শ্যামলী তঞ্চঙ্গ্যা,বিজয় বার্তা ২৪
লম্বা সময় ধরে বিভিন্ন মেয়াদের প্রকল্পে প্রায় একশো কোটি টাকা ব্যায় করে একটি প্রহসনের প্রতিষ্ঠানে রুপ নিয়েছে ঢাকার সাভারে অবস্থিত জাতীয় মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউট। দূর্ণীতি আর লুটপাটের কারনে প্রতিষ্ঠানটিতে প্রকল্পের নামে কোন অর্থায়ন না থাকায় বর্তমান কর্তা ব্যাক্তিরা প্রতিষ্ঠানটির অস্তিত্ত্ব বিকিয়ে দিতে বসেছে। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির মুল অফিস ভবন ও স্পন ল্যাবরেটরীর কাছের বিশাল ফটকটির সামনের অংশ তিন লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা অগ্রিম গ্রহন করে পরিবহন ব্যবসায়ীদের চারটি কাউন্টার অফিস বানানোর জন্য বরাদ্দ দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির উপ-পরিচালক। সম্প্রতি একটি অনলাইন সংবাদ মাশরুম উণœয়ন ইনস্টিটিউটের এই বেহাল অবস্থা মাশরুম সংশ্লিষ্টদের হতাশ করেছে। খবরটির মাধ্যমে আরো জানা যায়- প্রকল্প না থাকাতে মাশরুম চাষীদের প্রতিষ্ঠান মাশরুম ফাউন্ডেশনেরও কোন অস্তিত্ব নেই। কিন্তু মাশরুম ফাউন্ডেশনের জন্য বরাদ্দকৃত কক্ষটিতে ব্যাবসার জন্য ভাড়া দেয়া হয়েছে হার্বস ওয়ার্ল্ড নামক একটি ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানকে। মাশরুম ফাউন্ডেশনের দক্ষিনে অবস্থিত বিশাল কক্ষটি সাভারের সিটি সেন্টারের একটি ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানের গোদাম হিসেবে ভাড়া দেয়া হয়েছে।
গত বছরের জুনে প্রতিষ্ঠানটি কর্মসুচী প্রকল্পের দুই বছর শেষ করে। কর্মসুচী শেষ হওয়ার পরই জুলাই মাসে নাটকীয় ভাবে ল্যাবের এক লাখ টাকার একটি ক্যামেরা চুরি হয়ে যায় বলে গুজব ছড়ানোর মাধ্যমে ল্যাবের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা তার লুট-পাটের সুচনা করে। মাশরুম গবেষনার নামে ক্রয়কৃত বিভিন্ন রাসায়নিক এবং মালা-মাল হাটখোলা ও মিডফোর্টে পুনরায় বিক্রি করাও প্রতিষ্ঠানটির নিত্য-নৈমিত্তিক কাজে পরিনত হয়েছে। দিনে প্রতিষ্ঠানটিতে তেমন কোন কর্মজজ্ঞ না থাকলেও উপ-পরিচালক এবং প্রতিষ্ঠানটির মাশরুম বিশেষজ্ঞকে রাত্রী দশটা পর্যন্ত অফিসে ভাগ-বাটোয়ারার কাজে নিভৃতে ব্যাস্ত থাকতে দেখা যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন সাভারের মাশরুম সংশ্লিষ্টরা। প্রতিষ্ঠানটির কাজের লোক অফিসারদের বাসায় কাজ করছে, প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন দ্রব্যাদি অফিসারদের বাসায় চলে গেছে। এসব তাৎক্ষনিক প্রয়োজনে নেয়া হয়েছে কিন্তু আর ফিরে আসেনি। অনেক ক্ষেত্রে নষ্ট হয়েছে বলে মেরামত করতে পাঠানো হয়- কিন্তু সেখান থেকে অফিসারদের বাসায় চলে যায়। গ্যাসের সিলিন্ডার-চুলা, স্ট্যান্ড-ফ্যান, টিভি, আলমারী, ফ্রিজ, এসি, ওভেন, ব্লেন্ডার, এমনকি চেয়ার-টেবিল পর্যন্ত কর্মকর্তাদের বাসায় চলে যাচ্ছে। দেখার যেন কেউ নেই !
