রূপগঞ্জ,বিজয় বার্তা ২৪
নারায়ণগঞ্জ রূপগঞ্জে স্থানীয় কৃষকদের জমি না কিনে জোরপুর্বক বালু ভরাট করে জবরদখল করার অভিযোগে বিক্ষুব্ধ জনতা আশালয় ও ঢাকা ভিলেজ নামে দুটি আবাসন প্রকল্পের সাইট অফিসে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করেছেন। বিক্ষুব্ধরা আবাসন প্রকল্পের বিরুদ্ধে দফায় দফায় বিক্ষোভ মিছিল করে। এসময় আবাসন প্রকল্পের নিয়োজিত সন্ত্রাসীরাও পাল্টা হামলা চালায়। এতে উভয় পক্ষের মাঝে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ বেঁধে যায়। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের নারীসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে বিক্ষুব্ধ জনতাকে বুঝিয়ে-শুনিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে। বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার সদর ইউনিয়নের পিতলগঞ্জ এলাকায় ঘটে এ ঘটনা।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, কোন প্রকার অনুমোদন ছাড়াই প্রায় আট বছর পূর্বে পিতলগঞ্জ এলাকায় ঢাকা ভিলেজ ও আশালয় হাউজিং প্রকল্প নামে দুুটি আবাসন প্রকল্প গড়ে তোলা হয়। শুরুতে কৃষকদের বিভিন্ন ভাবে প্রলোভন দেখিয়ে জমি ভাড়া নিয়ে সাইনবোর্ড স্থাপন করে। পরে আবাসন প্রকল্পের নিয়োজিত স্থানীয় প্রভাবশালীরা কিছু জমি কিনে বালু ভরাট ও জবরদখল শুরু করে। ৫ বিঘা ক্রয় করে ১০ বিঘা বালু ভরাট করে ফেলে। পরে জবরদখল করা জমি কৃষকদের দিয়ে না দিয়ে রেজিষ্ট্রি করে নিয়েছে। এভাবে গত সাত থেকে আট বছরে আবাসন প্রকল্পের কেনা জমির পাশাপাশি স্থানীয় কৃষকদের প্রায় শতাধীক বিঘা জমি বালু ভরাট করে জবরদখল করে রেখেছেন আবাসন প্রকল্প দুটি।
অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় কৃষক জুলহাস মিয়ার ৩০ শতাংশ, মোফাজ্জল হোসেনের ২৫ শতাংশ, মিজান মিয়ার ৪৫ শতাংশ, আক্তার হোসেনের ৭ বিঘা, মোয়াজ্জেম আলীর ২০ শতাংশ, ইসমাইল মিয়ার ২ বিঘা, রফিক মেম্বারের ১২ শতাংশ, আফাজ উদ্দিনের ৪৫ শতাংশ, রাজিব মিয়ার ৩০ শতাংশসহ অনেক কৃষকের জমি বালু ভরাট করে জবরদখল করেছে ওই আবাসন প্রকল্প দুটি। এছাড়া বিভিন্ন ওয়ারিশগণের কাছ থেকে জমি না কিনে জমি দখলে নিয়ে গেছে। আর এসব জবরদখল করা জমিতে গেলেই কৃষকদের উপর হামলা চালিয়ে বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করা হয়ে থাকে। তাই আবাসন প্রকল্পের নিয়োজিত ক্যাডার বাহিনীর ভয়ে কেউ প্রতিবাদ টুকুও করতে সাহস পায়না।
এদিকে, বৃহস্পতিবার দুপুরে জমির মালিকদের পক্ষে স্থানীয় জনতা আশালয় ও ঢাকা ভিলেজ আবাসন প্রকল্পে গিয়ে তাদের জবরদখল করা জমি ফেরত চায়। এসময় উপস্থিত আবাসন প্রকল্পের নিয়োজিত লোকজন কৃষকদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে। এক পর্যায়ে উত্তেজিত জনতা ক্ষিপ্ত হয়ে আবাসন প্রকল্প দুটিতে প্রবেশ করে হামলা চালিয়ে ভাংচুর শুরু করে। পরে আবাসন প্রকল্পের লোকজনও পাল্টা হামলা চালায়। এতে করে উভয় পক্ষের সুমন, মরণচাঁন, আমেনা, রফিক মিয়া , আক্তার হোসেন, আয়েশা আক্তার, লাকি আক্তার, তানিয়া আক্তার, সফি মিয়াসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছে। আহতদের স্থানীয় বিভিন্ন ক্লিনিকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। পরে রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল ইসলামের নেতৃত্বে বিপুল পরিমান পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থল পৌছে উত্তেজিত জনতাকে বুঝিয়ে-শুনিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে।
এ বিষয়ে আশালয় আবাসন প্রকল্পের প্রজেক্ট সুপার ভাইজার আতিকুর রহমান বলেন, হামলাকারীরা ৭টি অফিস কক্ষ ও দুটি প্রাইভেটকার ভাংচুরসহ মুল্যেবান কাগজপত্র লুটপাট করেছে। তবে আমাদের প্রকল্পের বিরুদ্ধে জোরপুর্বক বালু ভরাট করে কৃষকদের জমি জবরদখল করার বিষয়টি সঠিক নয়।
রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। এখন পর্যন্ত কোন পক্ষ থেকে অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলেও জানান ওসি।