নারায়ণগঞ্জ,বিজয় বার্তা ২৪
যৌতুক না দিতে পারায় সিদ্ধিরগঞ্জের বিথি আক্তারকে (২৫) মাদারীপুরে তার স্বামী আলমগীরসহ শশুরবাড়ির স্বজনরা নির্যাতনের পর শ্বাসরোধে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। হত্যার ১০ দিন অতিবাহিত হলেও থানায় হত্যা মামলা নেয়নি। উল্টো এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলা রুজু করে থানায়। এরপর থেকে সন্তানহারা মা কল্পনা আক্তার পুলিশের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ বলছে এ ঘটনা নিয়ে বাড়াবাড়ি না করতে। কল্পনার দাবি তার মেয়ে বিথি আতœহত্যা করেনি। যৌতুক দিতে না পারায় তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে মাদারীপুর জেলার শিবচর থানার মানিকপুর ছৈজদ্দিন বেপারি কান্দি গ্রামে নুর ইসলাম বেপারীর বাড়িতে। নিহত বিথি নারায়গঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানার মিজমিজি এলাকার মৃত আব্দুল আজিজের মেয়ে।
নিহতের মা কল্পনা বেগম জানান, ৭ বছর আগে মেয়ে বিথিকে ২লাখ টাকা যৌতুক দিয়ে প্রবাসী আলমগীরের সাথে বিয়ে দেন। বিয়ের সময় স্বংর্নালংকরসহ প্রয়োজনীয় আসবাবপত্রও দেন তিনি। বিয়ের কয়েকমাস যেতে না যেতেই পিত্রালয় থেকে আরো টাকা এনে দেয়ার জন্য বিথির উপর শুরু হয় নির্যাতন। এর মধ্যেই বিথির ঘরে আসে ফুটফুটে একটি শিশু। আলমগীর বিদেশ থেকে শিশুসন্তান ও বিথির ভরন পোষনের জন্য টাকা পয়সা দিতনা। শশুর-শাশুরিরকে বিষয়টি জানালে তারাও তাকে তুচ্ছ অযুহাতে নির্যাতন করতো। বাধ্য হয়ে তিনি তার মেয়ে ও নাতির কথা ভেবে কিছু খরচের টাকা পাঠাতেন।
সম্প্রতি কয়েকমাস আগে আলমগীর দেশে ফিরে আসে। দেশে এসে সে মাদকাসক্ত হয়ে বিভিন্ন অপরাধ মুলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ে। এর প্রতিবাদ করলে সে বিথিকে মারধোর করতো। পরে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিথির স্বামী আলমগীর তার এলাকায় মেম্বার পার্থী হয়। সে সময় আলমগীর বিথিকে নির্বাচনের জন্য ২লাখ টাকা দরকার বলে তাকে মায়ের কাছে পাঠিয়ে দেয়। মা কল্পনা মেয়ের সূখের কথা ভেবে বিভিন্ন আতœীয়স্বজনদের কাছ থেকে এ টাকা সংগ্রহ করে টাকা দিয়ে মেয়েকে তার স্বামীর বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। নির্বাচনে আলমগীর নির্বাচিত হলে এলাকার মানুষকে ভুরিভোজ করানোর জন্য বিথিকে আবারো বলে আরো ৫০হাজার টাকা এনে দিতে। বিখি এনে দিতে পারবেনা বলে জানালে তাকে মারধোর করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। পরে সে সিদ্ধিরগঞ্জে মায়ের কাছে এসে পড়ে। এরপরও কল্পনা বেগম কিছু টাকা জোগাড় করে বিথিকে ৮মে স্বামীর বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। পুরো টাকা নিয়ে যেতে না পারায় তার উপর নির্যাতনের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। এক পর্যায়ে স্বামী ও তার শশুর বাড়ির স্বজনদের নির্যাতনে ১২মে সে মারা যায়। পরে তারা এ হত্যাকে আতœহত্যা বলে চালিয়ে দিতে তার গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলিয়ে রাখে। খবর পেয়ে তিনি পাগলের মত ছুটে গিয়ে মেয়ের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন দেখতে পান। পরে তিনি ১৪মে মেয়ের মরদেহ সিদ্ধিরগঞ্জে নিয়ে আসেন। ওইদিন রাতেই বিথির দাফন কাপন সম্পন্ন করেন।
এদিকে তিনি মেয়ে হত্যার বিচার চেয়ে মাদারীপুর শিবচর থানায় একটি হত্যা মামলা করার জন্য লাশ উদ্ধারকারী কর্মকর্তা উপ পরিদর্শক (এসআই) ইব্রাহিমের কাছে একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর করে দিয়ে আসেন। পরে ১৭মে তিনি থানায় যোগাযোগ করলে ওই কর্মকর্তা তাকে জানান, এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলা রুজু করা হয়েছে। পুলিশের এ ভুমিকায় তিনি হতবাক হয়ে পড়েন। এখন তিনি মেয়ের হত্যার বিচার চেয়ে পুলিশের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।
এ ব্যাপারে লাশ উদ্ধারকারী কর্মকর্তা শিবচর থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) ইব্রাহিম মরদেহে বিভিন্ন আঘাতের চিহ্ন রয়েছে এর সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, বাদি এটা ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলা করেছে। পরে তিনি এটিকে হত্যা মামলা বলছেন। ময়না তদন্তের প্রতিবেদন আসলে বিষয়টি নিশ্চিত করা যাবে এটি হত্যা না আত্মহত্যা।