আমাদের পার্বত্য রাঙ্গামাটিতে মাশরুমের একটি সাবসেন্টার আছে। প্রকল্প চলাকালে এখানে একজন অফিসার চাষীদেরকে মাশরুম বীজ সরবরাহে অনিয়ম করতে-করতে অল্প বয়সে মাথার টাক পড়ে গিয়েছিলো। তিনি কিছু দালালের নামে মাশরুম বীজ বিক্রি দেখাতেন এবং বীজের সঙ্কট দেখিয়ে ঢাকার সাভারের বিভিন্ন প্রাইভেট ফার্ম থেকে সংগ্রহ করার নামে রাঙ্গামাটির চাষীদের উচ্চমুল্যে মাশরুম স্পন সরবরাহ করতেন। তিনি অভিনব এই দূর্ণীতির টাকায় সাভারের জাতীয় মাশরুমের বড় কর্তাদের মালিশ করে সাভারে যোগদান করে গবেষনা করে বিজ্ঞানী হয়ে যান। প্রসঙ্গটি একারনেই উল্লেখ্য যে- তার এই মাশরুম বীজ বিপণন প্রক্রিয়াটি বর্তমানে জাতীয় প্রতিষ্ঠানটিতে বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। মাশরুমের মাতৃবীজ বা মাদার কালচারের প্রতিটির মুল্য পনের টাকা। কিন্তু মাশরুম উদ্যোক্তারা সম্প্রতি সাভার থেকে এই দামে আর এটি সংগ্রহ করতে পারছেনা। তাদের বলা হচ্ছে মাশরুমের মাদার নেই। অথচ প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বপূর্ণ কর্মকর্তা প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত মাদার কালচার তার মদদ পুষ্ট কর্মচারীর বাসায় সংরক্ষন করছেন এবং দেশের নানা প্রান্তের মাশরুম উদ্যোক্তাদের কাছে ঐসব কর্মচারীর মাধ্যমে ত্রিশ টাকা করে বিক্রি করছেন।
ল্যাবের মালামাল বেহাল হওয়ার বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন ল্যাবের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা জানান, ‘আমি এসব বিষয়ে কিছুই অবগত নই।’ প্রতিষ্ঠানটির উপ-পরিচালক চল্লিশ বছরের ব্যবহৃত বিশাল ফঠকটি বন্ধ করে পরিবহন ব্যাবসায়ীদের কাছে বরাদ্দ দেয়ার ক্ষেত্রে কত লাখ টাকার লেন দেন হয়েছে জানতে চাইলে বলেছেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই।’ দায়িত্ত্বপূর্ণ পদে থাকা এই কর্মকর্তাদের জবানবন্দি শুনে আমার এক মাতালের কথা মনে হচ্ছে- তামাকের সাথে অতিরিক্ত পরিমান গাঁজা সেবন করে এক মাতাল বলে চলেছেন, ‘আমার হাতে তামাক মাখাইয়া খাইয়া গেলো কে ?’ পাগলের পাগলামী দেখতে মজা লাগে, কিন্তু শত-শত মাশরুম গবেষনা পত্রের লেখক এবং মাশরুম গবেষনা জার্নালের সম্পাদকেরা এত্তোবড়ো উম্মাদকে পরিনত হয়ে গেলে মাশরুমের জাতীয় প্রতিষ্ঠানের কোন অস্তিত্ব থাকে কি?
সংবাদটিতে মাশরুম প্রকল্পে নতুন করে অর্থায়নের জন্য আন্দোলনকারী জনপ্রিয় লোক-সঙ্গীতশিল্পী কাঙ্গালীনি সুফিয়া বলেছেন, ‘আমি প্রকল্পের জন্য আন্দোলনে ছিলাম, সাংবাদিকদের সাক্ষাৎকার দিয়েছিলাম, ভাগ্যিস প্রকল্প আসেনি ! এখন আপনারাই বলুন- প্রকল্প পাশ হলে এরা কি অনর্থই না করতেন !’ আমরা মাশরুম সংশ্লিষ্টরা আশা করেছিলাম ব্যার্থতার দায় মাথায় নিয়েও মাশরুমের কর্তাগণ সততার সাথে সময় পার করবেন। গত বছরের জুনে কৃষি সম্প্রসারন অধিদপÍরের নতুন মহা পরিচালক অভিসিক্ত হলে আমরা ভেবেছিলাম- জাতীয় মাশরুমের ভাগ্যে ভালো কিছু হবে। কিন্তু সাভারে জমি-জমা এবং ব্যাবসা বাণিজ্য আছে এমন একজন সাবেক মহাপরিচালক মাশরুমের এইসব দূর্ণীতিবাজ ও ব্যার্থ কর্মকর্তাদের উপর ভর করে আছেন এবং খামারবাড়ী ও মন্ত্রনালয়ে যোগাযোগ রেখে মাশরুমের বেহাল অবস্থাকে প্রলম্বিত করছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধি-দপ্তরের মহা পরিচালক এবং মাননীয় কৃষি ম›ত্রীর প্রতি অনুরোধ- জাতীয় মাশরুমের স্বার্থে ভালো কিছু করতে আর যেন কালেক্ষপন না হয়।
লেখক ঃ শ্যামলী তঞ্চঙ্গা
তবলছড়ি, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা।