আনিসুজ্জামান অনু,বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
ফতুল্লায় মাদক ব্যবসা ভয়াবহ আকার ধারন করেছে। মাঝে মাঝে পুলিশ সামান্য মাদকসহ চুনোপুটি মাদক বিক্রেতাদের আদালতে পাঠালেও মাদকের পাইকারী ব্যবসায়ীরা রয়ে যাচ্ছে ধরাছোয়ার বাইরে। ফলে মাদক প্রতিরোধ কোনভাবেই সম্ভব হচ্ছে না। তবে এ বিষয়ে ব্যাতিক্রম ঘটনা ঘটাচ্ছেন মাদক নির্মূলে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়া এডিসি (জেনারেল) গাউছুল আজম।
একের পর এক মাদকস্পটে হানা দেয়ার পাশাপাশি মাদকস্পটগুলো উচ্ছেদ না করা পর্যন্ত থামছেন না। এমনকি মাদকস্পটগুলো উচ্ছেদ শেষে সেখানে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেয়াসহ মাদক ব্যবসায়ে সম্পৃক্ত পরিবারের সদস্যদের কর্মমুখী করে তোলার প্রানান্তকর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন আলোকিত চানমারীর স্রষ্টা গাউছুল আজম। মাদকমুক্ত আলোকিত চানমারী গড়ার জন্যে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে একজন সরকারী কর্মকর্তা গাউছুল আজমের সোনারবাংলা গড়ার মনোভাব এবং দু‘জন লাঠিধারী চৌকিদার। প্রশ্ন উঠেছে,শুধুমাত্র দুই লাঠিধারী চৌকিদার নিয়ে যদি একজন সরকারী কর্মকর্তা চানমারী আর ইসদাইর মাদক স্পট উচ্ছেদ করতে পারে তবে অত্যাধুনিক অস্ত্রধারী সুঠামদেহী হাজারো পুলিশ-র্যাব কেন একটি মাদকস্পট উচ্ছেদ করতে পারছে না ? তা হলে কি সর্ষের ভেতরে ভূত লুকিয়ে থাকার প্রবাদটি এক্ষেত্রে বাস্তব সত্যি হয়ে দাড়িয়েছে।
ঘটনার পেছনে তাকালে দেখা যায়,চানমারী এলাকায় জেলা পুলিশ ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয় স্থাপনের পূর্ব থেকেই চানমারী বস্তি ভয়ঙ্কর মাদকস্পট হিসাবে প্রতিষ্ঠা পায়। এক সময় মাদক সম্রাট জসিমের মাদকস্পটটি এত ভয়াবহ রূপ ধারন করে যে,সন্ধ্যা লাগার আগ থেকেই এ সড়কে সাধারন মানুষের চলাচল কমে আসত। একমাত্র মাদকসেবী আর অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত অপরাধীদের দখলে থাকা এ সড়কে প্রকাশ্য চলত মদ-গাঁজা-ইয়াবা-ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন মাদকের বেচাকেনা। মাঝে মাঝে দেখা মিলতো এ সকল অপরাধীদের কাছ থেকে মাসোহারা আদায়কারী বিভিন্ন সংস্থার অসৎকর্মকর্তাসহ বিশেষ পেশার পরিচয়ধারী কতিপয় ব্যাক্তিকে। তবে ছিনতাইকারী – পতিতাদের চলাফেরায় সড়কটি ভয়ঙ্কর হিসাবে মেনে নিয়েই সাধারন মানুষ সড়কটি এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতো। এ বিষয়ে বিভিন্ন সংবাদপত্রে তথ্যবহুল সংবাদ প্রচারিত হলেও তেমন কোন প্রতিকার মিলেনি।
পরবর্তীতে জেলা প্রশাসনের কার্যালয় এখানে স্থাপনের পর লোক সমাগম বাড়লেও অপরাধীরা তাদের কার্যক্রম আগের মতই চালিয়ে আসছিল। এ সকল বস্তির সামনে দিয়েই প্রশাসনের বড় কর্তারা গাড়ীর গ্লাস উঠিয়ে অফিস-বাড়ী যাতায়াত করলেও অপরাধের জোন চানমারীকে অপরাধমুক্ত করতে জোরালো কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। মাঝে মাঝে অভিযান চালিয়ে মাদক ব্যবসায়ীদের আটক করলেও আদালত থেকে আইনের ফাঁকফোকর গলে বেরিয়ে এসে আবারো অপরাধে জড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে। এভাবেই বেড়েছে অপরাধ, বেড়েছে অসৎ কর্মকর্তাদের মাসোহারা। তবে নারায়নগঞ্জ সদর উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তা হিসাবে গাউছুল আজমের যোগদানের পর থেকে বদলে যেতে থাকে চিত্রপট। অপরাধ দমনে তৎপর হয় ভ্রাম্যমান আদালত। একপর্যায়ে চানমারী এলাকার ভয়াবহ মাদক স্পটে ধারাবাহিক অভিযানের মাধ্যমে এলাকাটি মাদকমুক্ত করে গড়ে তোলেন স্বপ্নডানা নামের স্কুল। সেখানে বস্তিবাসী শিশু-কিশোরদের শিক্ষাসহ মাদক ব্যবসায়ে সম্পৃক্ত লোকজনকে কর্মমূখী করে আলোকিত চানমারীর স্রষ্টা বনে যান। এর পরই অনেকটা ঝুঁকি নিয়েই চানমারীর পার্শ্ববর্তী ইসদাইর আর্মি মার্কেটের পেছনে দেয়ালঘেরা চানমারী টিলার আলেপের মাদকস্পটে অভিযান চালিয়ে উচ্ছেদ করেন মাদকব্যবসায়ীদের।
এ ব্যাপারে এডিসি ( জেনারেল) গাউছুল আজম জানান,সরকারী কর্মকর্তা হিসাবে অনেক সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও দেশসেবার তাগিদে নির্ধারিত কাজের বাইরে এ সকল উদ্যোগ নিতে হয়েছে। শুধুমাত্র লাঠিধারি কয়েকজন চৌকিদার নিয়ে মনের জোরেই এ সকল সম্ভব হয়েছে। এখন এগুলোর ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হলে সবাইকে একযোগে এগিয়ে আসতে হবে।