বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
ডিসেম্বর মাসটি বাঙ্গালী জাতির বিজয়ের মাস। বিজয়ের ৫১ বছর পেরিয়ে ৫২ তে পা দিয়েছে বাংলাদেশ। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগে দেশ আজ স্বাধীন। আর নারায়ণগঞ্জকে বলা হয় সকল আন্দোলন সংগ্রামের সূত্রিকাঘার। মহান মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রেখেছিল নারায়ণগঞ্জ জেলার মানুষ। মুক্তিযুদ্ধের উল্লেখ্যযোগ্য স্থান বন্দর উপজেলার সমরক্ষেত্র। এই স্থানটি ঘিরে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত নানা ঘটনা। বাংলাদেশ বিজয়ের শেষ মুক্তিযুদ্ধ হয় এই স্থানটিতে।
সমরক্ষেত্র স্থানটিতে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণের এই এলাকার মানুষের প্রানের দাবি। আর স্বাধীনতার ৫১ বছরে সেই দাবি বাস্তবায়নে উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। তাই নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার সমরক্ষেত্র এলাকায় নির্মাণ করা হচ্ছে সাভার স্মৃতিসৌধের আদলে “নারায়ণগঞ্জ স্মৃতিসৌধ”। বীরমুক্তিযোদ্ধাদের অবদানের সম্মানার্থে এই উদ্যোগ। আজ বৃহষ্পতিবার (২৯ ডিসেম্বর) দুপুরে নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার সমরক্ষেত্র এলাকায় “নারায়ণগঞ্জ স্মৃতিসৌধ” এর ভিত্তি প্রস্তুর স্থাপন করেছেন বীরমুক্তিযোদ্ধা এমপি সেলিম ওসমান। ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনে এসময় উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা সেলিম ওসমান, জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ, নারায়ণগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোহাম্মদ আলী, বন্দর উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এমএ রশিদ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিএম কুদরাত এ খুদা ও বিভিন্ন ইউপি চেয়ারম্যানগন সহ বীরমুক্তিযোদ্ধাগন। এমপি সেলিম ওসমান বলেন, আজকে অত্যন্ত আনন্দের বিষয়। দীর্ঘ ৫১ বছর পরে আমরা চিন্তা করতে পারছি আমরা এথানে একটা স্মৃতিসৌধ বানাতে পারবো।যার মধ্যে কেন আমরা স্বাধীনতা করেছিলাম? কেন স্বাধীনতা হয়েছিল? আমাদেরকে যুদ্ধ করার জন্য বঙ্গবন্ধু কেন ডাক দিয়েছিলেন? কে আমরা যুদ্ধে গিয়েছিলাম।আজকের কি সুবিধা। আমরা কতদূর এগিয়ে যাবো।মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০৪১ সালে নতুন প্রজম্মকে একটি স্মার্ট বাংলাদেশ উপহার দিবেন। সেটাকে আমরা করার জন্যই নারায়ণগঞ্জ স্মৃতিসৌধ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমাদের স্মৃতিসৌেধের মাধ্যমে আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাস বন্দর না শুধু সারা বাংলাদেশকে আমরা জানাতে পারি। আমাদের প্রত্যেককে এখন সহযোগিতা করতে হবে। আমাদের দেশকে উন্নয়ন করার জন্য। তিনি আরো বলেন, ,মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যে ডাক ডিজিটাল বাংলাদেশ। হয়তো আমরা থাকবো না।কিন্তু আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজম্ম এদেশকে একদিন বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত করবে।তারই প্রস্তুতির একটা অংশ এখান থেকেই হবে।ইনশাল্লাহ। আমরা জানিনা এটাকে কত টাকার বিনিময়ে করবো। জেলা প্রশাসক, জেলা পরিষদ, স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এবং সকরের সহযোগীতা নিয়ে আমরা চাইবো বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর একটা স্মৃতিসৌধ এখানে যেন হয়। শুধু মাত্র এখানে ফুল দিবো এটা কোন কথা নয়। এখান থেকে যেন শিক্ষাগ্রহন করতে পারি সেই উদ্যোগই আমরা নিবো। শুরু করে দিলাম ইনশাল্লাহ আগামী মার্চ মাসের মধ্যে আমরা সম্পূর্ণরুপে উদ্বোধন করবো এটাই আমাদের আশা। বঙ্গবন্ধুর ইতিহাস, মুক্তিযোদ্ধাদের ইতিহাস এবং মুক্তিযুদ্ধের সম্পূর্ণ ইতিহাস এই সমরক্ষেত্র থেকে প্রকাশিত হবে।
জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ বলেন, নারায়ণগঞ্জ একটি গুরুত্বপূর্ন জেলা। মহান মুক্তিযুদ্ধে নারায়ণগঞ্জে এতগুলো বীরমুক্তিযোদ্ধাগন শহীদ হয়েছিলেন। কিন্তু আমাদের খুব মানসম্মত কোন স্মৃদিস্তম্ভ বা স্মৃতিসৌধও কিন্তু এখানে ছিলনা। সেটা নিয়ে বীরমুক্তিযোদ্ধাগন তাদের আবেগের কথা বলেছেন। যে আমরা ঢাকার এত কাছে কিন্তু আমাদের জন্য একটা স্মৃতিসৌধও নাই্। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে আমরা এই জায়গায় এই উদ্যোগ গ্রহন করেছি এবং সেটা হচ্ছে। আমি বিশ্বাস করে যে এটা হলে আপনাদের ভাল লাগবে এবং মানুষের ইতিহাস জানার জায়গা হবে। মাননীয় এমপি মহোদয় বলেছেন এখান থেকে আরেকবার নারায়ণগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধের ইতিহাস নতুন করে জানার সুযোগ হবে। তিনি আরো বলেন, আমরা জানেন যে এটা সকলের সহযোগীতায় করা। আমরা একটা কাজ শুরু করেছি। শেষ করবো ইনশাল্লাহ। যত ব্যয় হয় সেটা স্থানীয়ভাবে আমাদের অভিভাবক এমপি মহোদয়গন ওনারা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন ।এতে সকলের সহযোগীতা নিয়ে করবো।সরকারী কোন বরাদ্দ ছাড়াই যেহেতু এটা করা হচ্ছে। তাই এখন এটার ব্যয়ের হিসেব এখন আমাদের কাছে ওইভাবে নেই। আমরা কাজ শুরু করি। যেদিন শেষ হয় সেদিন বলা যাবে কত টাকা ব্যয় হবে।
বন্দর উপজেলার সমরক্ষেত্র এই স্থানটিতে ১৯৭১ সালের ১৫ই ডিসেম্বর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের সর্বশেষ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধে ভারতীয় মিত্র বাহিনীর ১১ সদস্য শহীদ হয়।ভারতীয় সৈন্য ও বীরমুক্তিযোদ্ধাদের যৌথ সমন্বয়ের আক্রমনে পিছু হটতে বাধ্য হয় পাক বাহিনী ও রাজাকাররা। মহান মুক্তিযুদ্ধে সকল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা এবং তাদের আত্মত্যাগ এবং মুক্তিযোদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে এই নারায়ণগঞ্জ স্মৃতিসৌধ তৈরি করা হচ্ছে। বন্দর সমরক্ষেত্র এই স্থানটিতে
স্মৃতিসৌধ নির্মাণের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু জাদুঘর নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে বলে আয়োজকরা জানান।
সমরক্ষেত্রে আসা বীরমুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ হরমুজ আলী তার প্রতিকৃতিয়ায় বলেন, বঙ্গবন্ধুর উছিলায় আমরা এই দেশটি পেয়েছি। আমরা দেশটা পেয়েছি ত্রিশ লাখ লোক শহীদ হয়েছে তার বিনিময়ে। আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধের কারনে। আজকে বন্দর সমরক্ষেত্রে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হচ্ছে। আমাদের জন্য এটা একটা উৎসবে দিন। এতদিন পর একটি স্মৃতিসৌথ নির্মাণ হচ্ছে আমরা মুক্তিযোদ্ধারা অনেক খুশি হয়েছি। এতে করে নতুন প্রজম্ম মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস শিখতে পারবে।
আরেক বীরমুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা জানান, আমি মহান মুক্তিযুদ্ধের একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়ে এই স্মৃতিসৌধ নির্মাণ দেখে আমি খুবই আনন্দিত। এই উদ্যোগ নেওয়ার জন্য এমপি মহোদয় ও স্থানীয় প্রশাসনকে অনেক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। সেই সাথে আবেদন জানাচ্ছি ওনারা যাতে দ্রুত সময়ের মধ্যে নারায়ণগঞ্জ স্মৃতিসৌধ স্থাপন ও বাস্তবায়ন করে দেন।