বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
হেফাজতে ইসলামের বিলুপ্ত কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরীর সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মামুনুল হকের কাছে বিদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা আসতো। সেই টাকায় তিনি গড়েছেন অঢেল সম্পদ।
রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে নিজের সম্পদের আয়ের উৎস সম্পর্কে সঠিক তথ্য দিতে পারেননি মামুনুল হক। সে বিষয়ে তদন্ত চলছে। এছাড়া পাকিস্তান থেকে জঙ্গিবাদের জন্য অর্থ আসার বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ সম্পর্কেও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
রোববার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম। তিনি বলেন, এরই মধ্যে বেশ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। তবে তদন্ত শেষ হওয়ার আগে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাচ্ছে না।
পুলিশ সুপার বলেন, জান্নাত আরা ঝর্না ধর্ষণ মামলায় মামুনুল হক নিজেই ফেসবুক লাইভে স্বীকার করেছিলেন যে তিনি বৈধভাবে বিয়ে করেননি। জিজ্ঞাসাবাদে আমরা সত্যতা ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছি। মামলাটি তদন্তাধীন আছে। আশা করি নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই আমরা আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করতে সক্ষম হবো।
তিনি আরো বলেন, নাশকতার মামলাগুলোর বিষয়েও মামুনুল হক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। ফেসবুক লাইভে তার উসকানিমূলক বক্তব্যের কারণেই যে সহিংসতা ঘটেছে তা তিনি স্বীকার করেছেন। এরই মধ্যে আমরা তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে আমরা বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছি। ভিডিও ফুটেজ থেকেও মামুনুল হক কয়েকজন নাশকতাকারীকে চিহ্নিত করেছেন।
জায়েদুল আলম বলেন, কর্তৃপক্ষ মামুনুল হকের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের হিসাব চেয়েছে। আমরা যে তথ্য পেয়েছি- সেখানে মামুনুল হকের ঢাকায় একাধিক বাড়ি আছে। তার মাদরাসাও রয়েছে। সে মাদরাসায় নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ অর্থ আসতো। সেসব অর্থ কিভাবে ব্যবহার হতো সেটার সঠিক হিসাব আমরা পাইনি। মামুনুল তার আয়-ব্যয়ের সঠিক হিসাব দিতে পারেননি। আমরা প্রতিটি বিষয় খতিয়ে দেখছি। আশা করি সেখানে মামুনুল সম্পদের সঠিক বিবরণ দেবেন।
তিনি আরো বলেন, মামুনুল হকের কাছেও বিদেশ থেকে সরাসরি অর্থ আসতো। তবে দেশি-বিদেশি যেসব অর্থ আসতো তার বেশিরভাগই তিনি আত্মসাৎ করেছেন বলে আমাদের তদন্তে প্রমাণ হয়েছে। পাকিস্তান থেকেও জঙ্গিবাদের জন্য অর্থ আসতো বলে আমরা গণমাধ্যমের সূত্রে জেনেছি। এ বিষয়ে তদন্ত করে অনেক তথ্য পেয়েছি। তবে তদন্তের স্বার্থে এখনই কিছু বলা সম্ভব হচ্ছে না। ভবিষ্যতে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে পারবো।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার বলেন, মামুনুল হকের সঙ্গে দেশি ও বিদেশি জঙ্গিদের সম্পর্ক ছিল বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে আমাদের তদন্ত চলমান। মামুনুল হক হেফাজতের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যাওয়ার উচ্চাভিলাসে ছিলেন- সেটা স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়েছে। এরপরও আমরা বিস্তারিত তদন্ত করে জানাব।
তিনি বলেন, চাষাঢ়া থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন সিসি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। জঙ্গিবাদসহ যেকোনো ধরনের নাশকতা দমনে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ তৎপর রয়েছে।
মামুনুল হকের বিরুদ্ধে চলমান মামলাগুলো সম্পর্কে সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানান নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম
