বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
১৯৭৫ সাল!! বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের শাস্তির দাবিতে ৮ম শ্রেনিতে পড়ুয়া এক কিশোর নিজ হাতে দেয়ালিকা লিখে যখন প্রতিবাদ জানাচ্ছিলো ঠিক তখনই তৎকালীন পুলিশের দ্বারা নির্যাতিত হয় সে কিশোর। বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার দাবী করাতে তারই পিঠে ভাঙ্গা হয় তারই সাইকেল। হ্যাঁ,সেদিনের কিশোরই আজকের শামীম ওসমান।
নারায়নগঞ্জ তথা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে শামীম ওসমান অন্যতম আলোচিত এবং প্রভাবশালী নেতাদের মধ্যে অন্যতম। ৮০ দশকে ছাত্র রাজনীতির মাধ্যমে রাজনীতিতে অভিষেক হয় শামীম ওসমানের। প্রথমে নারায়নগঞ্জ সরকারি তোলারাম কলেজের ভিপি,পরবর্তীকাল বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হিসেবে শামীম ওসমানের ভূমিকা ছিলো অতুলনীয়। ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের মনোনীত সাংসদ সদস্য নির্বাচিত হন! পরবর্তীতে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক হিসেবে দাযয়ত্ব পালন করেন। বলা যায় ১৯৯৬-২০০১ ছিলো শামীম ওসমানের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের স্বর্নযুগ। এ সময় তার সাহসিকতা এবং মেধা তাকে নিয়ে যায় আলোচনার র্শীষে। ২০০০সালে তোলারাম কলেজের কলা ভবনের ভিত্তি প্রস্থর স্থাপনের সময় হাসান ইমামসহ উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পর্যায়ের বেশ কয়েকজন বুদ্ধিজীবি! প্রসঙ্গত: কলা ভবনের নামকরনের কথা ছিলো শামীম ওসমানের পিতা শামসুজ্জোহা সাহেবের নামে কিন্তু শামীম ওসমানের প্রস্তাবনায় শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নামে কলা ভবনের নামকরন করা হয়। উপস্থিত অতিথিরা শামীম ওসমানের বক্তব্যে আবেগ আপ্লুত হয়ে পরেন এবং তাকে কিছু একটা ঘোষনা দিতে বলেন। ঠিক তখনই শামীম ওসমান নারায়নগঞ্জের পবিত্র মাটিতে গোলাম আযমকে অবাঞ্চিত ঘোষনা করেন এবং নারায়নগজ্ঞের পবিত্র মাটিতে গোলাম আযম ও কুকুরের প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষনা করেন। প্রসঙ্গত: ছাত্রাবস্থায় এই শামীম ওসমানই মুজাহিদের মাথা ফাটিয়ে ছিলেন। তার কিছুদিন পর তৎকালীন পৌর পাঠাগারে প্রতীকি ফাঁসির মঞ্চে ঝুলানো হয় গোলাম আযমদের। সেই প্রতীকি মঞ্চে আইনজিবীর ভূমিকা পালন করে শামীম ওসমান পুত্র অয়ন ওসমান। যা বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তিকে দারুনভাবে উজ্জীবিত করে। নারায়নগঞ্জের শতবর্ষের পুরোনো কলংঙ্ক “পতিতা পল্লী” শামীম ওসমানের হাত ধরেই মোচন হয়। পুনর্বাসনের মাধ্যমে নারায়নগঞ্জ থেকে পতিতা পল্লী’র বিলুপ্তি ঘটান শামীম ওসমান। যার ফলে শামীম ওসমান দেশব্যাপী ব্যাপক প্রশংসিত হন। ঐ সময়ের উল্লেখযোগ্য ঘটনার মধ্যে “খালেদা জিয়ার”লং মার্চ আটকে দেয়াতে শামীম ওসমান সমালোচিত হন! দলীয় হাই কমান্ডের তথ্য ছিলো ঐ লংমার্চে বোমা বিস্ফোরনের মাধ্যমে তৎকালীন আওয়ামীলীগ সরকার পতনের আন্দোলনের ইস্যু তৈরি করা,যা শামীম ওসমানের হস্তক্ষেপে বিএনপির পরিকল্পনা বানচাল হয়ে যায়। এর প্রতিশোধ হিসেবে ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসা খালেদা জিয়া শামীম ওসমানকে উদ্দেশ্য করে জাতীয় সংসদে বলেন “তোকে দেখে নেবো”! খালেদা জিয়ার সেই দেখে নেয়ার ভয়াবহতার প্রতিফলন ঘটে ১৬ জুন চাষারার বোমা হামলা। সেই হামলা কেড়ে নেয় ২০ টি তরতাজা প্রান! আহত হন প্রায় অর্ধশতাধিক মানুষ। ভাগ্যক্রমে শামীম ওসমান বেঁচে ফিরলেও এখনো শরীরের ভিতরে বয়ে বেডাচ্ছেন শতশত স্প্রিন্টার,যা প্রতিনিয়ত মৃত্যু কষ্ট দিচ্ছে তাকে। পরবর্তী সময়ে দলীয় সভানেত্রীর নির্দেশে শামীম ওসমান কিছু সময় দেশের বাইরে অবস্থান করেন এবং চিকিৎসা গ্রহন করেন। পুনরায় দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে দেশে ফিরে দল ও দেশের জন্য কাজ করা অব্যাহত রাখেন।
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন এখন সময়ের দাবি। আর কিছুদিন পরেই ঘোষণা করা হবে এর তফসিল। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে নির্বাচন হচ্ছে এই সম্ভাবনাকে পূঁজি করে বন্দরের ৯টি ওয়ার্ডের সম্ভাব্য প্রার্থী-সমর্থকরা পুরোদমে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে।