নারায়ণগঞ্জ,বিজয় বার্তা ২৪
নারায়ণগঞ্জে সাম্প্রতিক সৃষ্ট শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনায় উষ্মা প্রকাশ করে এর পেছনে শ্রমিক নেতাদের ইন্ধন চিহ্নিত করেছে গার্মেন্ট মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ। এজন্য ওইসব শ্রমিক নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছে এ সংগঠনটি। তারা মনে করছে, এভাবে তারা একটি শ্রমিকঘন শিল্পের শিল্প কারখানার কমান্ডিং চেইনকে ধ্বংস করার পায়তারা করছে। কারণ ইতোপূর্বে নারায়ণগঞ্জে যতগুলো শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা ঘটেছে, তার সবগুলোই বিকেএমইএ, শিল্প পুলিশ, শ্রমিক নেতৃবৃন্দ-সকল পক্ষকে নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা হয়েছে। এ শিল্পকে রক্ষা করার জন্য বর্তমান সরকার সর্বোতভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে। আমরা কোনভাবেই চাই না এই শিল্পের অবিশাস্য সম্ভাবনা ক্ষুদ্র কোন গোষ্ঠি বা ব্যক্তির ব্যক্তিস্বার্থের কারনে ভুলুন্ঠিত হয়ে যাক বা নষ্ট হয়ে যায়। কারণ এ শিল্পের সাথে পয়তাল্লিশ লক্ষ শ্রমিক এবং তাদের পরিবারের ভাগ্য জড়িত।
বিকেএমইএ এর ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, বর্তমান সরকার শিল্প-বান্ধব সরকার এবং একইসাথে শ্রমিক-বান্ধব সরকার। গার্মেন্টস শিল্প একটি শ্রমঘন শিল্প হওয়ায় কখনও কখনও এখানে শ্রম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটে। এমনকি ভবিষ্যতেও এ ধরনের শ্রম শৃঙ্খলারহিত ঘটনার আশংকাও অমূলক নয়। এ কারনেই বিকেএমইএ সদস্যভুক্ত সকল প্রতিষ্ঠানসমূহকে যে কোন ধরনের শ্রম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির বিবরণ লিখিতভাবে বিকেএমইএকে অবহিত করার জন্য এবং বিকেএমইএ, শিল্প পুলিশ, শ্রমিক নের্তৃবৃন্দ– সকল পক্ষকে নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের নির্দেশনা দিয়ে রেখেছে। এমনকি বাংলাদেশের সমস্ত শ্রমিক সংগঠনের নের্তৃবৃন্দকে নিয়ে বিকেএমইএ একটি আলোচনা সভা করেছিলো; যেখানে সমস্ত শ্রমিক নের্তৃবৃন্দকে যে কোন সমস্যা সমাধানের জন্য প্রথমে বিকেএমইএ’র সাথে আলোচনা করার অনুরোধ জানানো হয়েছিলো। অধিকাংশ শ্রমিক সংগঠনগুলো সে মোতাবেক কাজ করে আসছিলো। সে কারনেই নারায়ণগঞ্জে যতগুলো শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা ঘটেছে, তার সবগুলোই বিকেএমইএ, শিল্প পুলিশ, শ্রমিক নের্তৃবৃন্দ-সকল পক্ষকে নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা হয়েছে। নীট শিল্প এবং বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বুনিয়াদের হাতিয়ার। এই শিল্পকে রক্ষা করার জন্য বর্তমান সরকার সর্বোতভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে। বিকেএমইএ সরকারের এই প্রচেষ্ঠার একটি অনুগামী এবং অনুসরণশীল প্রতিষ্ঠান। আমরা কোনভাবেই চাই না এই শিল্পের অবিশাস্য সম্ভাবনা ক্ষুদ্র কোন গোষ্ঠি বা ব্যক্তির ব্যক্তিস্বার্থের কারনে ভুলুন্ঠিত হয়ে যাক বা নষ্ঠ হয়ে যায়। কারন এই শিল্পের সাথে পয়তাল্লিশ লক্ষ শ্রমিক এবং তাদের পরিবারের ভাগ্য জড়িত।
এদিকে বিকেএমইএ চিঠিতে এও উল্লেখ করেন, সাম্প্রতিককালে সেলিম মাহমুদ (গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট, নারায়ণগঞ্জ) এবং হাফিজুল ইসলাম (ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, নারায়ণগঞ্জ) নামের দুইজন তথাকথিত শ্রমিক নের্তৃবৃন্দ তাদের ২/৪ জন সহকর্মী নিয়ে প্রায়শই সাধারণ শ্রমিকদের ভুল বুঝিয়ে রাস্তায় নামিয়ে বিক্ষোভ/সমাবেশ আয়োজন করছে। ফলে একদিকে শহরের রাস্তাঘাট ব্যবসা-বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে যানজটে আটকে থাকছে, আবার অন্যদিকে তা শান্তিপূর্ণ শিল্প পরিবেশকে অশান্ত হতে উস্কে দিচ্ছে। যেখানে নারায়ণগঞ্জের সকল গার্মেন্টস শিল্প কারখানার যে কোন শ্রমবিশৃঙ্খল পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের জন্য আলোচনার পথ খোলা রেখেছে। সেখানে বিকেএমইএ/নারায়ণঞ্জ চেম্বার অব কর্মাস এন্ড ইন্ডাস্ট্রি/ ৪০টি ব্যবসায়ী সংগঠনের সাথে আলোচনা বা অবহিত না করে ইচ্ছেমতো শ্রমিকদের নিয়ে রাস্তায় নেমে পরার তাদের এই অভিপ্রায়কে আমাদের কাছে দুরভিসন্ধিমূলক মনে হয়েছে। তাছাড়া শিল্প পুলিশ থাকা সত্বেও তাদের তোয়াক্কা না করে আন্দোলনের নামে জনদুর্ভোগ তৈরী করাও কোন সমাবেশের লক্ষ্য হতে পারে বলে আমরা মনে করি না। এ ক্ষেত্রে যে কোন ধরনের সমাবেশের পূর্বে—- তা সে রাজনৈতিক, সামাজিক বা শ্রম অসন্তোষঘটিত যাই হোক না কেন— সেক্ষেত্রে মেয়র জেলা প্রশাসক থেকে পূর্বানুমতি নেয়া প্রয়োজন বলে বিকেএমইএ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে।
তাছাড়া শ্রম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে শ্রম আইনে কিছু গাইডলাইন প্রদান করা আছে। কিন্তু উক্ত তথাকথিত দুই শ্রমিক নেতা শ্রম আইনের ঐসব ধারাগুলোকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিজেদের ইচ্ছেমতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে শ্রমিকদের পথে নামিয়ে দিচ্ছে। ফলে তারা শুধু নাগরিক দুর্ভোগ এবং শিল্প ব্যবস্থাপনাকে নষ্ট করছে না, একইসাথে তারা রাষ্ট্রিয় আইনকেও অমান্য করছে। এভাবে তারা একটি শ্রমিকঘন শিল্পের শিল্প কারখানার কমান্ডিং চেইনকে ধ্বংস করার পায়তারা করছে বলে আমাদের কাছে মনে হচ্ছে। আমরা কোন ভাবেই চাই না এই শিল্পের অবিশাস্য সম্ভাবনা ক্ষুদ্র কোন গোষ্ঠি বা ব্যক্তির ব্যক্তিস্বার্থের কারনে ভুলুণ্ঠিত হয়ে যাব। কারন এ শিল্পের সাথে পয়তাল্লিশ লক্ষ শ্রমিক এবং তাদের পরিবারের ভাগ্য জড়িত।