বিজয় বার্তা ২৪ ডট কম
ভ্যাটের একক হার ১৫ শতাংশ এবং অগ্নি নিরাপত্তা সরঞ্জামাদী আমদানীর উপর ৫ শতাংশ শুল্ক হার নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নীট শিল্পের উন্নয়নকে অনিশ্চয়তার মুখে নিয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দরা।
শনিবার ৩ জুন দুপুরে ঢাকায় এফবিসিসিআই এর সভাকক্ষে ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটের উপর ব্যবসায়ীক নেতৃবৃন্দের মধ্যে মত বিনিময় সভা এবং বিকেল ৫ টায় এফবিসিসিআই সম্মেলন কক্ষে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ সহ বেশ কয়েকটি শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠনের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে নীট গার্মেন্টস ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বিকেএমইএ সভাপতি সেলিম ওসমান এ মন্তব্য করেছেন।
উক্ত মত বিনিময় সভা এবং যৌথ সংবাদ সম্মেলনের সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই এর নব নির্বাচিত সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন।
মত বিনিময় সভায় বিকেএমইএ সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান জাতীয় বাজেটে নীট শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের উপর আলোকপাত করেন।
যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এফবিসিসিআই এর সভাপতি তার বক্তব্যে বিকেএমইএ এর সভাপতি কর্তৃক মত বিনিময় সভায় উত্থাপিত নিম্মোক্ত বিষয়গুলি তুলে ধরে বলেন, বর্তমান সময়ে শিল্প ক্ষেত্রে গ্যাস বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি উৎপাদন প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করার পাশাপাশি উৎপাদন মূল্যের উপর বড় ধরনের প্রভাব রাখবে। উল্লেখ্য যে, গত ১ মার্চ ২০১৭ এবং ১ জুন ২০১৭ এর মধ্যে দুই দফায় গ্যাসের মূল্য ক্যাপটিপ পাওয়ার উৎপাদকদের জন্য ১৫ শতাংশ এবং শিল্প কারখানা গুলোর জন্য ১৫ দশমিক ১৩ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে, যা নীট শিল্প উদ্যোক্তাদের উদ্বিগ্ন করেছে। তাই মূল্য বৃদ্ধির এই হারকে পুনঃবিবেচনার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, মূল্য সংযোজন কর এর একক হার ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব তৈরি নীট শিল্প উদ্যোক্তাদের গভীর ভাবে আশাহত করেছে। বাংলাদেশের নীটশিল্পের উৎপাদন প্রক্রিয়া শুরু হয় আমদানীকৃত তুলা থেকে সুতা উৎপাদনের মাধ্যমে এবং সামগ্রিক ভাবে দেশীয় মূল্য সংযোজনের হার ৮০-৮৫ শতাংশ। মূল্য সংযোজন করের এই উচ্চ হার নীট শিল্পের উৎপাদন খরচকে অনেকগুন বৃদ্ধি করবে। আমরা মনে করি নীট শিল্পের সম্প্রসারণ ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা অর্জনের ক্ষেত্রে এই প্রস্তাব বিরূপ প্রভাব ফেলবে। এমতাবস্থায় ভ্যাট এর একক হার ১০ শতাংশে স্থির করার জন্য বিকেএমইএ’র পক্ষ থেকে সবিনয় অনুরোধ করছি।
এক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে, রপ্তানিমূখী নীটশিল্পের উপর (প্রতিষ্ঠান এবং অন্য যেকোন প্রতিষ্ঠান গৃহীত সেবার উপর) শূণ্য হারে ভ্যাট আরোপিত রয়েছে। অন্যদিকে প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির ক্রয়কৃত বিভিন্ন উপকরণের উপর বিভিন্ন হারে ভ্যাট আরোপিত আছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট নির্ধারণের সময় অনেক রপ্তানিমূখী নীট শিল্প প্রতিষ্ঠান প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি হওয়ায়, তাদের গ্রহনকৃত সেবার উপর ভ্যাট ধার্য করা হচ্ছে; যা অনাকাঙ্খিত, অনভিপ্রেত ও অযৌক্তিক। একই সাথে মূসক-১৯ এর মাধ্যমে প্রতি মাসে ভ্যাট রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এটিও রপ্তানিমূখী নীট শিল্পের প্রাপ্য ভ্যাটমুক্ত সরকারী সুবিধার সিদ্ধান্তের বিপরীত। তাই শুধুমাত্র রপ্তানিমূখী নীট শিল্পের জন্য “ভ্যাট সম্পূর্ণরূপ অব্যাহতি” শীর্ষক একটি সুষ্পষ্ট সার্কুলার জারী করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি, যেখানে মূসক-১৯ দাখিল থেকেও অব্যাহতি প্রদান করা হবে।
