বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
সাংসদ ভ্রাতৃদ্ধয়কে নিয়ে কুরুচীপূর্ণ মন্তব্য করা অডিও রেকর্ডের বিষয়ে অবেশেষে মুখ খুলেছেন নারায়ণগঞ্জ-৫(সদর-বন্দর) আসনের সাংসদ একে এম সেলিম ওসমান। মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক এড.খোকন সাহা এবং সাংগঠনিক সম্পাদক মাহামুদা মালাকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার অনুরোধ করেন। তবে এখনো নিশ্চুপ রয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৪(ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনের সাংসদ একেএম শামীম ওসমান। তবে ধারনা করা হচ্ছে আগামি রোববার ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের উদ্যোগে আয়োজিত এক বর্ধিত সভায় বর্তমান নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগের রাজনীতির বিষয়াদিসহ প্রকাশিত হওয়া অডিও রেকর্ডের বিষয়ে তার মতামত নেতাকর্মীদের কাছে তুলে ধরবেন। এদিকে সাংসদ সেলিম ওসমানের ক্ষমা চাওয়ার আহ্বানটি সরাসরি প্রত্যাহার করেছেন মহানগর আওয়ামীলীগ নেতা এড.খোকন সাহা। প্রকাশিত অডিও রেকর্ডের বিষয়ে দুঃখ প্রকাশতো দূরের কথা ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নই উঠে না বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। আর সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদা মালা স্থাণীয় একটি গনমাধ্যমে প্রকাশিত অডিও রেকর্ডটি তার কন্ঠ নয় বলে দাবি করেছেন। সে সাথে সাংসদ শামীম ওসমানকে ইঙ্গিত করে বিভিন্ন অশালীন মন্তব্য করেছে।
সূত্রে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর যুব মহিলালীগের পাল্টা পাল্টি কমিটিকে কেন্দ্র করে দলীয় কোন্দলে জড়িয়ে পড়েন মহানগর আওয়ামীলীগের নেতা এড.খোকন সাহা এবং মাহমুদা মালা। কমিটিকে ইস্যু করে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সাংসদ শামীম ওসমানকে ইঙ্গিত করে বিভিন্ন বক্তব্য প্রদানের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জের আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে দলীয় কোন্দলের বিষয়টি প্রকাশ্যে চলে আসে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামীলীগ নেতা খোকন সাহা এবং মাহামুদা মালাকে বৎসনা করে মহানগর ছাত্রলীগ ও স্থাণীয় আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন প্রচারনা চালায়। এর কিছুদিন পরেই সাংসদ ভ্রাতৃদ্ধয় সেলিম ওসমান এবং শামীম ওসমানকে নিয়ে অশ্লীল মন্তব্য করার একটি অডিও প্রকাশিত হওয়ার পর পরই উত্তপ্ত হয়ে উঠে নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক অঙ্গন। স্থাণীয় আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দ খোকন সাহা এবং মাহমুদা মালাকে দল থেকে বহিষ্কারের দাবিসহ কয়েকটি এলাকায় অবাঞ্চিত ঘোষনা করে বিবৃতি দিতে থাকে।
সূত্রে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ সদর-বন্দর আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান বন্দরে সকল স্তরের জনপ্রতিনিধি এবং সকল রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের সাথে মত বিনিময় সভায় অ্যাডভোকেট খোকন সাহা ও মাহমুদা মালাকে ধন্যবাদ জানিয়ে তাদের অপরাধের জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। আর ক্ষুদ্ধ নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি আহবান