বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
ভূয়া ডলার তৈরীর সরঞ্জামসহ আর্ন্তাজিক প্রতারক চক্রের ৪ বিদেশি ও ১ জন দেশি প্রতারক আটক করেছে র্যাব-১১। বুধবার ও বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে আটক করা হয়। গতকাল বৃস্পতিবার বিকেলে আদমজীস্থ র্যাব-১১ এর প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে র্যাব এ তথ্য জানান। গ্রেফতারকৃতরা হলো- আন্তর্জাতিক প্রতারক চক্রের মূল হোতা নাইজেরিয়ার নাগরিক ডেনিস ওকোদিরি ওরফে চীফ, অসাস্টিন মেথৌও, মারভিন ননসো ওজোওমিয়া, ক্যামেরুনের নাগরিক ইফা মাইকেলিন ওরফে জারা এবং ঢাকার মগবাজার এলাকার আব্রাহাম বিশ্বাস ওরফে স্বপন। এসময় তাদের কাছ থেকে ব্রিফকেসে রক্ষিত ৩৬ বান্ডেল ডলার তৈরীর ভূয়া কাগজ, ৪টি হ্যান্ড গ্লাবস ও সাদা রংয়ের তুলার দ্বারা নির্মিত আবরণ উদ্ধার করা হয়।
র্যাব জানায়, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নরেশ চাকমা এবং এএসপি মোঃ আলেপ উদ্দিন, এএসপি মোঃ নাজিম উদ্দীন আল আজাদ এর নেতৃত্বে সংগীয় ফোর্সসহ নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ থানাধীন সোনারগাঁ যাদুঘরের সামনে এবং ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালায়। র্যাব ব্রিফিং এ জানায়. চলতি বছর ২৮ জুলাই এলেন হেরিন নামে একজন আমেরিকান নাগরিকের সাথে জর্পিয়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইয়ামিন খান মেইল আদান প্রদানের মাধ্যমে পরিচয় হয়। পরিচয়ের এক পর্যায়ে ইয়ামিন খানকে জানান, তিনি ক্যান্সার নামক মরনব্যাধিতে আক্রান্ত। মৃত্যুকালে তিনি তার গচ্ছিত সম্পদ গ্লোবাল ট্রাষ্ট নামক সিকিউরিটি ও কুরিয়ার সার্ভিসে জমা রেখে যান এবং তার গচ্ছিত সম্পদ তিনি কোন দাতব্য প্রতিষ্ঠানে অথবা অনাথ, বিধবা ও গৃহহীনদের দান করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। ইয়ামিনের মাধ্যমে বাংলাদেশের গরিব দুঃখী মানুষের সাহাযার্থে উক্ত অনুদান পৌঁছে দেওয়ার ইচ্ছাও পোষন করেন। এরপর গত ৩০ জুলাই ব্রিটিশ ক্রাউন কোর্টের মাধ্যমে উক্ত সম্পদ ইয়ামিনের নামে পরবর্তী দাবিদার বা উত্তরাধিকার নির্বাচন করে উইল করেন। মৃত্যুর আগে তিনি শুনে যেতে চান, তার সম্পদ গরীব দুঃখীদের সাহাযার্থে ব্যবহার হচ্ছে। ইয়ামিন তার এই মহৎ উদ্দেশ্যের অংশীদার হতে এক পর্যায়ে রাজি হলে গ্লোবাল ট্রাষ্ট সিকিউরিটি এন্ড কুরিয়ার ফার্মের একটি ই-মেইল ঠিকানা দিয়ে ঐ ঠিকানায় যোগাযোগ করতে বলেন। এসময় ডঃ ওয়ালটার স্মিথ নামে এক ব্যক্তি জানায়, তিনি বার্তা পেয়েছেন এবং সেই সাথে তার কাছে কনসাইনমেন্ট বক্স পাঠানোর জন্য কারগো ফেয়ার ও একজন ডিপ্লোমেট এর খরচ বাবদ ২৫০০ ইউ.এস ডলার খরচ পাঠাতে বলেন। বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাঠানো সম্ভব না জানালে বাংলাদেশে তাদের এজেন্ট এর একাউন্ট নাম্বারে ২৫০০ ডলারের সমপরিমান টাকা পাঠাতে বলে। এরপর ইয়ামিন আদ্যপান্ত না ভেবে ডঃ ওয়ালটার স্মিথ কর্তৃক প্রেরিত এসএমএস এর মাধ্যমে প্রাপ্ত একাউন্ট নাম্বারে (আব্রাহাম বিশ্বাস (স্বপন), উত্তরা ব্যাংক, আওলাদ হোসেন মার্কেট ব্রাঞ্চ, একাউন্ট নাম্বার ২১১৩-১১১-০০১১০৪২১ এ গত ৮ আগষ্ট উত্তরা ব্যাংক, সোনারগাঁ ব্রাঞ্চ, নারায়ণগঞ্জ থেকে ১,৯৫,৫০০/- (এক লক্ষ পঁচানব্বই হাজার পাঁচশত) টাকা পাঠিয়ে দেয়। এর দুই দিন পর একজন আফ্রিকান কালো বর্ণের লোক নিয়ে সাদা রঙের প্রাইভেটকার যোগে সোনারগাঁ জাদুঘরের ২নং গেটে আসেন। এসময় ইয়ামিনকে ফোন করে বলেন, “আমি একজন ব্রিটিশ ডিপ্লোমেট, আমাকে কনসাইনমেন্ট বক্সটি নিয়ে পাঠিয়েছেন। এসময় ইয়ামিন তাকে তার সরকারী বাসায় নিয়ে যায়। বাসার সামনে এসে তিনি একটি কালো রঙের ব্রীফকেস গাড়ির পেছন থেকে বের করে ভিকটিমের বাসায় নিয়ে যান এবং বলেন এতে ০৫ (পাঁচ) মিলিয়ন ইউ এস ডলার রয়েছে। তিনি ব্রীফকেসটি ভিকটিমের সামনে খুলেন এবং বলেন, “এ সমস্ত চালানের ডলার সাধারনত কার্বণ কোটেড হয়ে থাকে এবং কেমিক্যাল ওয়াশের মাধ্যমে ডলারগুলো পরিষ্কার করতে হয়।” এরপর অভিনব কৌশল অবলম্বনে বিশ্বাস তৈরীর জন্য সে নমুনা স্বরুপ ০৩টি কালো কাগজ ঐ ব্রীফকেস থেকে বের করে পানি দিয়ে পরিষ্কার করে আসল ডলার বের করে দেখায় এবং তা সাথে নিয়ে যায়।তিনি দুঃখ করে আরো বলেন, “আমার কাছে কেমিক্যালের যে বোতলটি ছিল সেটি ভেংগে গিয়ে কেমিক্যাল পড়ে গিয়েছে। এজন্য এ মুহূর্তে সবগুলো ডলার ওয়াশ করা সম্ভব না।” এই বলে তিনি ভিকটিমকে সাদা কসটেপ মোড়ানো একটি ভাংগা কাচের খালি বোতল দেখান এবং বলেন “এই কেমিক্যালের প্রচুর দাম এবং এই কেমিক্যাল একমাত্র ব্রিটিশ ও আমেরিকান এ্যাম্বাসী ল্যাবরেটরীতে পাওয়া যায়। এটি কিনতে প্রায় ৮৫ হাজার ডলার প্রয়োজন। এসময় ইয়ামনি টাকা দিতে অপারগা প্রকাশ করে। পরে তারা টাকা জোগাড় করে তাদেরকে খবর দিতে বলেন। তাদের চাপাচাপিতে ইয়ামিনের বিষয়টি সন্দেহ হলে তার ছোট ভাই মামুন আলমামুনসহ গত ১৩ আগষ্ট র্যাব-১১ এ গিয়ে বিষয়টি জানায়। এরপর ডলার ওয়াশের কেমিক্যাল ক্রয়ের জন্য ৫ হাজার ডলার জোগাড় করেছে মর্মে ডাঃ ওয়ালেট স্মিথ ও অসাষ্টিন মেথৌওকে জানায়।
