্রতিমাসে কোটি টাকার গ্যাস চুরি করে কয়েল উৎপাদন করে যাচ্ছে।
এলাকাবাসীরা আরও জানায়, তিতাসগ্যাসের লোকজন ইতিপূর্বে মোবাইলকোর্ট পরিচালনা করে কয়েকটি কয়েল কারখানায় অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণসহ অর্থদন্ড করা হলেও কিভাবে আবারও কয়েল কারখানা গুলো চালু করা হয়েছে তা কারো বোধগম্য নয়।
অপরদিকে ১ নং ওয়ার্ডের মক্কীনগর এলাকায় প্রতিটি বাড়িতে অবৈধভাবে একাধিক চুলা ব্যবহার করে গ্যাস ব্যবহারর গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। তিতাসগ্যাসের লাইনম্যানরা মাসিক ভিত্তিতে ওই সকল অবৈধ চুলা ব্যবহারকারীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রতিমাসে উৎকোচ আদায় করছে। যার কারণে এক চুলার স্থলে অবৈধভাবে ৪ চুলাও ব্যবহার করছে গ্রাহকরা।
তিতাসগ্যাসের নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মোঃ জাফরুল আলম জানান, সিদ্ধিরগঞ্জের কয়েল কারখানা গুলোতে কোন বৈধ গ্যাস সংযোগ নেই, তারা চুরি করে গ্যাস ব্যবহার করছে বলে ব্যবস্থাপক জাফরুল আলম স্বীকার করে বলেন আমরা ৮-৯ মাস পূর্বে ৮ টি কয়েল কারখানার অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাইজার ও মালামাল জব্দ করেছি এবং মোটা অংকের টাকা জরিমান করেছি এবং মোবাইল কোর্ট দিয়েও কয়েল কারখানাগুলোতে অভিযান চালিয়েছি। ব্যাঙ্গের ছাতার মতো গড়ে ওঠা সকল মশার কয়েল তৈরির কারখানার অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করনে কি ব্যবস্থা গ্রহন করবেন জানতে চাইলে ওই ম্যানেজার গত ৩ মাস পূর্বে বলেছিলেন খুব দ্রুত অভিযান পরিচালনা করা হবে, কিন্তু রহস্যজনক কারনে ৩ মাস অতিবাহিত হলেও অবৈধ মশাল কয়েল তৈরি কারখানার অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে আর অভিযান চালাননি।