বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
অবশেষে বাস্তবায়ন হওয়ার পথে নারায়নগঞ্জ-বন্দর সংযোগে তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু। সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু নির্মান প্রকল্প বাস্তবায়নে চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর হয়েছে। ৮ ফেব্রুয়ারি বুধবার সকালে রাজধানীর হোটেল লা মেরিডিয়ানে তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু নির্মানের চুক্তিপত্র স্বাক্ষর হয়। আগামী মার্চ মাস থেকে নারায়নগঞ্জের সৈয়দপুর – বন্দরের মদনগঞ্জ এলাকা দিয়ে ১২৯০ মিটার দৈর্ঘ্যরে এ সেতুর নির্মান কাজ শুরু হয়ে আগামী ৩ বছরের মধ্যে আগামী ২০২০ সালের মার্চ মাসে সম্পন্ন করার কথা রয়েছে। । এ সংবাদ পেয়ে বেলা ১২টায় বন্দর ১নং খেয়াঘাটের শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে মিষ্টি বিতরণ করে স্থানীয় এলাকাবাসী।
বাংলাদেশ ও সৌদি ফান্ড ডেভেলপমেন্টের অর্থায়নে প্রকল্পটিতে বাংলাদেশের পক্ষে সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী ইবনে আলম হাসান এবং নির্মাণ প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রো’র ভাইস প্রেসিডেন্ট নিউ লিউ শান চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেন।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের প্রকল্প সম্পর্কে বলেন, প্রকল্পটিতে ব্যয় হবে ৪৪৮ কোটি টাকা। চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে ২০২০ সালের মার্চ মাস মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে।
প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ ইকবাল সাংবাদিকদের জানান,সেতুটি হবে ১২৯০ মিটার। যার মধ্যে ৪০০ মিটার হচ্ছে মূল সেতু এবং ৮৯০ মিটার হচ্ছে রাস্তার দু‘পাশের ভায়াটেক্ট। ৪ লেন বিশিষ্ট সেতুতে থাকবে জনসাধারনের পায়ে হাটার জন্যে ফুটপাত এবং রিকশা চলাচরে জন্রে পৃতক লেন।
এ সময় নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান সহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য,১৯৯১ সালে শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর নারায়ণগঞ্জবাসীর (সদর-বন্দর) দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বন্দর ও নারায়ণগঞ্জবাসীর ভোট নিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার হয়েছেন চারদলীয় জোট। ৯৬’ সালে একই কায়দায় নির্বাচনী বৈতরণী পার হয় আওয়ামী লীগ। প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি একের পর এক ভিত্তিপ্রস্তরের ফলক লাগানো হলেও সেতু নির্মাণ বাস্তবায়নে কেউ সক্ষম হননি।
২০০৬ সালের নির্বাচনের আগে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া শহরের নবীগঞ্জ ঘাট এলাকায় একটি শীতলক্ষ্যা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার প্রচেষ্টা চালান। কিন্তু সেই স্থানে সেতু নির্মাণ হওয়ার সরকারিভাবে কোনো প্রস্তাবনা ছিল না।
বিগত ২০০৮ সালের নির্বাচনে মহাজোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বন্দরে নির্বাচনী প্রচারণায় এসে ওয়াদা করেন শীতলক্ষ্যা সেতু অবশ্যই হবে। তখন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বন্দরের একটি জনসভায় শীতলক্ষ্যা সেতুর ব্যাপারে আশ্বাস দেন। কিন্তু তা বাস্তবায়নের প্রতিফলন ঘটে ২০১৫ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারী।
নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীর উপর সেতু নির্মাণের জন্য প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে অক্লান্ত পরিশ্রম করেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের প্রয়াত সংসদ সদস্য নাসিম ওসমান। তার সময়ে বাস্তবায়ন না হলেও ২০১৫ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ৩৭৭ কোটি ব্যয়ে নির্মিতব্য ৩য় শীতলক্ষ্যা তৃতীয় সেতুর ভিত্তি প্রস্তর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কিন্তু, বৈদেশিক অর্থায়ন না পাওয়া,প্রকল্প পরিচালক বদলি, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতা ও রেলওয়ের জমি না পাওয়ার কারণে ৭ বছরে নারায়ণগঞ্জবাসীর বহুল প্রত্যাশিত শীতলক্ষ্যায় তৃতীয় সেতু প্রকল্পের অগ্রগতি হয়েছিল মাত্র ২১ শতাংশ। এরপরে সেতুটি নির্মাণের সময় বৃদ্ধি করা হয় ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত। একই সঙ্গে ব্যায় বেড়ে দাঁড়ায় ৫৩৯ কোটি ৬৭ লাখ ৭৮ হাজার টাকা। তৃতীয় ধাপে ব্যায় ব্যতিরেকে আবারও ছয় বছর সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে। নতুন করে এসএফডির সঙ্গে সম্পন্ন ঋণ চুক্তির মেয়াদ ২০১৮ সাল পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। পাওয়া গেছে সৌদি উন্নয়ন তহবিলের (এসএফডি) ৩৩২ কোটি টাকা ঋণ। এখন প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টিতে বর্তমান স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের প্রচেষ্টায় ২০২০ সালের আগেই নির্মিত হবে সেতুটি।
শীতলক্ষ্যা নদীর পশ্চিম প্রান্তে সৈয়দপুর ও পূর্ব প্রান্তে মদনগঞ্জ সংযোগ করে চারলেন বিশিষ্ট সেতু নির্মাণের স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। সৌদি আরবের আর্থিক অনুদানে নির্মিত সেতুটি ১ হাজার ২৯০ মিটার দীর্ঘ। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর।
অপরদিকে সেতু নির্মান প্রকল্প বাস্তবায়নে চুক্তি স্বাক্ষরের সংবাদে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষকে মিষ্টি মুখ করান কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ¦ দেলোয়ার হোসেন প্রধান, বন্দর থানা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খান মাসুদ। এ জন্যে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। মিষ্টি বিতরণকালে উপস্থিত হাজার হাজার বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষকে উল্লাস করতে দেখা যায়।