নারায়ণগঞ্জ,বিজয় বার্তা ২৪
বয়সে ছোট হলেও রাজনৈতিকভাবে শামীম ওসমান তার শ্রদ্ধার পাত্র বলে স্বীকার করে নারায়ণগঞ্জ-৫(শহর-বন্দর) আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান বলেছেন, আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন আমি হায়াত চাই। নারায়ণগঞ্জের মানুষের জন্য যতক্ষন জীবন চলবে ততক্ষন গোলামি করে যেতে চাই। আমরা শরীরের যা অবস্থা কখন কি হয়ে যায় জানি না। আপনারা শামীম ওসমানকে ভবিষ্যতে এমপি বানান আর নাই বা বানান সকল বিপদে আপদে আপনারা শামীম ওসমানের পাশে থাকবেন । আমার ফতুল্লার সন্তান। আমি ফতুল্লার ভোটার। আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও ফতুল্লায়। শামীম ওসমান ফতুল্লার সংসদ সদস্য আমি শামীম ওসমানকে আপনাদের হাতে তুলে দিয়ে গেলাম। আপনারা সব সময় তার পাশে থাকবেন। যেমন করে অতীতে আপনারা নারায়ণগঞ্জের মানুষ আমাদের পরিবারের পাশে ছিলেন।
শনিবার(১২ মার্চ) বাদ আছর ফতুল্লা ডিআইটি মাঠে ভাষা সৈনিক নাগিনা জোহার আত্মার মাগফেরাত কামনায় তার পরিবারের পক্ষ থেকে আয়োজিত দোয়ার পূর্বে সকলের উদ্দেশ্যে সেলিম ওসমান এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, বাইতুল আমান থেকেই আমাদের সংগ্রাম শুরু। এখন সংগ্রাম চলছে। আমরা এখন উন্নয়নের জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছি। ৭৫ সালে নাসিম ওসমান নব বধূকে ফেলে রেখে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিশোধ নিতে বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়ে ছিলো। তার প্রথম সন্তানের জন্মের সময় যে দেশের বাইরে ছিল প্রথম ৩ বছর সে তার সন্তানের মুখ দেখতে পারে নাই। বিএনপি ক্ষমতায় এসে আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল করে নিয়েছে। শামীম ওসমানের নামে মামলা দেওয়া হয়েছে। শামীম ওসমান তাতেও মনোবল হারায় নাই। মায়ের নির্দেশ ছিল যতক্ষন জীবন থাকবে ততক্ষন নারায়ণগঞ্জের মানুষের কল্যানে কাজ করে যেতে হবে। আমি বোধ হয় শামীম ওসমানকে রাজনৈতিকভাবে বড় একটা ক্ষতি করে দিয়েছি। শামীম ওসমান দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায় নাই। আমিই তাকে বেঁচের থাকার জন্য চলে যেতে নির্দেশ দিয়ে ছিলাম। মানুষের ভুল ত্রুটি হতেই পারে। আমার কোন ভুল হয়ে থাকলে ক্ষমা চাইছি। সাংবাদিক ভাইদের কাছে আমি অনুরোধ রাখছি কোন কিছু লিখার আগে সত্য মিথ্যা একটু যাচাই করে নিবেন। নারায়ণগঞ্জের একটি পত্রিকা শামীম ওসমানকে হিন্দু বানানোর চেষ্টা করেছে। তার মাথায় মুকুট পরিয়েছে। তাকে সন্ত্রাসী বানিয়েছে। নারায়ণগঞ্জে ৪০০ বছরের কলঙ্ক পতিতা পল্লী উচ্ছেদ করায় শামীম ওসমানকে সন্ত্রাসী বানানো হয়েছে। আমি বলতে চাই এই পতিতাপল্লীর কারনে আগে মানুষ নারায়ণগঞ্জকে পতিতাপল্লীর শহর বলতে। শামীম ওসমান সেই কলঙ্ক থেকে নারায়ণগঞ্জের মানুষকে মুক্ত করেছে। এমন ভাল কাজের জন্য হলে আমরা আরও সন্ত্রাস করবো।
২০০১ সালে চাষাঢ়া আওয়ামীলীগের অফিসে বোমা হামলার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, শামীম ওসমানকে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছিল। শামীম চন্দনকে দায়িত্ব দিয়ে তার অফিস থেকে বাইরে বেরিয়ে ছিল। তখন বোমা বিস্ফোরন হয়। ২০টি তাজা প্রান হারিয়ে যায়। ওই দিন এতো রক্ত আমি দেখেছি। আজ চন্দনের দুটি পা নাই। সেই দিন শামীম ওসমান বলেছিলো আপনারা আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে বাচাঁন। আগস্ট মাসেই প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার জন্য গ্রেনেড হামলা হয়েছিল। এখনও হত্যার চেষ্টা করা হচ্ছে।
সেলিম ওসমান বলেন, আমরা দুই ভাই মিলে নারায়ণগঞ্জ, বন্দর, সিদ্ধিরগঞ্জ, ফতুল্লা থানা এলাকায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ও শিল্পায়নের উন্নয়নের মাধ্যমে আধুনিক নারায়ণগঞ্জ গড়ার চেষ্টা করছি। আমাদের কাজ করার সুযোগ দেন। আমাদেরকে সহযোগীতা করেন কাজ করার সময় দেন আমরা আপনাদের ঐতিহ্য হারিয়ে যাওয়ার প্রাচ্যেরডান্ডি নারায়ণগঞ্জের ঐতিহ্য ফিরিয়ে দিয়ে আপনাদের হাতে তুলে দিবো।
মঞ্চে নারায়ণগঞ্জ-৪(ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান উপস্থিত সকলের উদ্দেশ্যে বলেন, আমার বাবা যখন মারা যায় তখন আমি ছোট ছিলাম। বাবার মৃত্যুতে আমি কষ্ট পেয়েছি। আমাদের মা আমাদের সব সময় আগলে রেখেছেন। আমাদের সব কিছু শিখিয়েছেন। জীবনের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত আমাদের দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। মায়ের মৃত্যুতে আমরা এতিম হয়ে গেছি। আমি আপনাদের কাছে আমার মায়ের আত্মার মাগফেরাতের জন্য দোয়া চাই। আপনি আপনাদের সকলের মা বাবার জন্য দোয়া চাইবো আপনারা আমার মায়ের জন্য দোয়া করবেন।
সেই সাথে শামীম ওসমান সকলকে উদ্দেশ্য করে আরও বলেন, যাদের বাবা মা এখনও জীবিত আছে আপনারা আপনাদের বাবা মায়ের সেবা করে যাবেন। বাবা মা তার সন্তানের কাছে কিছু চায় না। শুধু সেবাটুকু চায়।
দোয়া অনুষ্ঠানে ভাষা সৈনিক মরহুমা নাগিনার জোহার পরিবারের সকল সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা, ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি এম সাইফউল্লাহ বাদল, সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোহাম্মদ আলী, জেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক আবুল জাহের, জেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ মুহাম্মদ বাদল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ নিজাম, ফতুল্লা থানার শাখার সভাপতি মীর সোহেল, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান দিপু, শ্রমিক নেতা কাউসার আহাম্মেদ পলাশ সহ দলীয় অসংখ্য নেতাকর্মী, বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বার সহ স্থানীয় মুরুব্বী ও মুসুল্লীরা।