নারায়ণগঞ্জ,বিজয় বার্তা ২৪
নারায়ণগঞ্জের বহুল আলোচিত সাত খুনের ২ বছর পূর্ণ হবে কাল । বছর পেরিয়ে গেলেও থামেনি স্বজনদের হাহাকার, দুর্ষহ যন্ত্রনায় সময় অতিবাহিত করছেন নিহতের স্বজনরা। হত্যাকান্ডের শিকার পরিবারগুলো এখনও স্বজনদের ভুলতে পারে নাই। নিহতের স্মৃতিগুলো এখনও তাদেরকে কাঁদায়। পরিবারগুলো এখনও শোক কাটিয়ে স্বাভাবিক হতে পারেনি। চোখের নোনা জলে বুক ভাসিয়ে ২টি বছর পার করলেও নিহতদের পরিবাররা আজও তাদের কথা মনে করে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেন না। ঘাতকরা তাদের সব স্বপ্ন ভেঙ্গে তছনছ করে দিয়েছে। নিহতদের ন্বজনদের অভিযোগ হত্যাকান্ডের পর কিছুদিন সকলে খোঁজ খবর নিলেও এখন আর কেউ তাদের খোঁজ নিচ্ছেনা। সকলে আশার বাণী দিয়ে চলে গেছেন। প্রায় সময়ই অনাহারে, অর্ধাহারে মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে। সর্বোপরী নিহতদের আক্ষেপ, হাহাকার, কান্না, মানবেতর জীবন যাপন আর প্রশাসনের সফলতা এই নিয়ে গত হল সাত খুনের ২টি বছর। পুলিশ অল্প সময়ের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের মধ্যে দিয়ে তাদের আন্তরিকতা ও সফলতা প্রকাশ করেছেন।
এদিকে কাদঁতে কাঁদতে হত্যকান্ডের শিকার তাজুলের মা-বাবার চোখের জল শুকিয়ে গেছে। এখন ছেলের কথা শুনলে ধুকেঁ ধুকেঁ কেদেঁ উঠে। তাদের বর্তমানে চাওয়া পাওয়া একটাই কখন ঘাতকদের বিচার হবে তা দেখে মৃত্যু বরণ করা।
অন্যদিকে নিহত কাউন্সিলরের স্ত্রী বিউটি আক্তার জানান, সাত হত্যাকান্ডের চার্জশীট দাখিল হলেও অদৃশ্য শক্তির ইশারায় এজাহারভুক্ত ৫ আসামীকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন বিচারের প্রহসন করা হয়েছে।
নিহত গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী কাঞ্চন নাহার নুপুর বলেন, কোন অপরাধী না হয়েও কাজের প্রয়োজনে গিয়ে গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম হত্যার মাত্র এক মাস সাত দিন পর ৪ জুন জম্ম হয় মেয়ে রওজা আক্তার জান্নতি। স্বামী হত্যার পর দেবরদের সহায়তায় সংসার চলত। এখন রওজা’র বয়স ২৩ মাস। মেয়ে বেড়ে উঠার সাথে সাথে বাবাকে খোজে করে। তার সংসার খরচ বাড়তে থাকায় মেয়ের লালন পালন ও ভবিষ্যত নিয়ে হতাশায় ভুগছেন নুপুর। এক মাত্র উর্পাজনক্ষম স্বামী হত্যার প্রধানমন্ত্রীসহ বিগত ২ বছরে নানা প্রতিশ্রুতি পেলেও কোন প্রকার সহায়তা পায়নি নিহতের এ পরিবার। দুধের শিশু রেখে কাজ করতে গিয়ে নানা সমস্যা হচ্ছে। স্বামী হত্যার বিচার ও মেয়ের ভবিষ্যতের জন্য প্রধানমন্ত্রী’র সাহায্য প্রার্থনা করেন কাঞ্চন নাহার নুপুর।
নিহত গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলমের মা মেহেরুন নেছা বলেন, সংসারের প্রয়োজনে কাজ নেয় কাঞ্চন নাহার নুপুর। আর এ কারণে অবুঝ শিশুকে রেখে যেতে হয় বৃদ্ধ শাশুড়িসহ স্বজনদের কাছে। কিন্তু মা’য়ের আদর বঞ্চিত দুধের শিশু রাখা বড় কষ্টের বলে জানান স্বজনরা। ছেলে বউ গার্মেন্টে চলে যাওয়ার পর দুধের শিশু সামাল দিয়ে ঠিকমত সংসারের কাজকর্ম করতে পারেন না নিহত জাহাঙ্গীর আলমের বৃদ্ধ মা। শেষ বসয়ে ছেলে হত্যার বিচার দেখে যেতে চান তিনি।
