বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
চলছে হিন্দু ধর্মালম্বীদের দুইদিনব্যাপী মহাঅষ্টমী পুণ্যস্নান উৎসব । নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার লাঙ্গলবন্দের আদি ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে এই স্নানোৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। পুণ্যস্নানের লগ্ন শুরু হয় সোমবার (১৫ এপ্রিল) বিকেল ৪ টা ২০ মিনিটে। আর শেষ হবে আগামী ১৬ এপ্রিল মঙ্গলবার বিকেল ৪ টা ৫৬ মিনিটে। এ দিন ভারত, শ্রীলংকা, নেপাল ও ভুটান সহ দেশি বিদেশী লাখ লাখ পুন্যার্থীরা স্নানোৎসবে মেতে উঠছেন। এবার লাঙ্গলবন্দে স্নানোৎসব সুষ্ঠু ও্র শান্তিপূর্নভাবে সম্পাদন করতে তিনস্তরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহন করেছে জেলা পুলিশ।
“হে মহা ভাগ ব্রহ্মপুত্র, হে লৌহিত্য আমার পাপ হরণ কর”-এ মন্ত্র উচ্চারণ করে পাপ মোচনের আশায় ব্রহ্মপুত্র নদে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা স্নানোৎসবে অংশগ্রহন করছেন। স্নানের লগ্ন শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুন্যার্থীরা ডাব, দুর্বা, বেলপাতা ফলমুলসহ বিভিন্ন পুজার সামগ্রী নিয়ে পুন্যস্নানে আদিকাল থেকেই অংশ করে আসছেন। দুইদিনব্যাপী এ স্নানোৎসবে পূণ্যার্থীর ঢল নেমেছে পুরো তীর্থস্থানের এলাকাজুড়ে। পাপমোচনের আশায় বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা পূণ্যার্থীদের পদচারণে মুখরিত হয়ে ওঠেছে লাঙ্গলবন্দ।
জানা যায়, হিমালয়ের পাদদেশ থেকে লাঙল চাষ করতে করতে পরশুরাম মণি মাকে হত্যার দায় হাতে লেগে যাওয়া কুঠার খসে পড়েছিল এই ব্রহ্মপুত্র নদীর তীরে স্নান করতে এসে। ব্রহ্মপুত্রের জলের মাধ্যমে পাপমুক্ত হয়েছিলেন বিষ্ণুর অবতার এই পরশুরাম মুনি। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা মনে করেন, মহাভারতের বর্ণনামতে পরশুরামমুনি পাপমুক্তির জন্য ব্রহ্মপুত্র নদে যে স্থানের জলে স্নান করেছিলেন, তা লাঙ্গলবন্দে অবস্থিত। সেই থেকে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস এ সময়ে ব্রহ্মপুত্র নদে স্নান খুবই পূণ্যের। এ স্নানের ফলে ব্রহ্মার সন্তুষ্টি লাভের মাধ্যমে পাপমোচন হয়। এ বিশ্বাস নিয়ে সুদীর্ঘ কাল ধরে পরশুরামের পাপ থেকে মুক্তি হওয়ার কথা স্মরণ করে শত শত বছর ধরে লাঙ্গলবন্দে ব্রহ্মপুত্র নদে অষ্টমী স্নান অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
লাঙ্গলবন্দ মহাঅষ্টমী স্নান উদযাপন কমিটি সূত্রে জানা যায়, এবার ২০টি স্নান ঘাট পূর্ণ্যার্থীদের জন্য সংস্কার করা হয়েছে। বিশুদ্ধ খাবারের জল সরবরাহের জন্য ১৬ টি নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। বিপুল সংখ্যক কাপড় পরিবর্তন কক্ষ ও ১৫০ টি অস্থায়ী টয়লেট নির্মাণ ও নদের কচুরিপানা অপসারণ করেছে জেলা প্রশাসন। চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস, ৫টি মেডিকেল টিম ও ১০ শয্যা বিশিষ্ট অস্থায়ী হাসপাতালের