বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়া শহীদ মিনারে “বাঁচাও নদী শীতলক্ষ্যা” শীর্ষক তিনদিনের গণসচেতনমূলক আলোকচিত্র প্রদর্শনীর সমাপনী দিনেও ছিল দর্শনার্থীদের ভীড়। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে নারায়ণগঞ্জ সরকারী তোলারাম কলেজ, নারায়ণগঞ্জ সরকারী মহিলা কলেজ, নারায়ণগঞ্জ কলেজ, নারায়ণগঞ্জ কমার্স কলেজ, নারায়ণগঞ্জ হাইস্কুল এন্ড কলেজ, চাষাঢ়া আদর্শ শিশু সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ছাড়াও বিশিষ্টজনরা আলোকচিত্র প্রদর্শন করেছেন। এসেছিলেন বিভিন্ন বয়সী নারী পুরুষরাও। অনেকে আবার দল বেধে সেলফিও তুলেছেন। মন্তব্য বইয়ে নানা ধরনের মন্তব্য করেছেন নদী দূষণ নিয়ে। দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন ফোজিত শেখ বাবুর এই আন্দোলনের পাশে থাকার।
দুপুরে প্রদর্শনীর উদ্যোক্তা দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশের ফটো সাংবাদিক ফোজিত শেখ বাবুকে ফুলেল সংবর্ধনা জানান পরিবেশবাদী সংগঠন নির্ভীকের প্রধান সমন্বয়ক এটিএম কামাল। এসময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি শফিউদ্দিন আহম্মেদ বিটু, দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি শরীফ সুমন, নির্ভীকের আঞ্চলিক সমন্বয়ক মাকিদ মোস্তাকিম শিপলু, শিক্ষক শিউলি আক্তার, জাহাঙ্গীর হোসেন, নাহিন মুজতাবা সোহান প্রমুখ।
এর কিছুক্ষণ পরে বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সবুজ শিকদারের নেতৃত্বে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা এসেছিলেন নদী দূষণের ভয়াবহতার চিত্রকে প্রত্যক্ষ করতে। শীতলক্ষ্যা দখল ও দূষণের বিভিন্ন স্থানের বিষয়েও ফোজিত শেখ বাবুর সঙ্গে কথা বলেন তারা।
বিকেলে শেষ বেলায় আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে আসেন জেলা ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি ও মহানগর আওয়ামীলীগের সহসভাপতি চন্দন শীল এবং নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রিজের পরিচালক ফারুক বিন ইউসুফ পাপ্পু। এসময় তারা এ ধরনের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান এবং নারায়ণগঞ্জবাসীকে সচেতন হিসেবে গড়ে তুলতে আবারো এ ধরনের আলোকচিত্র আয়োজনের আহবান জানান।
পরিদর্শন শেষে পরিবেশবাদী সংগঠন নির্ভীকের প্রধান সমন্বয়ক এটিএম কামাল বলেন, শীতলক্ষ্যাকে হত্যা করে যারা লাভবান তারা নারায়ণগঞ্জবাসীকে পরিবেশ বিপর্যয়ে ফেলে যে অপরাধ করেছে তা মানবতা বিরোধী অপরাধের পর্যায়েই পড়ে। শীতলক্ষার দূষিত পানির কারনে নারায়ণগঞ্জের হাজারো মানুষ বিভিন্ন প্রানঘাতি রোগে ভুগছে। এখনই শীতলক্ষা নদীকে বাঁচাতে কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়া হলে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম এই দূষিত পানির প্রভাবে ভুগবে। আর এভাবেই নারায়ণগঞ্জ এক সময় বসবাসের অযোগ্য জনপদ হয়ে যাবে। শীতলক্ষার এ অবস্থার জন্য যারা দায়ী তাদের বিচার ও ক্ষতিপূরন দাবি করছি। শীতলক্ষ্যা বাচাঁনোর দাবিতে আমরা দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলন করছি। কিন্তু শীতলক্ষ্যার দূষণের যে ভয়াবহতা সেটা বাবু আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। আমরা এ ধরনের প্রদর্শনী আরো আয়োজনের আহবান জানাচ্ছি।
পরিদর্শন শেষে বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সবুজ শিকদার বলেন, আজকে শীতলক্ষ্যা নদী দূষণের ভয়াবহতার সবচেয়ে বেশী দুর্ভোগের সম্মুখীন হচ্ছেন নৌযান শ্রমিকরা। শীতলক্ষ্যার পানি অনেকদিন আগেই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এখন শীতলক্ষ্যার বর্জ্যের কারণে মেঘনা নদীর পানিও ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। আগে বিভিন্ন নৌযানের শ্রমিকরা মেঘনা থেকে পানি এনে ব্যবহার করতো। কিন্তু বর্তমানে ষাটনল পর্যন্ত মেঘনার পানিতেও উৎকট গন্ধ বিরাজ করছে।
এদিকে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে আগত শিক্ষার্থীদের দাবি শীতলক্ষ্যাকে বাচাতে শুধু কোন একটি সংস্থার উপর নির্ভর করে নয় প্রয়োজন সমন্বিত পদক্ষেপ। এজন্য গড়ে তুলতে হবে গণসচেতনতা। কারণ যে শীতলক্ষ্যাকে ঘিরে একসময় গড়ে উঠেছিল প্রাচ্যের ডান্ডি সেই শীতলক্ষ্যা না থাকলে নারায়ণগঞ্জ হারাবে প্রাণ।
গত ৮ নভেম্বর থেকে দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশের ফটো সাংবাদিক ফোজিত শেখ বাবুর নিজস্ব উদ্যোগে শীতলক্ষ্যা দখল ও দূষণমুক্ত করার দাবিতে ও ‘বাঁচাও নদী শীতলক্ষ্যা’ (Save the River Sitalakshya) শীর্ষক গণসচেতনতামূলক ৩ দিনব্যাপী আলোকচিত্র প্রদর্শনী নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শুরু হয়। প্রদর্শনী চলে সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৫টা অবধি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি শামীম ওসমান ও উদ্বোধক হিসেবে জেলা পরিষদ প্রশাসক ও জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য এটি দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশের স্টাফ ফটো সাংবাদিক ফোজিত শেখ বাবুর চতুর্থ আলোকচিত্র প্রদর্শনী। এর আগে জাতীয় জাদুঘরে ও রূপগঞ্জে ‘বাঁচাও নদী শীতলক্ষ্যা’(Save the River Sitalakshya) শীর্ষক গণসচেতনতামূলক আলোকচিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া ফ্রান্স কালচারাল সেন্টারের সঙ্গে ফোজিত শেখ বাবুর যৌথ ভাবে আলোকচিত্র প্রর্দশনী ‘বাঁচাও নদী বুড়িগঙ্গা’ শীর্ষক গণসচেতনতামূলক আলোকচিত্র প্রদর্শনী আগামী ১০ ডিসেম্বর থেকে ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রদর্শনী চলবে ধানমন্ডির আঁলিয়াস ফ্রান্সেসে।