বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
লালমনিরহাট জেলার মেধাবি শিক্ষার্থী সিথি কিবরিয়া আজকের প্রকাশিত এইচএসসি ফলাফলে মানবিক বিভাগ থেকে হাতীবান্ধা উপজেলায় একমাত্র গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে। সিথি মোট ১৩০০ নম্বরের মধ্যে পেয়েছে ১১৪১ নম্বর। সে হাতীবান্ধা উপজেলার আলিমুদ্দিন ডিগ্রী কলেজের একজন শিক্ষার্থী। সিথি এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছিল। সিথি দৈনিক সংবাদ ও বাংলাদেশ বেতারের সাংবাদিক, হাতীবান্ধা আলিমুদ্দিন ডিগ্রী কলেজের অধ্যাপক আলী আখতার গোলাম কিবরিয়ার একমাত্র মেয়ে। এসএসসিতে চক্রান্তের শিকার হয়ে সে মারাত্মক ফল বিপর্যয়ের মুখে পড়েছিল। দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ডের দীর্ঘ তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে চার মাস পর তার ন্যায্য ফল গোল্ডেন এ প্লাস উদ্ধার হয়। কিন্তু বিজ্ঞান বিভাগে তার আর পড়া হয়নি। তাকে এইচএসসিতে মানবিক বিভাগে পড়তে হয়েছে।
২০১৪ সালের এসএসসি পরীক্ষায় ওএমআর শিট জালিয়াতির মাধ্যমে জেলার সেরা মেধাবি শিক্ষার্থী সিথির সর্বনাশ ঘটানো হয়েছিল। এসএসসিতে সে শুধু এ গ্রেড পেয়েছিল। দেখা গেছে, সিথি অন্যান্য বিষয়ে এ প্লাস নম্বর পেলেও বাংলা, সমাজবিজ্ঞান, রসায়ন ও পদার্থবিদ্যা এই চারটি বিষয়ে এ গ্রেড নম্বর পায়। পারিবারিক দ্বন্দ্বের প্রতিশোধ নিতে গিয়ে এই অপকর্মটি করেছিল হাতীবান্ধা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক ও ওই পরীক্ষা কেন্দ্রের সহকারি কেন্দ্র সচিব মাহাতাবউদ্দিন। মাহাতাবউদ্দিনের এই জঘন্য অপকর্মটি দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ডের তদন্তে প্রমাণিত হয়। অবশেষে ২০১৪ সালের অক্টোবর মাসে সিথি গোল্ডেন এ প্লাস লাভ করে। সেসময় মিডিয়ায় এ নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় হয়েছিল।
উল্লেখ্য, সিথি ১ম থেকে ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত বরাবরই প্রথম স্থান অধিকারী একজন শিক্ষার্থী ছিল। এসএসসি টেস্ট পরীক্ষায়ও একমাত্র সে-ই শাহ্ গরবীবুল্যাহ্ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গোল্ডেন এ প্লাস পায়। সিথি ৫ম শ্রেণীর পিএসসি ও ৮ম শ্রেণীর
জেএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন এ প্লাস পেয়ে জেলায় প্রথম হয়। গণিত অলিম্পিয়াডে জেলা চ্যাম্পিয়ন হয় সিথি কিবরিয়া। সে বাংলাদেশ বেতারের একজন তালিকাভুক্ত সঙ্গীত শিল্পী। হাতীবান্ধা শাহ্ গরীবুল্যাহ্ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সেরা শিক্ষার্থী সিথি কিবরিয়া কুলাঙ্গার শিক্ষক মাহাতাবউদ্দিনের চক্রান্তে এসএসসিতে এ প্লাস পায়নি, পেয়েছিল শুধু এ গ্রেড। অথচ এ প্লাস পেয়েছিল ওই বিদ্যালয়ে ওর পেছনের ৪৯ জন শিক্ষার্থী। ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন ভেঙে যাওয়া বিজ্ঞানের তুখোড় ছাত্রী সিথি কিবরিয়া শেষ পর্যন্ত একাদশ বিজ্ঞানে আর ভর্তি হতে পারেনি। সে বাধ্য হয়ে মানবিক বিভাগে ভর্তি হয়। সিথি ওই চারটি বিষয়ের ওএমআর তদন্তের জন্য ১৭ জুন ‘১৪ তারিখে দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে উচ্চতর নিরীক্ষণের জন্য লিখিতভাবে আবেদন জানায়। বোর্ডের তদানীন্তন চেয়ারম্যান প্রফেসর মোঃ আলাউদ্দিন মিয়া বিশেষ বিবেচনায় সিথির আবেদন আমলে নেন এবং তদন্তের ব্যবস্থা করেন। দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ডের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটির দীর্ঘ তদন্তে অবশেষে প্রমাণিত হয়, সিথির ওই চারটি বিষয়ের ওএমআর শিট পরীক্ষা কেন্দ্রেই গায়েব করা হয়েছিল। গায়েব করার পর ওএমআর শিটের পরিবর্তন ঘটিয়ে ৪টি নতুন ওএমআর শিট উদ্দেশ্যমুলকভাবে পূরণ করে প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল যাতে সিথির ফল ভালো না হয়। অবশেষে সিথির ন্যায্য ফল গোল্ডেন এ প্লাস উদ্ধার হয়।
কিন্তু বিজ্ঞানের তুখোড় শিক্ষার্থী সিথির শেষ পর্যন্ত আর বিজ্ঞান পড়া হয়নি। তার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন গুঁড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্ত শিক্ষক মাহাতাবউদ্দিন। সিথি এখন বিচারক হওয়ার স্বপ্ন দেখে। সিথি এখন আইনে পড়াশুনা করতে চায়। পরীক্ষা কেন্দ্রে কোনো পরীক্ষার্থীর ওএমআর শিট শত্রুতামূলকভাবে পরিবর্তন করা এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষাবোর্ডের পক্ষ থেকে এ ধরণের উচ্চতর নিরীক্ষণের ঘটনা বাংলাদেশে এটাই প্রথম ছিল। সিথির মা মাসুদা আখতার কল্পনা হাতীবান্ধার উত্তর সিঙ্গিমারী প্রাইমারি স্কুলের একজন শিক্ষক। সিথির বড় ভাই মাসুদ আল ইসলাম স্বপ্নীল এসএসসি ও এইচএসসিতে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ (এআইএস) অনার্সে ৩য় বর্ষে লেখাপড়া করছে।
(একজন সাংবাদিকের কলম থেকে নেয়া)