নারায়ণগঞ্জ,বিজয় বার্তা ২৪
নারায়ণগঞ্জ-৫(শহর-বন্দর) আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ধামগড় ইউনিয়নের হালুয়াপাড়া এলাকায় নির্মানাধীন শেখ জামাল জন্য আরও ৫০ লাখ টাকার চেক প্রদান করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত স্কুলটিতে মোট অনুদানের পরিমান দাড়ালো ২ কোটি টাকা এবং সেলিম ওসমানের ব্যক্তিগত তহবিল থেকে নির্মানাধীন ৭টি স্কুলে মোট ১৬ কোটি ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা প্রদান করা হলো।
সোমবার ২৫ এপ্রিল বিকেল ৫টায় হালুয়াপাড়া এলাকায় অবস্থিত শেখ জামাল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে স্কুল পরিচালনা পর্ষদ ও এলাকাবাসীর সাথে মত বিনিময় শেষে সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান স্কুল পরিচালনা পর্ষদের নেতৃবৃন্দের হাতে ৫০ লাখ টাকার চেক তুলে দেন।
শেখ জামাল উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি সভাপতি মাসুম আহম্মেদ এর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের সহ ধর্মিনী নাসরিন ওসমান।
এ সময় সেলিম ওসমান বলেছেন, আমরা শিক্ষার পাশাপাশি যুবক-যুবতীদের উদ্যোক্তা বানানোর চেষ্টা করছি। ইতোমধ্যেই ৫’শ নারীকে সেলাই মেশিন ও ৩’শ যুবককে চলতি মূলধন করা হয়েছে। আগামীকাল আরও ৩’শ জন যুবককে উদ্যোক্তা বানাতে আলোচনা করা হবে। আমি একটাই স্বপ্ন দেখি হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে এনে আধুনিক নারায়ণগঞ্জ গড়া। বন্দরে কোন অশিক্ষিত নয় ভবিষ্যত প্রজন্ম হবে ডিগ্রিধারী, সকল যুবক-যুবতী হতে আর্ত্মনির্ভর বাস্তবায়ন হবে একটি বাড়ি একটি ঘর।
ভবিষ্যত প্রজন্মের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমি আমার লাশ বন্দরে দাফন করার কথা বলেছি। যাতে করে আমার কবর দেখিয়ে ভবিষ্যত প্রজন্ম বলতে পারে ওই মানুষটি আমাদের কথা বলেছে, শান্তির প্রতিষ্ঠার কথা বলেছে, উন্নয়নের কথা বলেছে। যদি একজন মানুষও এমন বলে উদ্বৃত্ত হয় তবে সেটাই হবে আমার সার্থকতা।
নাসিম ওসমান সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, নাসিম ওসমান আমার বড় ভাই হয়েও আমাকে তার বড় ভাইয়ের মত সম্মান করতেন। তার জায়গায় আপনারা আমাকে স্থলাভিষিক্ত করেছেন। আমাকেও নাসিম ওসমানের সম্মান রাখতে হবে। আমি বঙ্গবন্ধুর আর্দশের একজন সৈনিক। নাসিম ওসমান বঙ্গবন্ধুর হত্যার প্রতিশোধ নিতে নব বিবাহিত বধূকে রেখে বাংলাদেশের বাইরে গিয়ে ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী নাসিম ওসমানের সম্মানে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন লাঙ্গলের জন্য ছেড়ে দিয়েছেন। উনি ইচ্ছা করলে আমাকে নৌকা মার্কা দিয়ে নির্বাচন করতে বলতে পারতেন কিন্তু উনি আসনটি লাঙ্গলের জন্য ছেড়ে দিয়েছেন।
তিনি শত্রুকে আলিঙ্গন করতে চান উল্লেখ করে বলেন, ৭৫’র পর আমাকে নির্যাতন করা হয়েছে। বাবাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বড় ভাই দেশ ছাড়া হয়েছে। আমাদের ব্যাংক একান্ডট জব্দ করে বাড়ি নিলামে তোলা হয়েছে। আমাদেরকে তখন পথে বসিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তখন নারায়ণগঞ্জের মানুষ আমাদের বাড়ি রক্ষা করে ছিলো। আমরা নারায়ণগঞ্জের মানুষের ভালোবাসার কাছে ঋণী। আবার এই নারায়ণগঞ্জেরই কিছু মানুষ আমাদের নারায়ণগঞ্জ থেকে চলে যেতে বাধ্য করেছে। আমার বাড়িতে গুলি করেছে আমার কারখানা দখল করেছে আমাকে জেলে পাঠিয়েছে। কিন্তু আমি তাদের প্রতি কোন প্রতিশোধ নেই নাই। আমি একটি স্কুলে যে টাকা খরচ করেছি এমন একটি স্কুলের টাকা দিয়ে ইচ্ছা করলে আমি আমার শরীরে একটি দাগের বদলে ৫০টি দাগ বসাতে পারতাম। কিন্তু আমি সেটি করি নাই। আমি তাদের সাথে নিয়ে বসে খাবার খেয়েছি। আমি শত্রুকে আলিঙ্গন করতে চাই। আমি কোন শত্রুতা চাই না। আমি শান্তি চাই। সকলে একত্রে উন্নয়ন করতে চাই।