একই সাথে র্যাব-১১ বর্ণিত ঘটনার বিষয়ে তাদের নিজস্ব গোয়েন্দা তৎপরতা অব্যাহত রাখে। কথামতো বুধবার সন্ধ্যায় অসাষ্টিন একটি ব্রিফকেস নিয়ে সোনারগাঁ জাদুঘরের প্রধান ফটকের দক্ষিণ পার্শ্বে গাড়ী পার্কিং এর ফাঁকা জায়গার মধ্যে দক্ষিণ পার্শ্বে ৫ মিলিয়ন ডলার গ্রহনের নিমিত্তে আসে। এসময় পূর্বে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা র্যাব-১১ এর সদস্যরা অসাষ্টিন মেথৌওকে ব্রীফকেসসহ হাতে নাতে গ্রেফতার করেন। তাকে গ্রেফতারের পরপর ঘটনাস্থলে উপস্থিত আমার কলিগ মোঃ মনিরুজ্জামান @ তরুন (২৯) ও মোঃ শাখাওয়াত হোসেন @ সোহেল (২৫) এর উপস্থিতিতে র্যাব সদস্য এসআই(নিঃ)/মোঃ সরোয়ার হোসেন বর্ণিত ব্রীফকেস এবং তার ভিতরে রক্ষিত ৩৬ বান্ডিল সাদা পলিথিনে মোড়ানো কালো কাগজ, চারটি হ্যান্ডগ্লাভস ও সাদা রঙের তুলা জব্দ করেন। জব্দ তালিকায় আমার কলিগদের স্বাক্ষর নেন। তাৎক্ষনিক ভাবে র্যাব সদস্যরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে জানায়, সে আন্তর্জাতিক প্রতারক চক্রের একজন সক্রিয় সদস্য। ডাঃ ওয়ালেট স্মিথ তাদের বস্ এবং গ্রেফতার হওয়া অন্যন্যারা প্রতারক দলের সক্রিয় সদস্য। তার স্বীকারোক্তি মতে র্যাব সদস্যগন ১৭/০৮/১৬ তারিখ রাত্রি বেলা ঢাকায় অভিযান পরিচালনা করে নাইজেরিয়ার নাগরিক ডেনিস ওকোদিরি ওরফে চীফ, মারভিন ননসো ওজোওমিয়া, ক্যামেরুনের নাগরিক ইফা মাইকেলিন ওরফে জারাকে এবং পরদিন গতকাল বৃস্পতিবার সকালে আব্রাহাম বিশ্বাস @ স্বপনকে গ্রেফতার করে। আব্রাহাম বিশ্বাস @ স্বপন জিজ্ঞাসাবাদে জানায় যে, তার একাউন্টে জমাকৃত ১,৯৫,৫০০/- টাকার মধ্যে থেকে সে দুই কিস্তিতে (১,০০,০০০+৫০,০০০)=১,৫০,০০০/- টাকা উত্তোলন করে নিজের প্রয়োজনে খরচ করে ফেলেছে। বাকি ৪৫,০০০/- টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে পলাতক আসামী পনূয়েল বিশ্বাস ও কুসুম বিশ্বাসকে প্রদান করেছে। তার চাচাতো ভাই পলাতক আসামী পনূয়েল বিশ্বাস (২২), পিতা-ফিটার বিশ্বাস, সাং-পলোটানা, থানা-কোটালিপাড়া, জেলা-গোপালগঞ্জ ও চাচাতো বোন কুসুম বিশ্বাস (৩২), স্বামী-অজ্ঞাত, সাং-অজ্ঞাত, থানা-অজ্ঞাত, জেলা-চাঁপাই নবাবগঞ্জ এর কথামতো সে পনূয়েল বিশ্বাসকে উপরে বর্ণিত তার একাউন্ট নম্বরটি দিয়েছিল। জিজ্ঞাসাবাদের সে আরো জানায় যে, পলাতক আসামী পনূয়েল বিশ্বাস ও কুসুম বিশ্বাস এই প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্য হিসেবে দীর্ঘদিন যাবৎ মানুষের সাথে এভাবে প্রতারনা করে আসছে।