মামুনুল হকের বিরুদ্ধে চলমান মামলাগুলো সম্পর্কে সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানান নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম
সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম বলেন, ২৮ মার্চ হেফাজতের হরতালের আগে ২৫ মার্চ নারায়ণগঞ্জে এসেছিলেন মামুনুল হক। তিনি হেফাজতে ইসলামের জেলা শাখার সাবেক মহাসচিব মুফতি বশিরউল্লাহসহ অনেকের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। মূলত নাশকতার পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই মামুনুল নারায়ণগঞ্জে এসেছিলেন। ৩১ মার্চও নারায়ণগঞ্জে এসেছিলেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন তিনি। তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গেও মিল পাওয়া গেছে।
তিনি আরো বলেন, মামুনুল হক আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি না দিলেও তার সহযোগীরা জবানবন্দীতে মামুনুল হক ও মুফতি বশিরউল্লাহসহ অনেকের নাম বলেছেন। এছাড়া মামুনুল হক নিজেও আমাদের দেখানো ভিডিও ফুটেজ থেকে বেশ কয়েকজন নাশকতাকারীকে চিহ্নিত করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোস্তাফিজুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি) জাহেদ পারভেজ চৌধুরী প্রমুখ।
উল্লেখ্য, নারায়ণগঞ্জের ছয়টি মামলায় ১৮ দিনের রিমান্ডে থাকা মামুনুল হককে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ৫ জুন দুপুরে নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাওসার আলমের আদালতে তাকে হাজির করা হয়। পুলিশ কোনো মামলায় পুনরায় রিমান্ড আবেদন না করায় আদালত মামুনুল হককে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এর আগে, ১৮ মে কাশিমপুর কারাগার থেকে মামুনুল হককে রিমান্ডে নেয়া হয়। প্রথম তিনদিন কথিত দ্বিতীয় স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্ণার দায়েরকৃত ধর্ষণ মামলায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে সোনারগাঁও, সিদ্ধিরগঞ্জ থানার আরো পাঁচটি মামলায় পুলিশ, সিআইডি ও পিবিআই মামুনুল হককে জিজ্ঞাসাবাদ করে। ছয়টি মামলায় ছয়জন তদন্ত কর্মকর্তা জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। কোনো মামলায় মামুনুল হক আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দেননি।
এর আগে, ১২ মে সোনারগাঁও থানায় দায়ের করা কথিত দ্বিতীয় স্ত্রীর ধর্ষণ ও সহিংসতাসহ পাঁচ মামলায় মামুনুল হককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনদিন করে ১৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। ১৭ মে সিদ্ধিরগঞ্জের একটি মামলায় আরো তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।
বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে দুই বছর ধরে ধর্ষণের অভিযোগে ৩০ এপ্রিল সকালে মামুনুল হকের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থানায় মামলা দায়ের করেন তার কথিত দ্বিতীয় স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্না। সবশেষ ৩ এপ্রিল সোনারগাঁওয়ের রয়েল রিসোর্টে তাকে ধর্ষণ করা হয়।
প্রসঙ্গত, ৩ এপ্রিল বিকেলে সোনারগাঁওয়ের রয়েল রিসোর্টের ৫০১ নম্বর কক্ষে মামুনুল হককে নারীসহ অবরুদ্ধ করে রাখে স্থানীয়রা। সন্ধ্যায় খবর পেয়ে হেফাজতে ইসলামের সমর্থকরা রয়েল রিসোর্ট ভাঙচুর করে নারীসহ মামুনুল হককে ছিনিয়ে নেয়। এছাড়া ওই ঘটনায় তারা গাড়ি ভাঙচুর, মহাসড়কে আগুন দিয়ে বিক্ষোভ, আওয়ামী লীগ অফিস, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাদের বাড়িঘরে হামলা-ভাঙচুর করে। ওই ঘটনায় পুলিশ দুটি ও আহত এক সাংবাদিক একটি মামলা করেন। কিছুদিন পর স্থানীয়রা আরো তিনটি মামলা করে। এই ছয়টি মামলার মধ্যে তিনটি মামলায় প্রধান আসামি মামুনুল হক।