স্টাফ রিপোর্টার,বিজয় বার্তা ২৪
বাংলাদেশ ব্যাংকে বিদায়ী গভর্নরের অর্জন শূন্য বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি জানিয়েছেন, ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরিতে ব্যাংকের কর্মকর্তারা জড়িত। রিজার্ভ ব্যাংকে সংরক্ষিত ছয় জনের আঙুলের ছাপ না মিললে লেনদেন কার্যকর হয় না।
বিদায়ী গভর্নরের পদত্যাগ সঠিকভাবে হয়নি দাবি করে তিনি বলেছেন, তিনি গভর্নরকে নিয়োগ দিয়েছেন। তার কাছেই গভর্নরকে পদত্যাগ করতে হবে।
গভর্নরের বিদেশ সফরের সমালোচনা করে অর্থমন্ত্রী বলেন, তিনি শুধু বিদেশ ঘুরে বেরিয়েছেন। পিআর’র কাজ করেছেন।
সংবাদ মাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে মুহিত বলেন, টাকা আসলে উদ্ধার হবে কি না, আমি নিশ্চিত না। কিছু টাকা পাওয়া গেছে বরং শ্রীলঙ্কার কল্যাণে। চুরির ঘটনা জানার পর আতিউর রহমান কী করেছিলেন বলে আপনি শুনেছেন? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, কী বলব। তিনি সংকটটির গভীরতাই বুঝতে পারেননি। আমার মনে হয়, তিনি চিন্তাই করতে পারেননি যে এটা একটা বড় ঘটনা। খবর পেয়েও তিনি দেশের বাইরে বাইরে ঘুরেছেন।
আতিউর রহমানের সাফল্যের বিষয়ে এক প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকে তার অবদান প্রায় শূন্য। তিনি খালি পৃথিবী ঘুরে বেড়িয়েছেন আর লোকজনকে অনুরোধ করেছেন বক্তৃতা দেয়ার জন্য তাকে সুযোগ দিতে ও দাওয়াত দিতে। এখন বেরোচ্ছে এগুলো। কৃষকদের জন্য ১০ টাকার হিসাব খোলার মতো সেবা সাফল্য কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এগুলো স্লোগান। তিনি খালি পিআরের কাজ করেছেন। এসব নিয়ে বাজারে অনেক কথাও আছে।
ব্যাংক-ব্যবস্থার সার্বিক নিরাপত্তার জন্য কী করছেন? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ব্যাপক সংস্কার দরকার। এর ব্যবস্থাপনা অদক্ষ। গভর্নরের কথা যদি বলি, তিনি জনসংযোগেই বেশি ব্যস্ত ছিলেন, ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় নয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিচতলায় যে লেনদেন হয়, তার মুনাফার কোনো হিসাব থাকে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের লোকেরা ভাগ করে নিয়ে যান। আতিউর কোনো দিন এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেননি।
রিজার্ভ চুরির বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন ছিল-আপনার কি মনে হয়, এই ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদেরও যোগসাজশ রয়েছে? জবাবে তিনি বলেন, অবশ্যই। শতভাগ জড়িত। স্থানীয়দের ছাড়া এটা হতেই পারে না। ছয়জন লোকের হাতের ছাপ ও বায়োমেট্রিকস ফেডারেল রিজার্ভে আছে। নিয়ম হলো, প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় এভাবে ষষ্ঠ ব্যক্তি পর্যন্ত নির্দিষ্ট প্লেটে হাত রাখার পর লেনদেনের আদেশ কার্যকর হবে।
ঘটনার পর গভর্নর বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছিলেন। এমন ব্যাখ্যা এসেছে এ বিষয়ে কিন বলবেন, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এটাও ভুল। আমার নিয়োগ করা গভর্নর, অথচ তিনি সব সময়ই বলে এসেছেন, প্রধানমন্ত্রী তাকে নিয়োগ দিয়েছেন। এমনকি পদত্যাগপত্রও তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে দিয়েছেন। এটা তিনি পারেন না। তার পদত্যাগপত্রটিও হয়নি। আমাদের দেশে তো ওইভাবে নিয়মকানুন মানা হয় না, অন্য দেশ হলে তো আমার অনুমতি ছাড়া তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখাই করতে পারতেন না। এটা কি ‘চেইন অব কমান্ড’ সমস্যা? এ প্রশ্নের উত্তরে মুহিত বলেন, বটেই। তাকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেননি, আমি নিয়োগ দিয়েছি। আমার কাছেই পদত্যাগপত্র দিতে হবে।
আপনার কথা অনুযায়ি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান প্রধান কাজ করা থেকে আতিউর অন্য কাজে বেশি মনোযোগী ছিলেন। এতে তো আপনার দায়ও চলে আসে। আপনার নিয়োগ করা গভর্নর…এ বিষয়ে প্রশ্ন তুলতে অর্থমন্ত্রী বলেন, যত দূর জানি, আতিউর আর্থিকভাবে সৎ ব্যক্তি। তবে প্রায়ই অভিযোগ করতেন, তিনি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন না। খামোখা! এত বছরে বাংলাদেশ ব্যাংককে মাত্র তিন-চারটা নির্দেশনা দিয়েছি। একবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মিলে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, শেয়ারবাজারে ওভার এঙপোজার আরো কয়েক বছরের জন্য থাকবে। কিন্তু আতিউর ব্যাংক কোম্পানি আইনে সময়সীমা বেঁধে দিলেন এক বছর। আশ্চর্য কান্ড!
বাজেটে বরাদ্দ দেওয়া টাকা খরচ হয় না কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, পয়সা আছে, কিন্তু খরচ করতে পারছে না-এটাও একটা সমস্যা। অন্য সব মন্ত্রণালয়ের দোষ রয়েছে এতে। গত সাত বছরের অর্জন সবাইকে অলস করে তুলেছে। মনোভাবটা এ রকম- আমরা তো ভালোই করছি। অর্থাৎ, মরিয়া ভাবটা আর নেই।
অনেকে বলেন, দেশের বড় বড় প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির পেছনে দুর্নীতি একটা উদ্দেশ্য। আপনি কী মনে করেন? এ প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রথমত, এগুলোর জন্য অভিজ্ঞতা না থাকায় আমরা যথাযথ অনুমানটি (এস্টিমেট) করতে পারি না। সাধারণভাবে অনুমোদন দিয়ে দিই। দ্বিতীয়ত, আমাদের চরিত্রটা দুষ্ট। বড় প্রকল্প মানেই আমরা বড় দাও মারতে চাই।