মঞ্চে উপস্থিত বন্দর থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি এম এ রশিদকে উদ্দেশ্য করে সেলিম ওসমান বলেন, আমরা ২১ ফেব্রুয়ারী সম্পর্কে রচনা প্রতিযোগীতার আয়োজন করেছি। ইতোমধ্যে ফলাফলে ১০ লাখ টাকা পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে। আগামী ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুর শাহাদাৎ বার্ষিকীতে বঙ্গবন্ধুর উপর রচনা প্রতিযোগীতার আয়োজন করছি। আমরা বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে বন্দর সমরক্ষেত্রে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে ৩০০ পাউন্ডের কেক কেটে জন্মদিন পালন করেছি। কিন্তু নারায়ণগঞ্জে আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে ৩০ পাউন্ডের কোন কেক কাটা হয়নি।
তিনি বলেন, আমি আপনাদের এক বছর অপেক্ষা করতে বলেছি। সেলিম ওসমান কথায় হাতিরঝিল নয় আপনাদের সাথে নিয়ে লাঙ্গলবন্দে হাতিরঝিলের থেকে ভাল কিছু করবো। পাশাপাশি সাবদী ও সমরক্ষেত্রেও ব্যাপক উন্নয়ন করা হবে আপনাদের আনন্দ ও বিনোদনের জন্য উপযুক্ত করে গড়ে তোলা হবে সমরক্ষেত্র মাঠ।
জামায়াতে নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, যারা ৭৫এর সাবালক হয়ে ভুল তথ্য জেনে জামায়াতের সাথে সম্পৃক্ত হয়েছেন। তাদেরকে আমি আহবান রাখবো সঠিক ইতিহাস জানেন। প্রকৃত সত্য ইতিহাসের বই পুস্তক করে সঠিক ইতিহাস জেনে বঙ্গবন্ধুর আর্দশের রাজনীতি আসুন। আমার হাত প্রসারিত রয়েছে আসেন একসাথে উন্নয়নের কাজে অংশ নেন।
এ সময় আরও জেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক আবুল জাহের, যুগ্ম আহবায়ক আফজাল হাসেন, জেলা মহিলা পার্টির সাধারণ সম্পাদিকা আলেয়া বেগম, বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কালাম হোসেন মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন, বন্দর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন, মদনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম এ সালাম, ধামগড় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী কামাল হোসেন সহ ইউনিয়ন পরিষদের প্রতিটি ওয়ার্ডের সদস্য সহ এলাকার প্রায় সহ¯্রাধিক নারী-পুরুষ সহ এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিরা।
উল্লেখ্য সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান ২০১৪ সালের ২৬ জুন উপনির্বাচনে নির্বাচিত হওয়ার পর শিক্ষার মানোন্নয়নে তার নির্বাচনী এলাকার আওতাধীন ৭টি ইউনিয়নে ব্যক্তিগত তহবিল থেকে সাড়ে ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭টি স্কুল নির্মানের ঘোষণা দেন। ঘোষণা মোতাবেক এখন পর্যন্ত ১৬ কোটি ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। যার মধ্যে বন্দরে মুছাপুর ইউনিয়নে শামসুজ্জোহা এমবি ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ে ৪ কোটি ৪২ লাখ ৫০ হাজার, বন্দর ইউনিয়নে নাসিম ওসমান মডেল হাইস্কুলে ২ কোটি ৭০ লাখ, কলাগাছিয়া ইউনিয়নে আলহাজ্ব খোরশেদুন্নেছা হাইস্কুলে ১ কোটি ৫০ লাখ, পিআর সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ে ৫০ লাখ টাকা, মদনপুর ইউনিয়নে নাগিনা জোহা উচ্চ বিদ্যালয়ে ১ কোটি ৯০ লাখ টাকা, ধামগড় ইউনিয়নে শেখ জামাল উচ্চ বিদ্যালয়ে ২ কোটি টাকা, সদর উপজেলার গোগনগর ইউনিয়নের পুরান সৈয়দপুর বঙ্গবন্ধু হাইস্কুলে ২ কোটি ১০ লাখ, আলীরটেক ইউনিয়নের কুড়েপার শেখ রাসেল উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬৫লাখ টাকা। এছাড়াও তিনি বন্দরে কদমরসুল কলেজের উন্নয়নে ব্যক্তিগত তহবিল ও ব্যবসায়ীদের সহযোগীতায় ১০ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ করার ঘোষণা দিয়েছেন।