বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
৩৫তম প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষ্যে সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার উদ্যোগে ন্যায্য মজুরী, গণতান্ত্রিক শ্রম আইন প্রণয়ন, শ্রমিকের নিরাপত্তা, সৌমিত্র কুমার দাস ও আহম্মেদ জীবনসহ গ্রেফতারকৃত নেতাদের মুক্তিসহ বিভিন্ন দাবীতে ২নং রেলগেইট সৈয়দ আলী চেম্বারে ২০ জানুয়ারী বিকাল ৩টায় শ্রমিক সমাবেশ ও শহরে লাল পতাকা মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি আবু নাঈম খান বিপ্লবের সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট কেন্দ্রিয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের অন্যতম শীর্ষ নেতা কমরেড রাজেকুজ্জামান রতন। আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ নারায়ণগঞ্জ জেলা সমন্বয়ক কমরেড নিখিল দাস, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ণ কেন্দ্র নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি হাফিজুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর অসিত বরণ বিশ্বাস, গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট কেন্দ্রিয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি সেলিম মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম গোলক, সহ-সভাপতি সাইফুল ইসলাম শরীফ, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সহ-সভাপতি এম.এ. মিল্টন, রি-রোলিং স্টিল মিলস্ শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি জামাল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক এস.এম. কাদির।
কমরেড রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, গণতান্ত্রিক শ্রম আইন, ট্রেড ইউনিয়ন অধিকারের দাবীতে শ্রমিকরা দীর্ঘদিন যাবৎ আন্দোলন করছে। ২০০৬ সালের শ্রম আইন, ২০১৩ সালের সংশোধিত শ্রম আইন, ২০১৫ সালের বিধিমালা সবক্ষেত্রেই শ্রমিকের অধিকার সংকুচিত করা হয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধান, আইএলও কনভেনশনের কথা বলা হলেও শ্রমিকদের সংগঠিত হওয়ার অধিকার না দেয়ার ক্ষেত্রে মালিক এবং সরকার ঐক্যবদ্ধ। তাঁরা জানে সংগঠিত হওয়ার অধিকার ছাড়া শ্রমিক অসহায়।
কমরেড রতন বলেন, শ্রমিক শ্রম দিয়ে সম্পদ তৈরী করে আর মালিক শ্রমিককে মজুরী কম দিয়ে মুনাফা করে। তাই ন্যায্য মজুরীর দাবি তুললেই মালিক শ্রেণী ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী ১৫০০০ টাকার নীচে কোন মানুষ স্বাভাবিক জীবন ধারন করতে পারে না। সরকার পে-স্কেলের সর্বনি¤œ বেতন নির্ধারণ করেছে ৮২৫০ টাকা যাতে মোট বেতন হয় ১৪৫০০ টাকা। সরকারী কর্মচারীদের পেনশনসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা আছে, তা স্বত্বেও এ টাকায় জীবন যাপন করা সম্ভব নয়। অতীতে সব সময় পে-স্কেলের তুলনায় শ্রমিকদের মজুরী বেশি থাকতো। জীবন যাত্রার ব্যয় বেড়েছে বলে এমপি, মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি সবার বেতন বেড়েছে। অথচ মজুরী বৃদ্ধির দাবীতে আশুলিয়ার শ্রমিকরা আন্দোলন করায় গ্রেফতার, নির্যাতন, ছাঁটাই করে মালিক-সরকার আন্দোলন দমন করছে। ২০০৭ সালে বাতিল হওয়া বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৬(২) ধারায় শ্রমিক ফ্রন্ট নেতা সৌমিত্র কুমার দাস, আহম্মেদ জীবনসহ শ্রমিক নেতাদের এক মাস যাবৎ কারারুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। খেয়াল রাখা দরকার দমন-পীড়ন চালিয়ে অতীতেও কখনও বেশিদিন কন্ঠরোধ করে রাখা যায় নি এবারও সেটা সম্ভব হবে না।
নেতৃবৃন্দ বলেন, মালিকের মুনাফা বাড়ে, ধনী আরও ধনী হয় আর শ্রমিক মজুরীর চক্করে ঘুরপাক খেতে থাকে। এমনকি মজুরী বাড়লেও তার জীবন মান বাড়ে না। শ্রমিকের সন্তান আবার শ্রমিক হয়। জীবনের অভিজ্ঞতা ও সমাজ বদলের ইতিহাস আমাদেরকে এই শিক্ষা দেয় যে, শোষনমূলক সমাজ পাল্টানো ছাড়া এই দুষ্টচক্রের হাত থেকে শ্রমিকের মুক্তি নাই। তাই ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার আন্দোলনকে আজ সমাজ পরিবর্তনের আন্দোলনে রূপ দিতে হবে।