নিহত মনিরুজ্জামান স্বপনের ছোট ভাই মিজানুর রহমান রিপন বলেন, এ নির্মম হত্যাকান্ডের এক মাস আগে জাহাঙ্গীর আলম নিহত মনিরুজ্জামান স্বপনের গাড়িচালকের কাজ নেয়। এ অসহায় পরিবার ও অবুঝ শিশুর ভবিষ্যতের জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি করেন নিহত মনিরুজ্জামান স্বপনের ভাই।
তিনি আরো বলেন, সাত খুনের মামলাটি আজ রাজনৈতিদক প্রতিহিংসার শিকার। তাই এর বিচার নিয়ে আমাদের সংশয় রয়েছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটাই আবেদন নিহতের সাত পরিবারের সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে এর নিবেপেক্ষ বিচার করার।
এ বিষয়ে মামলার তদন্তে নিয়োজিত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, নিরপেক্ষতা, আন্তরিকতা ও অক্লান্ত পরিশ্রমের কারনে কম সময়ের মধ্যে মুল আসামীদের সন্তাক্ত করে অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে, এক্ষেত্রে কোন প্রকার ছলছাাতুর করা হয় নাই।
মামলার প্রতিবেদনে জানা যায়, ৩৫জনকে মুল আসামি করে হত্যকান্ডের সাথে জড়িত ২২ জন আসামি ও ১৭ জন স্বাক্ষী আদালতে স্বীকৃতি জবানবন্দি দিয়েছেন। এছাড়া ১২৭ জন স্বাক্ষী ও ১৬২টি আলামত ধারা এজাহার প্রতিবেদন দেওয়া হয়।
এর আগে এক স্বাক্ষাতকারে আলোচিত ৭ হত্যকান্ডের মামলার পিপি ফজলুর রহমান জানিয়েছিলেন, সরকারের আন্তরিকতা, তদন্তকারী কর্মকর্তা ও প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের সততার কারনে এত বড় মামলাটি দ্রুত চার্জশিট দাখিল করা গেছে।
বাদীর অভিযোগ প্রসংগে তিনি বলেছিলেন, তদন্ত কর্মকর্তার যদি আন্তরিক না হলে তা হলে তিনি মাত্র ৬জনকে আসামী করেছে, কিন্তু চার্জশিটে আসামী করা হয় ৩৫জন কে তা হলে প্রশ্ন উঠা যুক্তযুক্ত মনে হয় না।
সাত খুনের বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার ডঃ খন্দকার মহিদ উদ্দিন বলেন, হত্যাকান্ডের এক বছরের মাথায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। মামলার তদন্ত তথ্য উপাথ্য যাচাই বাছাই করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে, এখানে কাউকে অযথায় জড়ানো হয় নাই অথবা কাউকে ছাড়ও দেওয়া হয় নাই।
উল্লেখ্য, গত বছর ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকার সহ সাতজনকে অপহরণ করা হয়। এরপর ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ছয়জনের এবং পরদিন আরও একজনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ পৃথক দুটি মামলা হয়। পরবর্তীতে আলোচিত এই হত্যাকান্ডের ঘটনায় এই বছর ৮এপ্রিল পুলিশ ৩৫জন কে আসামী করে আদালতে অভিযোগ পত্র দাখিল করে পুলিশ।