এবারের বাজেটে উৎসে কর হার পরিবর্তনের বিষয়ে কোন নির্দেশনা নেই। বর্তমান উৎসে কর হার শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ জুন ২০১৭ পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। পুনরায় এস.আর.ও জারী করে এই বিষয়ে নির্দেশনা না আসলে অর্থ আইন ২০১৬ তে ঙৎফরহধহপব ঘড়. ঢঢঢঠও ড়ভ ১৯৮৪ এর ঝবপঃরড়হ ৫৩ইই এর সংশোধনীতে জারীকৃত উৎসে কর হার ১ শতাংশ বলবৎ হয়ে যাবে, যা নীট শিল্পখাতের উন্নয়নকে বাঁধাগ্রস্থ করবে বলে আমরা মনে করি। উৎসে কর হার আগামী ২ বছরের জন্য ০ দশমিক ৫ শতাংশ ধার্য করে পুনরায় এই অর্থবছরের জন্য এস.আর.ও প্রকাশের এবং চূড়ান্ত করদায় হিসেবে গ্রহণ করার দাবী জানান। অপরদিকে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে কর্পোরেট করের হ্রাসকৃত হার ১৫ শতাংশ ধার্য করা হয়েছে। তবে এই হ্রাসকৃত করের হার এখনো পর্যন্ত আমাদের প্রস্তাবিত হারের চেয়ে অধিক এবং এই কারণে তা দেশের নীট খাতের স¤পূর্ণ ভ্যালূ চেইনের উপর ঋণাত্মক প্রভাব ফেলবে বলে আমরা পূর্বের অভিজ্ঞতা থেকে ধারণা করছি। তাই নীট শিল্প খাতের জন্য কর্পোরেট কর হার ১০ শতাংশ এর অধিক না করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে আবেদন রাখছি। সেই সাথে গ্রীন ইন্ডাষ্ট্রি তৈরী করতে একজন উদ্যোক্তাকে প্রচুর পরিমাণে বিনিয়োগ করতে হয়। নীট শিল্পের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে গ্রীন ইন্ডাষ্ট্রির গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে গ্রীন ইন্ডাষ্ট্রি করার পরিকল্পনায় নিয়োজিত কারখানা বা যেসব প্রতিষ্ঠান সবুজ শিল্পে রূপান্তরিত হয়েছে তাদের উপর হ্রাসকৃত করপোরেট কর হার প্রস্তাবিত ১৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে আগামী ৫ বছরের জন্য সিঙ্গেল ডিজিটে করার জন্য অনুরোধ করছি। ৬। অন্যদিকে, অগ্নি নিরাপত্তা সংক্রান্ত যন্ত্রাদি এবং প্রি-ফেব্রিকেটেড্ বিল্ডিং এর আনুষাঙ্গিক সকল উপকরণ/ ম্যাটেরিয়ালসের উপর ৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক বহাল রাখাও রপ্তানিমুখী নীট শিল্পের জন্য সুখকর হবে না। তাই অগ্নি নিরাপত্তা সংক্রান্ত যন্ত্রাদি এবং প্রি-ফেব্রিকেটেড্ বিল্ডিং ম্যাটেরিয়ালসের উপর ৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক পুরোপুরি উঠিয়ে শুল্কমুক্ত, এ.আই.টি মুক্ত ও ভ্যাটমুক্ত আমদানী সুবিধা দেয়ার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী মহোদয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। উক্ত সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন বিজিএমইএ’র সভাপতি মোঃ সিদ্দিকুর রহমান, সিসিসিআই এর সভাপতি মাহবুবুল আলম, ডিসিসিআই এর সভাপতি আবুল কাসেম খান, বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাষ্ট্রি’র সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু, বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানীকারক সমিতি’র সভাপতি মোঃ জসিম উদ্দন এবং সিএমসিসিআই এর সভাপতি খলিলুর রহমান সহ অন্যান্য ব্যবয়ায়ীক নেতৃবৃন্দ।