রেখে বলেন, আপনাদের ভেতরে অনেক ক্ষোভ জমা আছে আমি জানি। আমি সব ভুলে গেলাম। আপনারাও সব কিছু ভুলে গিয়ে যেভাবে উন্নয়ন কাজে সহযোগীতা করছিলেন সেই ভাবে উন্নয়নের সহযোগীতা করে যান। সেলিম ওসমান আরো বলেন, নারায়ণগঞ্জ তথা বাংলাদেশ সহ বিশ্বব্যাপী আলোচিত ৭ খুনের শিকার সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল একজন আওয়ামীলীগ কর্মী ছিলেন। তার সাথে খুন হওয়া অ্যাডভোকেট চন্দন সরকার, তার ড্রাইভার এবং নজরুলের গাড়ির ড্রাইভার সহ তার ৭ জন সহকর্মীকে নৃশংসহ ভাবে হত্যা করা হয়েছে তারা সবাই আওয়ামীলীগের কর্মী বা আওয়ামীলীগ পরিবারের সাথে জড়িত ছিলেন। আদালতের রায় অনুযায়ী নূর হোসেন সহ র্যাবের কিছু বিপদগামী সদস্য এ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত ছিলেন। তবে কেন খোকন সাহা নিজে আওয়ামীলীগের নেতা এবং একজন আইনজীবী ও আইনজীবীদের নেতা হয়েও আওয়ামীলীগের কর্মী ও প্রবীন আইনজীবী খুনীদের পক্ষ নিলেন? উনি একজন আইনজীবী হিসেবে আরেকজন আইনজীবী এবং আওয়ামীলীগের নেতা হিসেবে দলের কর্মীদের খুনিদের বাচাঁতে দায়িত্ব নিতে পেরেছে। অথচ আমার বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র হয়েছে সেটার সঠিক বিচার পাওয়ার জন্য উনি আমার দায়িত্ব নিতে পারলেন না কেন? আমি দুবাইতে থাকাকালীন সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে ফাঁস হওয়া অডিওটি শুনতে পাই। যেখানে আমাকে এবং আমার ছোট ভাই শামীম ওসমানকে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করা হয়েছে। আর উনি একজন আওয়ামীলীগের গুরুত্বপূর্ন পদের নেতা হয়ে তা বসে বসে শ্রবন করেছেন। এরপর আমি ফোন করে তার সাথে কথা বলেছি। ঘটনাটি জানতে চেয়েছি। উনি আমাকে উত্তর দিয়েছেন মাঝখান থেকে কিছু কথা কাইট্টা দিয়ে কোন শালায় জানি এটা ফেসবুকে ছাইড়া দিছে। সেলিম ওসমান, মাহমুদা মালাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আমি ধন্যবাদ জানাই মালা আমাকে গালি দেওয়ার জন্য। মালার গালি গালাজের কারনে, মানুষ আমাকে আরো বেশি ভালবাসা দিয়েছে। যেহেতু সাধারণ মানুষ আমাকে ভালবাসেন তাই সংসদ সদস্য পদের দায়িত্বটি আমি জনগনের গোলামি করার জন্যই মনে করি। আমি জনগনের কাজ করি জনগনের কোন দলের জন্য নয়। খোকন সাহা ও মালার উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, সময় আছে ক্ষমা চান।
এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক এড.খোকন সাহা বলেন, সেলিম ওসমান একজন সম্মানিত সংসদ সদস্য। আর অডিও রেকর্ড নকল করা হয়েছে। আর নকল অডিওর জন্য ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নই উঠে না। আর সাংসদ সেলিম ওসমানের সেভেন মার্ডারের ঘটনায় নূর হোসেনের আইনজীবি নিয়োগ হওয়ার বিষয়ে যে সমালোচনা করেছেন এ প্রশ্নের জবাবে খোকন সাহা বলেন, আমি একজন আইনজীবি হিসেবে মামলা পরিচালনা করতেই পারি। এটা আমার পেশাগত দায়িত্ব। আর মামলা পরিচালনা করছি অনেক দিন হয়ে গিয়েছে, মামলার রায়ও হয়ে গেছে। এতদিন সাংসদ সেলিম ওসমানের এ প্রসঙ্গে কথা বলা দুঃখজনক। সেভেন মার্ডারের মামলা পরিচালনার বিষয়ে প্রথম থেকেই তারা সমালোচনা কেন করল না এমন প্রশ্নও ছুড়ে দেন খোকন সাহা।
তবে মহানগর আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহামুদা মালার মোবাইল ফোনে (যার নাম্বার-০১৯৩৯৭৬০৩৪৬) এশাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।