ব্যবস্থা করেছে নারায়ণগঞ্জ সিভিল সার্জন অফিস। সেই সাথে স্নানে আসা দর্শনার্থীদের সেবা নিশ্চিতে বেসরকারীভাবে ৬০ টি সেবাক্যাম্প ও ৪০০ জন সেচ্ছাসেবী কাজ করবে। এ ছাড়া পুরো ৩ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ১০০ টি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। এদিকে নৌ পুলিশ, বিআইডব্লিউটিএ উৎসব ঘিরে কাজ করছেন। এবারও স্নানোৎসব ঘিরে রাস্তার দুপাশেই বসেছে লোকজ মেলা।
যেসব ঘাটে পুণ্যার্থীরা স্নান করছেন সেগুলো হলো, ললিত সাধুর ঘাট, নাসিম ওসমান কেন্দ্রিয় স্নান ঘাট, গৌর বিষ্ণুপ্রিয়া স্নান ঘাট, জাতীয় হিন্দু সমাজ সংস্কার সমিতি স্নান ঘাট, অন্নপূর্ণা স্নান ঘাট, লাঙ্গলবন্দ রাজ ঘাট, মাকরী সাধুর শান্তি আশ্রম স্নান ঘাট, গান্ধী ঘাট বা মহাশ্মশান স্নান ঘাট, বরদেশ্বরী কালী ও শিব মন্দির স্নান ঘাট, জয়কালী মন্দির স্নান ঘাট, রক্ষা কালী মন্দির স্নান ঘাট, পাষান কালী মন্দির স্নান ঘাট, স্বামী দ্বিগিজয় ব্রক্ষচারী আশ্রম প্রেমতলা, শ্রী রামপুর জগদ্বন্ধু স্নান ঘাট (ব্রক্ষা মন্দির), দক্ষিণেশ্বরী কালী মন্দির স্নান ঘাট,পরেশ মাহাত্মা আশ্রম স্নান ঘাট, সাব্দী রক্ষা কালী মন্দির স্নান ঘাট, সাব্দী লোকনাথ ব্রক্ষচারী আশ্রম স্নান ঘাট ও পঞ্চ পান্ডব স্নান ঘাট (কালীগঞ্জ ঘাট) ও শ্রী প্রভুপাদ স্নান ঘাট।
এ বিষয়ে জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শিখন সরকার শিপন বলেন, এবার স্নানোৎসব শান্তিপূর্নভাবে পালন করতে ব্যপক প্রস্তুতি গ্রহন করা হয়েছে। ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভুটানসহ দেশ বিদেশের পূণ্যার্থীরা অংশগ্রহন করবেন। এবার আশা করা যাচ্ছে ১০ লাখের অধিক দর্শনার্থী এ স্নানোৎসবে অংশ নেবেন।
এ ব্যাপারে বন্দর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এম. এ মুহাইমিন আল জিহান জানান, স্নান উৎসব সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সকল ধরনের প্রস্তুতি গ্রহন করা হয়েছে। ব্রক্ষপুত্র নদের কচুরীপানা পরিস্কার করা হয়েছে। স্নান ঘাটগুলো বাধাই কাজ সহ কাপড় বদলানোর কক্ষ ও পর্যাপ্ত অস্থায়ী টয়লেটেরও ব্যবস্থা রয়েছে। আইনশৃঙ্খলাবাহিনী সদা তৎপড় রয়েছে। কন্ট্রেল রুম থেকে সকল কিছু মনিটরিং করা হচ্ছে। আমরা আশা করি খুব শান্তিপূর্ণ ভাবে উৎসবটি সম্পন্ন হবে।
এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল, হিন্দু ধর্মালম্বীদের স্নান উৎসবকে কেন্দ্র করে পুলিশ, র্যাব ও সাদা পোশাক সহ ১ হাজার ৫ শত আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্য মোতায়ন করা হয়েছে। পুরো এলাকা জুড়ে একশ এর অধিক সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষনে মনিটরিং সেল বসানো হয়েছে। পূণ্যার্থীদের যাতায়াত নির্বিঘ্নে মহাসড়ক ও সড়কে অতিরিক্ত ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, উৎসব শান্তিপূর্নভাবে পালন করতে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সব সময় তৎপর রয়েছে।